ছাত্রী ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় কলেজ অধ্যক্ষকে ছুরিকাঘাত, আটক ১ জন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১৮ ২০১৮, ১০:২২

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় বহিরাগত বখাটেদের ছুরিকাঘাত ও হামলায় নবীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদসহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটে।

আহতদের মধ্যে ২ জন’কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।

অপর আহত কলেজ ছাত্রী চৈতী (১৯) কে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রায় ২ ঘন্টা রাস্তা অবরোধ রাখে।

পরে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তোলে নেয়া হয়।
ঘটনার পরপরই হামলাকারী দিপন আহমেদ মুন্না মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেলে ও তার সহযোগী হুমায়ুন কবির নামের এক বখাটেকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে।

হামলা থেকে অধ্যক্ষকে রক্ষা করতে গিয়ে কলেজের দপ্তরি ফয়জুর রহমান আহত হয়েছে।

তাকেও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার মদনপুর গ্রামের নুরুজ্জামান ফারুকীর পুত্র দিপন আহমেদ মুন্না প্রায়ই কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো।

গত সোমবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে মুন্না অনার্স ২য় বর্ষের জনৈকা ছাত্রীর সাথে জোরপুর্বক মোবাইলে সেলফি তোলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেনের নিকট অভিযোগ দিলে অধ্যক্ষ ঘটনার বিষয়ে মুন্নার প্রতি ক্ষুব্ধ হন।

পরে মুন্নার পরিবার ওই কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করে বিকালে অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে যান।

এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অর্নাস পরীক্ষা হলে পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বখাটে মুন্না তার দলবল নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের গলায় ও হাতে ছুরিকাঘাত করে।
এ সময় অধ্যক্ষকে বাচাঁতে কলেজ দপ্তরী কলেজ পাড়া এলাকার মজিদ উল্লার ছেলে ফয়জুর রহমান এগিয়ে আসলে সেও ছুরিকাঘাতের শিকার হয়। প্রাণ বাচাঁতে দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে গিয়ে সিড়ি থেকে পড়ে আহত হয় অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী চৈতী।
এ সময় পরীক্ষা হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসলে মুন্না দ্রুত মটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। তবে তার সহযোগী একই গ্রামের জলফু মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবির’কে আটক করে পুলিশের নিকট সোর্পদ করা হয়েছে।
ঘটনার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা কলেজের সামনের রাস্তায় ব্যারিকেট দিলে প্রায় ২ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ফলে রাস্তার উভয় পাশে যানবাহন আটকা পরে যানজটের সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সাথে পুলিশ প্রশাসনের আলোচনার প্রেক্ষিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তোলে নেয়া হয়।

পরে বখাটে মুন্নাকে গ্রেফতারের দাবীতে এবং অধ্যক্ষের উপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

মিছিলটি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, প্রভাষক ফজলে এলাহী ফরহাদ প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, নবীগঞ্জের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।

বখাটে মুন্না অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে প্রাণে হত্যার উদ্দ্যেশেই ছুরিকাঘাত করেছিল।

তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে গেলেও তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে কলেজ দপ্তরী ফয়জুর রহমানের হাতের রগ কেটে গেছে।

তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারী মুন্নাকে গ্রেফতার না করলে বুধবার ১২ টার পর থেকে কঠোর কর্মসুচী নিয়ে রাস্তায় নামবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

এ সময় নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ এস.এম আতাউর রহমান, এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুন্নাকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে সকলের সহযোগিতার দাবী জানান।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ– বাহুবলের সংসদ সদস্য এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু, পৌর মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু, পৌর সভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ আহত অধ্যক্ষকে দেখতে হাসপাতালে যান।