খুনি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত আমরা এই রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেবো – লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১০ ২০১৯, ০২:৩৮

একুশে জার্নাল ডেস্ক:যুক্তরাজ্যের লন্ডনে লুকিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুনি ও অর্থ-পাচারকারীদের অবশ্যই শাস্তি হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। খুনি ও অর্থপাচারকারীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, যত টাকাই খরচ করুক, তাদের কোনো ক্ষমা নেই এবং জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে সেন্ট্রাল লন্ডনের তাজ হোটেল বলরুমে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময়ে প্রধান মন্ত্রীই ছিলেন একমাত্র বক্তা। সভাপতি হিসেবে সুলতান শরীফ বক্তব্য রাখলেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকলেও কোন বক্তব্য রাখেননি তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আদালত খুনি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। ‘আমরা এই রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেবো। তারা যত স্লোগানই দিক, যত তিরস্কারই করুক, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।

সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি’র উত্তাপিত বিভিন্ন অভযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী বলেন, অহরহ মিথ্যে অভিযোগ তুলে তারা আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। আসলে যাদের জন্মই মিথ্যে দিয়ে, তাদের কাছে মিথ্যে ছাড়া আর কি আশাই করা যায়। তিনি বলেন, যাদের জন্মের কোন বৈধতা নেই তারাই সবকিছুতে অবৈধতা খুঁজে বেড়ায়।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা নিয়ে কারবার করাই বিএনপি’র ব্যবসা এবং তারা এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে।’
‘তবে, আমি বিশ্বাস করি, সত্যের জয় হবেই,’ যোগ করেন তিনি।
বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় এবং গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। যাতে করে বিজয় সমুন্নত থাকে এবং অতীতের মতো বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে এবং দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে।’
নিজের চোখের অপারেশন দেশেই করতে চেয়েছিলেন, এমনটি জানিয়ে প্রধান মন্ত্রী বলেন, দেশের ডাক্তাররা সাইকোলজিক্যাল কারনে আমার চোখ অপারেশনের ঝুঁকি নিতে রাজি হলোনা বলেই বাধ্য হয়ে ব্রিটেনে এই চিকিৎসা নিতে হলো।
প্রায় আধা ঘন্টার বক্তৃতায় প্রধান মন্ত্রী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন, দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ দুঃসময়ে ব্রিটেন প্রবাসীদের ভূমিকা ও তাঁর সরকারের আমলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বিষয়ে কথা বলেন।
নেতা কর্মীরা দলের প্রাণ এমন মন্তব্য করে প্রধান মন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্থ থাকায় এবার আপনাদের সবার সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। এরপরও দেশে ফেরার আগে সাক্ষাত না করে যাই কি ভাবে? 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিদের একটি আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনীতির জটিল সময়গুলোতে বার বার সব সময়ই প্রবাসীদের কাছ থেকে পেয়েছেন অকৃত্তিম সমর্থন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে এই ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয়েছিলো তৎপরতা। প্রবাসীদের সমস্যা সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর সরকার সব সময়ই সচেতন এমন মন্তব্য করে প্রধান মন্ত্রী বলেন, সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করণ, সিলেট-লন্ডন বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালুসহ প্রবাসীদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। 
তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী বিরোধীদল গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম একটি অঙ্গ। পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল দুটোই ঠিক করে দেয় জনগন। কিন্তু বিগত নির্বাচনে সরকারে তো দুরের কথা, প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও জনগনের বিবেচনার মাপকাটিতে ঠিকেনি বিএনপি। তিনি বলেন, এর দায় জনগনের নয়, বিএনপি’র। শেখ হাসিনা বলেন, বিগত সময়ের অপশাসন, দুর্নীতি, আন্দোলনের নামে অগ্নি সন্ত্রাস ইত্যাদি কারনে জনগনের মধ্যে যে দলটির সামান্যতম কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই এবং তারা যে ক্ষমতায় আসতে পারবেনা এটি বুঝতে পেরে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে মনোনয়ন বানিজ্য হিসেবেই নির্বাচনকে নিয়েছিলো বিএনপি। 
শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটি নতুন ইতিবাচক ইমেজ তৈরী করেছে। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। বিগত নির্বাচনগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো বেশি এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হারেও নারীরা রয়েছেন এগিয়ে।
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন কৌশল জানতে অনেক রাষ্ট্রই এখন আগ্রহী, এমন মন্তব্য করে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের এ উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান প্রধান মন্ত্রী। 
 

দীর্ঘ প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নিজস্ব অর্থ দিয়েই পদ্মা নেতু নির্মাণ করছে এবং ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সেতুর প্রায় ২ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু আমরা সেই অভিযোগ মেনে নেইনি বরং আমরা এর প্রতিবাদ করেছি কারণ সেই সাহস আমাদের ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেন তাদের অভিযোগ মেনে নেব, যে কাজ আমরা করিনি। একটি সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছিল এবং আমরা তা মেনে নেইনি কেননা তা কখনও ঘটেনি। আমরা কোন অভিযোগ ঘাড়ে করে ক্ষমতায় আসতে চাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোন মিথ্যা অভিযোগের দায় নিতে পারি না এবং আমি জানি মানুষ সত্য ভালবাসে এবং মর্যাদা দেয়, আমি এও জানি সত্যের পথ সবসময়ই কঠিন এবং সে পথেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি।’
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর আসন্ন জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে সমাজের প্রতিটি সেক্টরের অংশগ্রহন ভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহনের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের বলেন, জাতীর জনকের জীবন দর্শন চর্চায় নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এই গুনাবলীর মানব সম্পদ তৈরীতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার এটাই প্রথম যুক্তরাজ্য সফর। ১০ দিনের এই সফর শেষে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় দেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।