কুরবানী প্রায় সমাগত, আপনার প্রস্তুতি কতটুকু?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৩ ২০১৯, ১৮:০১

মাহমুদুল্লাহ মুহিব

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচে বড় উৎসব ঈদুল আযহা প্রায় সমাগত।মুসলমানদের ঘরে ঘরে এখন ঈদ উৎসবকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। গাঁও, গ্রাম কিংবা শহর,নগর সবখানেই চলছে গরু ছাগলের জমজমাট হাটবাজার। কারণ ঈদুল আযহার অন্যতম একটা আমল বা বিধান হলো কুরবানী করা।

(নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট পশু যথা সময়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশে জবাই করাকে কুরবানী বলে।) এ কুরবানী মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্য মস্ত এক নেয়ামত।এ নেয়ামতের পথ ধরেই বান্দা তার রবের নৈকট্য বা সান্যিধ্য লাভ করে থাকে।

হযরত আদম আ. এর সময় থেকে যুগযুগ ধরে পবিত্র কুরবানীর বিধান চলে আসছে।এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি।যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(সূরা হজ্জ, ৩৪)

কুরবানীর পশু জবাই বাহ্যিক একটা নিয়ম মাত্র;প্রকৃতপক্ষে মানুষের অন্তরের তাকওয়া ও ইখলাসটাকেই আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করে থাকেন। আর গোশ্ত ও অন্যান্য জিনিস বান্দাকে নেয়ামত হিসেবে দান করে দেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুর আনে ইরশাদ হয়েছে “(কুরবানীর পশুর) এগুলোর গোশ্ত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না,বরং  তার কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাক্বওয়া। (সূরা হজ্ব, ৩৭)

নবী কারীম (সা.) সাধারণত নিজে একা কুরবানী করতেন।  যেমনটা সাহাবায়ে কেরাম বণর্না করেছেন, “হযরত আনাস বিন মালিক রা. বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ শিংবিশিষ্ট দু’টি ধুসর বর্ণের মেষ কোরবানী করেছিলেন। তিনি (যবেহ করার সময়) বিসমিল্লাহ ও তাকবীর বলেছিলেন। আমি তাঁকে নিজের পা সেটির পাঁজরের উপর রেখে চেপে ধরে স্বহস্তে তা কোরবানী করতে দেখেছি।(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩১২০)

কুরবানীর পশু জবাইয়ের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য অগণিত পূণ্য।যার বর্ণনা পওয়া যায় রাসুল সা. এর বিভিন্ন হাদিসে। যেমন, “হযরত যায়দ বিন আরকাম রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিগণ বললেন,  ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ. এর সুন্নাত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের বিনিময় নেকি হবে। সাহাবাগণ বললেন,দুম্বা ও ভেড়ার পশমের কী হুকুম? তিনি বলেন, দুম্বা ও ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস  ৩১২৭)

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.)বলেন, কুরবানির দিন আদম সন্তানের জন্য এমন কোন কাজ নেই যা  আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কুরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই  মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানি করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

অপর দিকে যারা সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করবে না,তাদের প্রতি কঠোর হোঁশিয়ারী উচ্চারণ করে নবী কারীম (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)

প্রথমেই বলেছি, কুরবানী হলো নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করা।

এর বাহিরে অন্য পশু দ্বারা কুরবানী করলে তা গ্রহণ গ্রহণযোগ্য  হবে না।আর নির্দিষ্ট পশু হলো মোট ছয়টি। যথা: গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া

এ গুলোর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে আবার আলাদা আলাদ বয়সসিমা।নর্ধারিত বয়সের কম হলে সে পশু দ্বারা কুরবানী  দেয়া যাবে না।

১. উটের নির্ধারিত বয়স পূর্ণ পাঁচ বছর হতে হবে।

২. গরু, মহিষের পূর্ণ দুই বছর হতে হবে।

৩. ছাগল,ভেড়া,দুম্বার পূর্ণ এক বছর হতে হবে।(তবে ৬মাস বয়সের ছাগল, ভেড়া যদি দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মত মনে হয় তবে তা দ্বারাও কুরবানী করা যাবে)

পশু জবেহ করার সময় যারা ছুরি ধরবে সকলের জন্য ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা ওয়াজিব।তাদের কোন একজন যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না পড়ে, তাহলে ঐ পশু হারাম হয়ে যাবে এবং তা কারো জন্য খাওয়া জায়েয হবে না। (ফতওয়ায়ে শামী)

তবে যদি কোন ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে ঐ পশু হালাল হবে এবং কুরবানীও আদায় হয়ে যাবে। (ফতওয়ায়ে শামী)

জবেহকৃত পশুর ৭টি জিনিস খাওয়া নিষেধ। সেগুলো হলো পিত্তথলি,মূত্রথলি,পুরুষাঙ্গ,স্ত্রী অঙ্গ,অন্ডোকোষ,চামড়ার নিম্ন ভাগের গুটি ও প্রবাহিত রক্ত।প্রবাহিত রক্ত সম্পূর্ণ হারাম।বাকিগুলো মাকরুহে তাহরিমি।

এছাড়াও আরো যেসব বিষয় আমাদের জানার প্রয়োজন সেগুলো নিকটস্থ   বিজ্ঞ একজন আলেমর কাছ থেকে যেনে নিতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, আমার হাজার কিংবা লক্ষ্য টাকা যেন সামান্য ভুলের কারণে বিফলে না যায়।অসংখ্য নেকী থেকে যেন বঞ্চিত না হয়ে পড়ি।

সে জন্যে মহান প্রভূর কাছে প্রার্থনা,হে প্রভু, আমার কুরবানী তুমি কবুল করো!তোমার নৈকট্য লাভের তাওফিক দাও আমাদের।আমিন!

 

সহ-পরিচালক: মদীনাতুল উলূম ইসলামিয়া মাদরাসা সদর,লক্ষ্মীপুর