চামড়া সিন্ডিকেট : আমাদের করণীয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১৩ ২০১৯, ১২:২৫

মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী

পরপর কয়েক বছর থেকে চামড়ার মূল্য নিম্নগামী। পৃথিবীর সকল পণ্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি হলেও রহস্যজনকভাবে চামড়ার দরপতন চলছেই। গোশতের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। চামড়াজাত পণ্যের মূল্য অাকাশচুম্বী। শুধু চামড়ার মূল্যে ধ্বস। তাও বিশেষ করে কুরবানির সময়ে। কাচা চামড়া পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে কুরবানি আসলে আমরা একটু নড়াচড়া করি। দুয়েকদিন ফেবুতে প্রতিবাদের ঝড় তুলি। অবশেষে আফসোস আর আক্ষেপ নিয়ে নিয়তির কাছে আত্মসমর্পন করি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? ইসলামি বিদ্বেষী চক্রের হাতে শুধু মার খেয়ে যাবো। বিকল্প কিছু করার কি এখনো সময় সুযোগ হয়নি। গেল তিন’বছর থেকে একটি বিষয়ে নক করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রাতিষ্ঠানিক ও বোর্ডের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কুরবানি চলে গেলে সবাই যেন বেমালুম ভূলে যান।

চামড়া সিন্ডিকেট মোকাবেলা করতে হবে কৌশল ও হেকমতের সাথে। বিশ্ব দরবারে সমাদৃত চামড়া শিল্প। পৃথিবীর সবদেশে রয়েছে এর বিশাল চাহিদা। একাধিক প্রস্তুতি নিয়ে চামড়া শিল্পকে করতে পারি সমৃদ্ধ। এর জন্য প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে একটু রিস্ক নিলেই কাজটি করা যায়। এতে আপনার মাদরাসা রক্ষা পাবে বিপুল ক্ষতির হাত থেকে। কওমী মাদরাসার বোর্ডসমুহ চাইলে একটি ট্যানারির মালিক হওয়া অসম্ভব নয়। বিষয়টি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয়ভাবে চিন্তা করা যেতে পারর। হাইয়াতুল উলিয়া জাতীয়ভাবে অন্যান্য বোর্ড স্থানীয়ভাবে ট্যানারি খুলতে পারে।

স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা 

১. প্রতিটি বোর্ডের পক্ষ থেকে স্বল্পমেয়াদী চামড়ার একটি অাড়ৎ খুলতে পারেন। ৮/১০ কেদার জমি ক্রয় করে / ভাড়া নিয়ে কাচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। সেটি সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য হলে চলবে। একটি বড় জায়গা আপাতত ভাড়া নিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা হোক। দাবাগাত দিয়ে চামড়া অনেকদিন রাখা যায়। প্রত্যেক মাদরাসা নিজ দায়িত্বে চামড়া স্থানীয় বোর্ডের আড়তে প্রেরণ করে একটি রশীদ নিয়ে আসবে। একমাস পর সমুদয় খরচ বাদে বাকী টাকা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট পরিশোধ করা হবে। এতে ন্যুনতম তিনগুন মুনাফা পাওয়া যাবে।

২. প্রতিটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন। আমাদের এলাকায় দু একটি মাদরাসা এ পদ্ধতি অবলম্বন করে উপকৃত হয়েছে। ঈদের দিন যে চামড়া বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ৩০০/ টাকা সেটি লবনজাত করলে এক সপ্তাহ পর বিক্রি করা যাবে ন্যুনতম ৮০০/১০০০/ টাকা। খরচ হবে চামড়া প্রতি সর্বোচ্চ ১০০/ টাকা। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ন্যুনতম দিগুণ লাভবান হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়ার পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী ট্যানারির ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয়ভাবে প্রতিটি বোর্ড চামড়া দাবাগাত করে এক মাসের মধ্যে ট্যানারিতে পাঠিয়ে দিবেন। ট্যানারি কর্তৃপক্ষ দেশী বিদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে চামড়া রপ্তানি করবে। এতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও বোর্ড বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বিষয়টি আহামরি বা অসম্ভব কিছু নয়। একবার উদ্যোগ নিয়ে দেখেন বাস্তবায়ন করা কোন ব্যাপার নয়। এতে চামড়া সিন্ডিকেট নিমিষে উদাও হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা বোর্ডের দ্বারস্থ হয়ে ন্যায্য মুল্য চামড়া খরিদ করতে বাধ্য হবে।

স্থায়ীভাবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও অস্থায়ীভাবে একবার ট্রাই করে দেখেন। কমপক্ষে স্ব স্ব উদ্যোগে এবার চামড়া সংরক্ষণ করেন। লবনজাত করার ঝুকিঁ একবার নিয়ে দেখেন। বেশী নয় ৩দিন চামড়া সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। সারাদেশে হৈ চৈ পড়ে যাবে। হুজুরদের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

চামড়া দাবাগাত করা কোন কটিন বিষয় নয়। এর জন্য লাগবে লবন আর কিছু শ্রমিক। আজ থেকে বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করুন। চামড়া শিল্প ও কওমী মাদরাসার স্বার্থ রক্ষায় শুধু আন্দোলন, বিক্ষোভ যতেষ্ট নয় বরং বিকল্প উপায় বের করা ছাড়া করালগ্রাসী সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবেনা।