জাতীয় সংগীত নিয়ে ভাবার সময় কি আসেনি?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৪ ২০১৯, ১৮:১০

জুবের আহমদ

আমরা এখনো জানতে পারলাম না, আমাদের আসল পরিচয় কী? আমরা কি বাংলাদেশী না বাঙালী? যদি বাঙালী হয়ে থাকি তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয় সংগীত গ্রহণ করতে আমার কোনো আপত্তি নেই ৷ কেননা তিনি বাঙালী ছিলেন ৷ আর যদি আমি বাংলাদেশী হয়ে থাকি তাহলে আমার আপত্তি আছে ৷ কেননা, তিনি আমার দেশের নাগরিক নন ৷ আমি তার লেখা কবিতা জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহণ করতে পারি না ৷

যিনি আমার দেশের নাগরিকই নন তার লেখা কবিতা আমি কেনো জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহন করবো? পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কি কোনো দেশ আছে, যিনি জাতীয় সংগীত লিখেছেন অথচ তিনি সেই দেশের নাগরিক নন? না নেই , এমন কোন দেশ আপনি কখনও খুঁজে পাবেন না ৷

আমি গায়ক নোবেলের সাথে সম্পূর্ণ একমত, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” সংগীতটি বাংলাদেশকে ভালোভাবে রিপ্রেজেন্ট করে না, যা করে প্রিন্স মাহমুদের লেখা, জেমসের গাওয়া “বাংলাদেশ গানটি” ৷

তাছাড়া আমার সোনার বাংলা সংগীতটিতে এমন কিছু কথা আছে, যা ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পুর্ণ সাংঘর্ষিক ৷ অনেক শিরকি বাক্য সেখানে উল্লেখ আছে যা কোন মুসলমান বলতে এবং বিশ্বাস করতে পারে না ৷ যেহেতু বাংলাদেশ ৯২% মুসলমানের দেশ এবং যেহেতু আমরা সবাই দেশটাকে ভালোবাসি এবং সবাই জাতীয় সংগীত গাইতে চাই, তাই সময় এসেছে এটা পরিবর্তনের ৷ এমন একটি সংগীত বেছে নেওয়া হোক যেটি সব ধর্মের লোক গাইতে পারে এবং সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে ৷ হতে পারে সেটা প্রিন্স মাহমুদের লেখা কিংবা জাগ্রত কবি মুহিব খানের লেখা সংগীত ৷ যা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে ৷

এবার আসুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয় সংগীত কেনো মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক তার ব্যাখ্যা করা যাক ৷ রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি মোট ২৫ লাইনের। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে প্রথম ১০ লাইন। তার মানে বাকি ১৫ লাইনের মধ্যে এমন কোন ঝামেলা আছে, যার কারণে তা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই ঝামেলাগুলো হলো-

(১) “তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে”

মন্তব্য: হিন্দু ধর্মে সন্ধ্যাকালে ঘরে দীপ জ্বালানো ধর্মীয় পূজার অংশ।

 

(২) “ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে”

মন্তব্য: হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের বিশ্বাসে একটা পার্থক্য আছে। হিন্দু ধর্মে তারা স্বদেশকে দেবী দূর্গা, কালী বা অন্নপূর্ণা হিসেবে কল্পনা করে। রবীন্দ্রনাথ তার “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” কবিতায় বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। অপরদিকে মুসলমানরা মাতৃভূমি বলতে মায়ের ভূমি বোঝায়, কোন ব্যক্তি বা দেবতা হিসেবে কল্পনা করে না। অর্থাৎ স্বদেশ নিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের বিশ্বাস এক নয়। সেই হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই রবীন্দ্রনাথ মায়ের চরনে মাথা পেতে দেয়ার কথা লিখেছে, যা মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যায় না।

 

(৩) “ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে”

মন্তব্য: এটাও হিন্দুদের ধর্মীয় পূজার অংশ। অর্থাৎ দেবীর পায়ের নিচে সম্পদ ভোগে দেয়া হয়, এখানে সেটাই বলা আছে।

 

(৪) “মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি”

মন্তব্য: দূর্গা বা কালীর গলায় বিভিন্ন ‘মালা’ দেয়া হয়, এগুলো ‘ভূষণ’ বলে। হিন্দুত্ববাদীরা এই ভূষণ বা মালাকে গলার ফাঁসি দেয়ার জন্য ব্যবহার করে পূণ্য পেতে চায়।

শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও বাংলাদেশীদের ভালোবাসেননি ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ও তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন ৷ তাও শুধু একবার-দুবার নয়, পঁচিশ বার!

ইতিহাস আরও বলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সংগীতটি লিখেছিলেন বঙ্গভঙ্গের সময় জমিদারি হারানোর ভয়ে, বাঙালীদেরকে ভালোবেসে নয়৷