চট্টগ্রাম ওয়াজাহাতি জোড়ে পঠিত ঘোষণা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ১৮ ২০১৮, ১৩:২৬

হাবীব আনওয়ার চট্রগ্রাম: গতকাল ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ওয়াজাহাতি জোড়।জোড়ো দেশের শীর্ষ স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম কুরআন হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। জোড়ের শেষে মুনাজাতের আগে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।ঘোষণাটি পাঠ করেন, হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মাও.নুরুল ইসলাম জাদীদ দা.বা.। একুশে জার্নাল পাঠকদের জন্য এখানে দেওয়া হলো:

১. জমহুর উলামায়ে কেরাম তিনটি মৌলিক কারণে, (ক) কুরআন-হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা। (খ) তাবলীগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলীগ ব্যতিত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে তথা; দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা (গ) পূর্ববর্তী তিন হযরতজ্বীর উসূল ও কর্মপন্থা থেকে সরে সেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করে শরীয়ত বিরোধী স্ব-ঘোষিত আমীর দাবী করায় বর্তমানে মাওলানা সা’আদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণ বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।

২. দারুলউলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, মাওলানা সা’আদ সাহেব বর্তমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো বাতিল ফেরকার রূপধারণ করতেছে। এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নিযামুদ্দীন পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নিযামুদ্দীন থেকে আগত কোনো জামাতকে কোনো জেলায়, থানায়, ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

৩. হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. হযরত মাওলানা ইউসুফ রাহ. ও হযরত মাওলানা এনানুল হাসান রাহ. এর বাতলানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সারা বিশ্বে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে তাবলীগের কাজ পূর্ববর্তী তিন হযরতজ্বীর পদ্ধতিতে ও উলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল ও টঙ্গী ময়দান ও চট্টগ্রাম জেলা মারকাযসহ সকল থানা হালকা এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৪. কাকরাইল মারকায ও চট্টগ্রাম জেলা মারকাযের উলামায়ে শূরা অনুমোদিত পর্চা-চিঠিপত্র ব্যতীত কোনো জামাত কোনো মসজিদে স্থান দেওয়া যাবে না। কারণ কিছু ভাই মাওলানা সা’আদ সাহেবের ভ্রান্ত আকীদা অনুসরণ করে মেহনত করে চলেছেন। মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। আক্বীদা নষ্ট করতেছেন। সাধারণ মুসলমানের মধ্যে উলামা ও মাদ্রাসা বিদ্বেষী বিষ ছড়াচ্ছেন। ( যেমন, মাওলানা সা’আদের এতায়াত করা ওয়াজিব। যারা মাওলানা সা’আদের এতায়াত করে না, তারা জাহান্নামি। উলামারা গুমরাহ হয়ে গিয়েছে, ইহুদী-খৃষ্টানের দালাল, সরকারের দালাল ইত্যাদি।)

৫. চট্টগ্রাম জেলা মারকায রেজিস্টার্ড দলিলমুলে ওয়াকফকৃত। ওয়াকফ স্টেটের বর্তমান মোতাওয়াল্লী প্রশাসনের বরাবরে পত্রে উল্লেখ করেন যে, দলিল মোতাবেক দিল্লির মরহুম ইলিয়াস রাহ. কর্তৃক প্রবর্তিত ও প্রদর্শিত দাওয়াত ও তাবলীগের উসুল-নীতির ভিত্তিতে পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণে বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের মারকায কাকরাইল মসজিদের শূরায়ে নেযামের তত্ত্বাবধানে হক্কানী জমহুর উলামায়ে কেরামদের নেতৃত্বে দাওয়াত ও তাবলীগের চট্টগ্রাম জেলা মারকায লাভলেইন মাদানি মসজিদ পরিচালিত হবে। অন্য কারো দ্বারা নহে। সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিষয় বিধায় জমহুর উলামায়ে কেরামদের নেতৃত্বে পরিচালিত হলে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, অতিরঞ্জিত – কুসংস্কার ও ফেতনা ফাসাদ থেকে লাভলেইন মারকায নিরাপদ থাকবে।
৬. ২০১৮ ইংরেজি সনে বিশ্ব ইজতেমার পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় তথা ১. কাকরাইলের আহলে শূরা ২. শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ৩. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের গ্রহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। (ক) মাওলানা সা’আদ সাহেব দারুলউলুম দেওবন্দের সাথে মতপার্থক্য দূর করত: দারুলউলুম দেওবন্দের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। (খ) নিযামুদ্দীনের যে সকল উলামায়ে কেরাম, উস্তাদ ও মুরব্বীয়ানে কেরাম মাওলানা সা’আদ সাহেবের সমর্থন নাজায়েজ বিধায় বাধ্য হয়ে মারকায ত্যাগ করে চলে গেছেন, তাদের সাথে সমস্যা নিরসন করে একসাথে বাংলাদেশে আসবেন, একা আসতে পারবেন না।

৭. বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উল্লেখিত বিষয় দুটোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মাওলানা সা’আদ সাহেবের কোনো পরামর্শ ও নির্দেশনা কোনো তাবলীগের সাথীভাই চট্টগ্রামে চালানোর চেষ্টা করবেন না। বরং এ দেশে, এ জেলায় দাওয়াত ওও তাবলীগের মেহনত কাকরাইল মারকায ও চট্টগ্রামের লাভলেইন মারকাযের উলামায়ে শূরার মুরব্বিদের পরামর্শক্রমে চলবে। অজ্ঞ, জাহেল ও ফাসেকদের নেতৃত্বে নয়।

৮. এবারের পাঁচ দিনের জোড় টঙ্গীতে ৭,৮,৯,১০ ও ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ইংরেজি তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ ইংরেজি এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামি ২০১৯ইংরেজির টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ ১ম পর্ব ১৮,১৯ ও ২০জানুয়ারি এবং ২য় পর্ব ২৫,২৬ ও ২৭ জানুয়ারির সাথে আজকের মজমা ঐক্যমত পোষণ করছে। টঙ্গী ইজতেমায় আমাদের চট্টগ্রাম জেলা ১ম পর্বে অংশগ্রহণ করবে।
৯. ২০১৯ সালের টঙ্গী ইজতেমার আগে ও পরে কোনো জেলাওয়ারী ইজতেমা হবে না।
উপরোক্ত ঘোষণাসমুহ যথাযথ বাস্তবায়ন ও বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা রোধে সর্বস্থরের মুসলমান, প্রশাসন ও সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।