জনতার হৃদয়ে একজন আল্লামা আহমদ শফী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১৭ ২০১৮, ০৬:২৯

ক’দিন যাবত আকাশটা কেমন যেন অভিমানি হয়ে আছে। থেমে থেমে কান্না করছে। কখনো গুড়িগুড়ি আবার কখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি।

সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। বাদ যোহর। তখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। পরিবেশটা ঠাণ্ডা। আবহাওয়া বৈরী। তবুও মানুষ দলে দলে ছুটছে হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কেউ ছাতা মাথায় আবার কেউ বৃষ্টিতে ভিজে।

বিকেল ৩টা। পুরোমাঠ লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের জায়গা নেই। নিরব বসে আছে। আবার অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়োজকদের ধারণার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষের সমাগম। মঞ্চ থেকে বিভিন্ন আলোচনা ভেসে আসছে। সবাই শুনছে তন্ময় হয়ে।
সময় তখন ৩টা ৩০ মিনিট। মাঠে একটা প্রাইভেট কার প্রবেশ করলো। সাদামাটা। তেমন একটা সুন্দর নয়। নয় বুলেটপ্রুফও। গাড়ি থেকে কাঁদে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। বয়সের ভরে নুজ্ব্য হয়ে গেছেন। আস্তে আস্তে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন। সবাই আহলান সাহলান বলে বরণ করে নিচ্ছে। তিনি স্টেজে উঠলেন। বসলেন। সবাই তার নূরানী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।অপলক নয়নে। তিনি বসে আছেন নিচের দিকে চেহারা করে। যার জন্য এত বড় আয়োজন। যিনি এই আয়োজনের মূল আকর্ষণ তার চেহারায় নেই কোন পেরেশানী, আবার মাত্রাতিরিক্ত আনন্দের ছাপ।

বিকাল ৫টা। তাকে সংবর্ধিতত করা হলো। একটি নয় ৩০ টির অধিক ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধিত করা হলো। ধর্মীয়, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হলো। তিনি নিরব। তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
তিনি কাজ করেছেন আল্লাহর জন্য। লক্ষ লক্ষ ছাত্রের ভবিষ্যতের জন্য। কত মানুষ কত ভাবে কটূক্তি করছে। অপপ্রচার চালাচ্ছে কিন্তু তিনি একদম চুপ।কখনো টু শব্দ করেননি। কারণ, তিনি কাজ করেন আল্লাহর জন্য দুনিয়ার সব কিছু তার চোখে তুচ্ছ।

আজ শত শত ছাত্র-জনতা একজন বয়োবৃদ্ধ আলেমকে এক নজর দেখার জন্য বৃষ্টিতে কাকভিজা হয়ে দাঁড়িয়ে, বসে অপেক্ষা করছে। কারণ, তারা তাঁকে ভালোবাসে। তাদের এই মুহাব্বাত দুনিয়ার কিছু পাওয়ার জন্য নয়, এই মুহব্বাত একমাত্র আল্লাহর জন্য।এই মুহাব্বত ওরাছাতুল আম্বিয়ার কারণে।

২০১৩ ইংরেজি। প্রধান শহরগুলোতে নাস্তিকদের আস্ফোলন। মুসলিম উম্মাহ আহত। সবাই ব্যথিত। আল্লাহ ও তার রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে। সবাই পেরেশান। কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
ঠিক তখনি এই বয়োবৃদ্ধ মানুষটি যুবক হয়ে গেলেন। শাহাদাতের তামান্নায় রাস্তায় নেমে এলেন। বাংলার এক কোণ থেকে গর্জে উঠলেন। অথচ ডাকে সাড়া দিলো পুরো দেশ।
৬ এপ্রিল ঐতিহাসিক লংমার্চ করলেন। যা ছিল ইতিহাসে বিরল। লাখো মানুষ একজন বৃদ্ধের ডাকে এভাবে সাড়া দিবে, কেউ কল্পনাও করেনি। সেদিন হাটহাজারী ফিরে এলেন আবার পুণরায় আসবেন বলে।
৫ই মে ঢাকা অবরোধ করলেন। নিরীহ মুসুল্লিরা সারাদিনের ক্লান্ত বদনে শাপলার চত্তরে জড়ো হলেন।
রাত ২ টা। কেউ ইবাদতে, কেউ ঘুমে। রাতের অন্ধকারে বাতি বন্ধ করে নির্মমভাবে নবি প্রেমিকদের হামলা করা হলো। শহীদ করা হলো।
সময় গড়িয়ে চলছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি আহতদের। শহীদদের।

সর্বশেষ তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আদায় হলো বহুল প্রত্যাশিত কওমী সনদের বিল। তাও স্বকীয়তা বজায় রেখে। অধিকার ফিরে পেলো দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী।
কিন্তু এই বর্ষীয়ান মানুষটি কে? হ্যাঁ, তিনি হচ্ছেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার হুসাইন আহমাদ মাদানীর সুযোগ্য খলিফা, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাইখুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমাদ শফী বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি।

আল্লামা আহমদ শফীকে সংবর্ধিত করার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, উত্তর চট্টলার দ্বীনি ও সেবা মূলক সংগঠন “আল আমিন সংস্থা।”

আল্লাহ এই বয়োবৃদ্ধ মহান মনীষীকে আমাদের মাঝে দীর্ঘজীবি করে দিন, আমিন!

লেখক: শিক্ষর্থী ও তরুণ লেখক।