গান-বাজনা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্যান্সারতুল্য

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৯ ২০১৯, ১৮:২১

আহমদ যাকারিয়া: ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা ও শোনা হারাম। তা যেকোন ধরনের গানই হোক না কেন। যেমনঃ মুর্শীদি, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যেকোন প্রকার গানই হোক না কেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে।”

এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদীছ’ অবলম্বন করে, সে দোজখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই তা হারাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, ‘লাহওয়াল হাদীছ’ কি?
উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘লাহওয়াল হাদীছ’ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছীরে বলা হয়েছে: ‘লাহওয়াল হাদীছ’ এর অর্থ- গান-বাজনা।

আল্লাহ শয়তানকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ “তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত করো।” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে জারীরে আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহঃ বর্ণনা করেছেন যে, “হযরত মুজাহিদ রহঃ তিনি উক্ত আয়াত সম্বন্ধে বলেন, শয়তানের শব্দের অর্থ হচ্ছে গান-বাজনা।

সূরা আন-নাজমে আল্লাহ বলেন: “তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছো বা তোমরা কি এ কথার (কুরআন শরীফ-এর) উপর আশ্চর্য্যান্বিত হচ্ছো ও হাস্য করছো এবং ক্রন্দন করছো না, অথচ তোমরা গান-বাজনা করছো?”

গান-বাজনার ক্ষতিকর দিকসমূহ:

ইসলাম কোন জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোন কিছু না থাকলে তাকে হারাম করেনি। গান-বাজনার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস বিদ্যমান রয়েছে।

গান-বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপ:

মদ যেমন মানুষের শারীরিক ক্ষতি করে, বাদ্যও মানুষের আত্মিক ক্ষতি করে। যখন গান-বাজনা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হয়। আর তখন তারা অশ্লীল কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়। তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের হত্যা করা নিষেধ তাদেরকেও হত্যা করতে থাকে। যেনা করতে থাকে। যারা গান-বাজনা করে তাদের বেশীর ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোষ দেখা যায়। তাদের বেশীর ভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় ও হাততালি দেয়। অথচ মুখ দিয়ে শিস দেওয়া ও হাত তালি দেওয়া হারাম।

গান হল যেনার রাস্তা স্বরূপ:

বেশির ভাগ অশ্লীল কাজ অনুষ্ঠিত হয় গানের মজলিসে। যেখানে পুরুষ, বালক, বালিকা ও মহিলা চরম স্বধীন ও লজ্জাহীন হয়ে পড়ে। এভাবে গান শ্রবন করতে করতে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। তখন তাদের জন্য অশ্লীল কাজ করা সহজ হয়ে দাঁড়ায়, যা মদ্যপানের সমতুল্য কিংবা আরও অধিক।অনেক সময় গান শ্রবণ করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে হত্যা করে ফেলে। যারা গান-বাজনা করে ও শোনে তারা মূলত শয়তানের সঙ্গী হয়ে যায়।

আল্লাহ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। আর নিশ্চয়ই তারাই (শয়তান) মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়। অথচ মানুষ মনে করে তারা হিদায়েত প্রাপ্ত।” আল্লাহ তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দেন, যাতে তারা আরও পথভ্রষ্ট হতে পারে। আল্লাহ বলেছেন: “বল, যে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তাকে পরম করুণাময় আল্লাহ্ প্রচুর অবকাশ দেবেন।” শয়তান যে তাদের সাহায্য করে, এতে আবাক হওয়ার কিছুই নেই।

বর্তমান জামানায় বেশীর ভাগ গান হয় বিয়ের মজলিসে অথবা বিজয় অনুষ্ঠান বা অন্য কোন উৎসবে। এগুলোর বেশির ভাগই অশ্লীলতা, দেখা-সাক্ষাৎ ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে রচিত। তাতে থাকে মুখের, কপালের এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের বর্ণনা, যা যুবকদের মনে অশ্লীলতা জাগিয়ে তোলে, আর তাদেরকে অশ্লীল কাজ ও যেনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। সাথে সাথে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করতে সহযোগিতা করে।

যখন গায়ক- গায়িকারা গান বাজনার নামে একত্রিত হয়, তখন ঐ সমস্ত ধন দৌলত ব্যয় হয়, যা সংস্কৃতির নামে জাতীয় তহবিল হতে চুরি করা হয়। তারপর ঐ সম্পদ নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা যেয়ে বাড়ী গাড়ী ইত্যাদি খরিদ করে। তারা তাদের অশ্লীল গান বাজনা দিয়ে জাতীয় চরিত্র নষ্ট করে দেয়। তাদের অশ্লীল ও নগ্ন ছবি দিয়ে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করে। ফলশ্রুতিতে তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদেরকে ভালবাসতে থাকে।

সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ “আমি ‘বাদ্য-যন্ত্র’ ও ‘মুর্তি’ ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।”

গান-বাজনা ইসলামে নাজায়িয, হারাম ও নিষিদ্ধ। কেননা গান দ্বারা অন্তরে নিফাক বৃদ্ধি পায়। যেমনিভাবে পানি দ্বারা ফসল বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া গান দ্বারা অন্তরে যৌনতার চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং মানুষ বিপথগামী হয়।

সাহাবী ও তাবেঈনদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহের সমষ্টি হলো গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথাঃ
১) নিফাক এর উৎস।
২) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী।
৩) মস্তিষ্কের উপর আবরণ সৃষ্টিকারী।
৪) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী।
৫) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী।
৬) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী
৭) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।

গান সম্পর্কে চার ইমামের ভাষ্যঃ

গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহিঃ) এক ও অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম মালেক রহিঃ কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেনঃ ‘কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।’ ইমাম শাফেয়ী রহিঃ বলেছেন যে, ‘গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল নির্বোধ।’

গান বাজনার সাথে জড়িতদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেওয়া হবে:

আজকাল ব্যপকভাবে গান বাজনার প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব প্রোগ্রামে এতোটাই ঘৃণ্য কার্যকলাপ হচ্ছে যে, যা বলতেও লজ্জা লাগে। গান বাজনা, নাচ এসবের সাথে যারা জড়িত তাদের ভয় করা উচিত, আল্লাহ তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দিতে পারেন! পাপ কাজকে বান্দাদের জন্য আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে দেওয়া হয়েছে, কারণ এই পাপ কাজের আড়ালেই রয়েছে “জাহান্নাম”। পাপ কাজ করে যদি সাময়িক আনন্দ না থাকতো তাহলে হয়তো দুনিয়ার কেউই পাপ কাজে লিপ্ত হতো না। কিন্তু সাময়িক এই আনন্দের পেছনে রয়েছে অনেক দুঃখ। আর জাহান্নাম তো হচ্ছে উত্তপ্ত অগ্নি।

গান-বাজনা, নৃত্য এগুলোর কি কোনো শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে?

উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ দেওয়া হবে। এরকম অনেকের নিকৃষ্ট শাস্তি দুনিয়াতেই হবে। আর পরকালের শাস্তি তো আরো মারাত্মক।
আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।

প্রচলিত গান-বাজনার প্রোগ্রামগুলোতে যা থাকেঃ
১) উদ্দাম-উশৃংখলার গান-বাজনা, যা মানুষকে উন্মত্ত করে দেয়। এগুলো মানুষকে এতোটাই উন্মত্ত করে দেয় যে, নারীরা লজ্জা-শরম ভুলে নিজেদেরকে পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেনা।
২) নর্তকীঃ পুরুষদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে অশ্লীল নারী। টাকার গোলাম কিছু প্রফেশনাল নারী, যারা আসলে একজন পতিতার চেয়ে বেশি কিছুনা, এদেরকে নিয়ে আসা হয় লম্পট পুরুষদেরকে আকর্ষণ করার জন্য। আর পরিবেশ এমন হয়, অনেক সাধারণ মেয়েরাও এ সমস্ত নর্তকীদের সাথে পুরুষদের মনোরঞ্জনে নেমে পড়ে।
৩) গায়িকাঃ কেয়ামতের একটা লক্ষণ, গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। কারণ নারীদের কন্ঠ লক্ষ লক্ষ যুবকের চরিত্রের শুদ্ধতা নষ্ট করে দিতে পারে।
৪) বিভিন্ন মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যঃ এই পার্টিগুলো অনেক তরুণের নেশা ধরার স্থান। ফ্রি তে দামী নেশাদ্রব্য খেয়ে বাকি জীবন নেশার পেছনেই ধ্বংস করে।
কেয়ামতের ছোট যে লক্ষণগুলো হাদীসে বলা হয়েছে তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাঃ এক হাদীসে বলেছেন: “তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে জেনা করে তাহলে তোমরাও তা করবে।” এই হাদীসের বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কেয়ামত কবে হবে কেউ জানে না, তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, খুব বেশি দেরী নেই।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: “কেয়ামতের আলামত হচ্ছে দ্বীনি জ্ঞান উঠে যাওয়া, অজ্ঞতার সয়লাব হওয়া, মদ পান করা, ব্যভিচার ব্যপকতা লাভ করা।”

রাসুল সঃ বলেছেন: শেষ জামানার লক্ষণ হচ্ছে, “গান-বাদ্য, গায়িকা ও মদপানকে হালাল মনে করা হবে।”
এসবগুলোই এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গান বাজনার চূড়ান্ত শাস্তি:

“ভূমিধ্বসে ধ্বংস করে দেওয়া হবে, মানুষের আকৃতি পরিবর্তন করা হবে…।” কি আকৃতি পরিবর্তন করা হবে?মানুষকে শূকর ও বানরে পরিণত করে দেওয়া হবে। যেমন, পূর্বে ইয়াহুদীদেরকে করা হয়েছিলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: “আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের মাথার উপরে গান-বাজনা ও নারী-নৃত্য চলতে থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেবেন।”

আল্লাহ্ আমাদেরকে গানের কুফল থেকে রক্ষা করুন।