চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলা করে জমি দখলের চেষ্টা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ৩০ ২০২০, ১২:১৬

বদিউজ্জামান রাজাবাবু চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জমি দখল করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। থানা, আদালতসহ বিভিন্ন দ্বারে ঘুরেও সমাধান না পেয়ে নিরুপায় প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোসংকরবাটি দক্ষিণ চরাগ্রাম এলাকার মৃত নসিমু্দ্দিনের ছেলে মো. ইসরাফিল (৬৫)।

১৯৬২ ও ৭২ সালের রেকর্ড অনুসারে জমির প্রকৃত মালিক আহমদ আলীর ছেলে মো. আবুল হাসনাতের থেকে ১৯৯৫ সালে শংকরবাটি মৌজার ৪০৯ নং খতিয়ানের ২৪৬ নং দাগের ১১ শতক ও ২৪৭ নং দাগের ১৫ শতক মিলে মোট ২৬ শতক জমি ক্রয় করেন ইসরাফিল। এরপর হতে নিয়মিত রাজস্ব দিয়ে আসছেন জমির প্রকৃত মালিক ইসরাফিল। জমির বিভিন্ন দলিল ও সদর থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জমি ভোগ-দখলে রাখলেও হঠাৎ করেই এবছরের মার্চ মাসের ৪ তারিখ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস (৬৫) ও তার লোকজন। সেদিন জমি দেখতে আসলে হামলার শিকার হয়েছেন, প্রকৃত মালিক মো. ইসরাফিল এবং তার দুই ছেলে আব্দুস সাত্তার ও মো. আলফাজ।

এসময় হাসুয়া, কাতা, বল্লাম, লোহার রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় আব্দুল কুদ্দুস ও তার লোকজন। হামলায় আব্দুস সাত্তারের মাথা ও শরীরে আঘাত করলে তার বাম কান ঝুলে যায় এবং বাম হাতের আঙুল উপড়ে যায়। এমনকি তার মাথায় ও পায়ে মারাত্মক আঘাত করে সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় এগিয়ে আসলে ইসরাফিল ও তার অপর ছেলে আলফাজকে বেধড়ক মারধর করে জখম ও রক্তাক্ত করে আব্দুল কুদ্দুসের লোকজন। হামলায় আলফাজের মাজায় কোপ দিলে এতে চরমভাবে পেটে পানি জমে তার। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আগত ৩ জনকেই চিকিৎসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে ইসরাফিল ও আলফাজ এক সপ্তাহ চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং আব্দুস সাত্তারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। রামেকে আইসিইউতে ৬ দিন গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা নেন আব্দুস সাত্তার।

হামলা ও জমি দখলের চেষ্টার প্রতিকার চেয়ে গত ৭ মার্চ সদর মডেল থানায় এজাহার করেন জমির প্রকৃত মালিক মো. ইসরাফিল। এদিন ১৪৭, ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৫, ১১৪ ও ৩২৬ ধারায় মামলা গ্রহণ করে সদর মডেল থানা। হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল কুদ্দুস ও তার দুই ছেলে মো. করিম (৩০), মো. মাহফুজ (২২), স্ত্রী পারু বিবি (৬০), একই এলাকার মো. মতির ছেলে মো. জসিম (৪০), মো. নুহুর ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫), নামোশংকরবাটি বড়িপাড়া এলাকার মো. এসলামের ছেলে মো. আব্দুল বারী (৫৫), মৃত মোসলেমের ছেলে মো. রউফ (৬০), মো. সাইদুল (৫৫), মোহনপুর এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর (২৫), মো. আলফাজের ছেলে বারীসহ (২৭) অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে দায়ী করে মামলা করা হয়।

এবিষয়ে জমির প্রকৃত মালিক ইসরাফিল জানান, ক্রয়সূত্রে ২৫ বছর ধরে জমিটি ভোগ করছি। হঠাৎ করেই আব্দুল কুদ্দুস ও তার ছেলেরা জমি দখলের চেষ্টা করছে। আদালতেও তারা নিজেদের পক্ষে কোন দলিল বা প্রমাণ দেখাতে পারছে না। আদালতে ব্যর্থ হয়ে এখনও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে এবং কুদ্দুসের লোকজন বলছে, বাঁচতে চাইলে জমি ছেড়ে দে, নইলে প্রাণে বাঁচতে পারবি না।

গুরুতর হামলার শিকার মো. ইসরাফিলের ছেলে আব্দুস সাত্তার জানান, দেশে আইন আদালত সবই আছে। তারপরেও এই সময়ে কুদ্দুসের লোকজন সন্ত্রাসী কায়দায় জমি দখলের পায়তারা করছে। কি করবো, কাকে বলবো, কার কাছে গেলে জীবনের নিরাপত্তা পাবো সেটা বুঝতে পারছি না। তারা খুব প্রভাবশালী, তাই আমাদের পক্ষে সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎপল কুমার সরকার বলেন, তদন্ত করে মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আদালত এখন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।