চরমোনাই মাহফিল; একটি আলোকবর্তিকা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১৬ ২০১৯, ১৯:১৭

মাহবুব হুসাইন: ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতিবছর বরিশালে চরমোনাই মাদরাসা প্রাঙ্গণে দুবার বাংলা অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাসে বাৎসরিক দু’টি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র হজ্জ ও বিশ্ব ইজতেমার পরে বর্তমানে চরমোনাইয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হয়। প্রতিবছর মাহফিলে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়।( উইকিপিডিয়া)

মরহুম আল্লাহর কুতুব ফজলুল করিম রহঃ এর সময় শুনেছি দুইটি মাঠে বয়ান হতো সময়ের ব্যবধানে ও এই তরিকার কবুলিয়াতে এখন আল্লাহর রহমতে গতবছর হতে পাঁচটি মাঠেও মুসল্লিদের জায়গা সংকোলন হচ্ছেনা। বাংলাদেশে বহু হক্কানী পীরের দরবার রয়েছে। আমার জানামতে চরমোনাইতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পরিমানের লোক সমাগম ঘটে, এই তরিকা যে মাকবুল তরিকা তা নিসন্দেহে বলা যায়।

আমার ব্যক্তিগত ভাবে এমন অনেক লোকের সাথে পরিচয় আছে যারা দূর থেকে একসময় চরমোনাইর অনেক বিরোধিতা করতেন কিন্তু ময়দানে যাওয়ার পর তাদের চিন্তাচেতনায় এমন হয়েছে যে তারা নিজেরাই এখন এই তরিকার দায়ী বনে গেছে। আমি বলছিনা এটি পীর সাহেবের কোনো কারামত বরং এটি অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অশেষ রহমত এবং এই তরিকার ফয়েজ।

বহু পথভোলা মানুষ এই মাহফিলে গিয়ে হেদায়েতের আলো পেয়েছে, বহু দ্বীনহীন মানুষ এই তরিকায় জুরে মাওলার রং এ নিজেকে রাঙ্গিয়েছেন, এই মাহফিলে না গেলে আসলে বুঝানো সম্ভব নয় এখানে মাওলার এশকের কি অমিয় সুধাই না পান করানো হয় আগত মুসল্লিদের। মাহফিলের সর্বমোট সাতটি বয়ান হয়, আমার বিশ্বাস ইয়াকিনের দিল দিয়ে কেউ শুনলে জীবনের অনেক চিন্তাই তার পালটে যাবে।

আগের থেকে অনেক বেশি উলামায়ে কেরাম এই মাহফিলে যাচ্ছেন, কেউ শুনছেন কেউবা বয়ান করছেন,। এখন শুধু দেশ নয় বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেমন ভারত,বাহরাইন,সৌদি আরব,ওমান থেকেও বহু উলামা হযরত বয়ান করেন এই মাহফিলে, এই মাহফিলে বয়ানগুলোতে ইসলামের প্রায় সব দিক নিয়েই আলোচনা হয়, বাংলাদেশে এরকম মাহফিল দ্বিতীয়টি আছে কিনা জানা নেই যেখানে আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি ইসলামী রাজনীতি তথা নবী ওয়ালা কাজের সব কয়টি দিকের বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এই তরিকা এবং এই মাহফিলের অন্যতম ভাললাগার জায়গাটি হচ্ছে জিকরুল্লাহ তথা আল্লাহ তায়ালার জিকির। লক্ষাধিক লোক যখন একসাথে আল্লাহ আল্লাহ শব্দের জিকির তুলে তখন সমগ্র আকাশ বাতাস গাছ পালা পক্ষিকুল মনে হয় যেন সেই সুরে সুর মিলাচ্ছে।ওল্লাহে আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম করে বলতে পারি সেই হালত (অবস্থা) যে অইখানে থাকে শুধু সেই উপলব্ধি করতে পারে। একসময় আমিও ভাবতাম এই চরমোনাই ওয়ালারা এরকম লাফায় কেন? সত্যি বলতে অবস্থাই এমন হয় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে যায়। আশেক মাশুকের এই প্রেম উপলব্ধির বিষয় যা অন্তরের চোখ ওয়ালারাই বুঝে।

আসলে এই মাহফিলের মাহাত্ম্য বুঝতে হলে চাই খালেস দিল ও উন্মুক্ত চিন্তাধারা, সংকীর্ন মনাদের জন্য এই মাহফিল থেকে কিছু আশা করা বড় কঠিন হবে।

সর্বদিক বিবেচনায় আমার অতি সুক্ষ জ্ঞানের বিচারে এই মাহফিলকে সব মিলিয়ে বর্তমান জামানার একটি আলোকবর্তিকা বলা চলে। যেই আলোকবর্তিকা পথ দেখায় জান্নাতের পথ দেখায় চুরান্ত মুক্তির পথ।

পরিশেষে একটি অনুরোধ করবো পাঠকদের সমিপে যারা এখনো চরমোনাইকে ঘিরে অস্পষ্টতায় আছেন। তাদের বলব ঘুরে আসুন বরিশালের এই এশকের বাগান থেকে( মাহফিল) থেকে তারপর সমালোচনায় পঞ্চমুখ হোন আপত্তি নেই, তবে না বুঝে না জেনে স্রোতে গা না ভাসানো উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুক। আমীন

-মো মাহবুব হুসাইন
কামিল(মাস্টার্স),সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা।