কী হয়েছিল চন্দ্রনাথ পাহাড়ে? কেন দুজন মাদ্রাসা-ছাত্রকে আটক করা হলো?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ০২ ২০২১, ১৫:২২

মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় কি আগাগোড়া কোনো ‘হিন্দু পাহাড়’? সেখানে কি আজান দেওয়া এবং আজান দিয়ে সেটা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া আইনগতভাবে একেবারেই নিষিদ্ধ?
আজান দেওয়ার ছবিসহ ফেসবুকে ‘স্বপ্নপ্রবণ’ একটি পোস্ট দেওয়ার ঘটনাটিকে এত ভয়ঙ্কর অপরাধ হিসেবে না দেখলে কি চলত না?
বেড়াতে যাওয়া দুজন মাদ্রাসা ছাত্রকে আটক করে নিয়ে যেতেই হলো?
নানা কারণে নীরব ও মুখবন্ধ সময় যাচ্ছে, কিন্তু এ ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া কি ভালো?

সীতাকুণ্ড, চন্দ্রনাথ পাহাড়, চন্দ্রনাথ মন্দির, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অন্যান্য মন্দির, সীতার কথিত ‘দক্ষিণ হস্তের কুণ্ড’ পড়ার জায়গা, হিন্দু তীর্থস্থান-এসব বিষয় গুগল করলে পাওয়া যায়। এসব দেখে এ কথাটা বোঝা যায়, পাহাড়টিতে হিন্দু ঐতিহ্য, মিথ, পূজা, তীর্থ ইত্যাদির একটি প্রাবল্য রয়েছে। কিন্তু এ পাহাড়ে কি আইন করে আজান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে? বাংলাদেশের কোনো ভৌগোলিক অংশে সেটা কি সম্ভব? (ভূমি নীতি এবং সাংবিধানিক সমতা আইনের ভিত্তিতে এই প্রশ্ন)

মামলায়-অভিযোগে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন, আজান দিয়ে, পরে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, বাড়তি আরও কিছু কথা বলে এরা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আসলেই কি কথাগুলো এবং তাদের বাস্তব পরিস্থিতি ও পরিবেশ এতটা আতঙ্কের ছিল? আমার কাছে তো বরং সাধারণ ভ্রমণ এবং এর সঙ্গে কিছুটা দাওয়াতি আবেগ ও স্বপ্ন মেশানো কোমল অভিব্যক্তির চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি এই ফেসবুক পোস্টটিকে। ফেসবুক পোস্টে কী বলা হয়েছে? স্ক্রিনশট এখানে আছে, তারপরও উল্লেখ করছি: “চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আযান দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই সেখানে ইসলামের পতাকা উড়বে।”

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া সদ্য কৈশোর পেরুনো মাদ্রাসাছাত্রের পোস্টে এ-জাতীয় বাক্যকে এতটা ভয়ঙ্করভাবে দেখা বা চিহ্নিত করার কি কোনো দরকার আছে? এ-জাতীয় অভিব্যক্তি তো ভারতে গিয়ে মাথুরা, গয়া-কাশির সামনেও কেউ প্রকাশ করতে পারে। এ কথাটাকে এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কী আছে? বিশ্বব্যাপী ঈমানের আলো ও শান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার যে আকুতি মুসলমানের হৃদয়ে বাস করে, তারই একটি সাধারণ প্রকাশ এটি।

তারপরও কেউ যদি বলেন, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মতো হিন্দুদের প্রায় তীর্থভূমির মতো একটা জায়গায় এভাবে পোস্ট করে অভিব্যক্তি প্রকাশ না করাই মাদ্রাসাছাত্রদের জন্য সমীচীন ছিল, আমি তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক বাস্তবতার কারণে দ্বিমত করবো না। কিন্তু এটাকে এত বড় ইস্যু বানিয়ে, সংবাদপত্রে রংচঙা নিউজ করে, এদেরকে আটক করার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। তাই সন্দেহ জাগে, এগুলো/ এইসব অতি স্পর্শকাতরতা আসলে এখানকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটা দীর্ঘ সাংস্কৃতিক যুদ্ধের পদধ্বনি কিনা।

[এই ইস্যুগুলো একদম নীরবে পার করা ঠিক না। এই নীরবতার ভিত্তির উপরই ধর্মীয় বঞ্চনা ও অধিকারের এবং সাংস্কৃতিক যুদ্ধের এক-একটা প্রাসাদ দাঁড়িয়ে যাবে। আজকের মাথানিচু নিঃশব্দতা সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করতে পারে। তাই প্রতিনিধিত্বশীল ফোরাম ও প্লাটফর্মগুলো থেকে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক আওয়াজ-আলোচনা দরকার।]

(শরীফ মুহাম্মদ ।। Sharif Muhammad পেইজ থেকে)