কাশ্মীর ইস্যুতে চট্টগ্রামে হেফাজতের বিক্ষোভ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৩ ২০১৯, ২০:২৮

‘গুজরাট গণহত্যার নায়ক’ জালেম মোদী কাশ্মীর ও আসামে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে

-আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী

আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বাদ জুমা কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ, কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার দাবি এবং আসামে বিতর্কিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে ১৯ লাখ নাগরিককে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইট চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী।

প্রধান অতিথির ভাষণে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কাশ্মীরি মুসলমানদের ওপর নতুন করে গণহত্যা শুরু করেছে। গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিরপরাধ মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। যুবকদের শরীরের কাপড় খুলে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মেরে রক্তাক্ত করছে, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রেখে কাশ্মীরকে অচল করে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। ‘গুজরাট গণহত্যার নায়ক’ জালেম মোদী সরকার কাশ্মীর ও আসামে জেনোসাইড বা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। মজলুম মুসলমানদের উপর ভারতের এ অমানবিক অত্যাচার সহ্য করা যায় না।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখন দিল্লীর আধিপত্য ও দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার লড়াইয়ে জেগে উঠেছে। কাশ্মীরের মুসলমানরা স্বাধীতাকামী মুক্তিযোদ্ধা। এদেরকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী বানিয়ে দমানোর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতকে একথা মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতাকামী কোনো জাতিকে কেউ চিরদিন দমিয়ে রাখতে পারে না। ইংরেজ বেনিয়ারাও পারেনি। সুতরাং কাশ্মীর একদিন স্বাধীন হবেই কিন্তু ভারত টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। গায়ের জোরে আগ্রাসন চলানোর ক্ষমতা দিল্লীর আর থাকবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে কাশ্মীর স্বাধীন করার জন্য মুসলমানরা সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করবে। তিনি কাশ্মীরের জনগণের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে মুসলিম দেশসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জোরদার ভুমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরও বলেন, দাজ্জালের দল বিজেপির যুদ্ধংদেহী মনোভাব, সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবেশীদের সাথে তাদের যে বৈরিতা, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করবে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে দিবে। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের কারণে বিজেপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। তারা মুসলমানদের ওপর জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে, ভীতসন্ত্রস্থ করে গোটা ভারতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত করছে। বিজেপির প্রধান অমিত শাহ ঘোষণা করেছে, আসামের ৪০ লাখ বহিরাগতকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান ভারতে আশ্রয় পাবে, কিন্তু মুসলিমরা নয়। তারা নাগরিকদের মাঝে বিভাজন তৈরী করে চরম সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। আসামের ১৯ লাখ মানুষকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। নাগরিকত্ব ছাড়া লোকগুলো রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে। আর রাষ্ট্রহীন এই মানুষগুলোকে তারা বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে সংঘাত তৈরী করতে চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কোন রকম আধিপত্য, অযৌক্তিক দাবি মেনে নেবে না।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বাংলাদেশসহ পুরো মুসলিম উম্মাহর প্রতি ভারতীয় সকল পণ্য বর্জন করার আহবান জানিয়ে বলেন, এটা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব।

চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজশাহ) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আলী ওসমান, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জিয়াউল হোসাইন, মাওলানা কারী ফজলুল করিম জিহাদী, দারুল মাআরিফের মাওলানা এনামুল হক মাদানী,
মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ ফায়সাল, মাওলানা আ ন ম আহমদুল্লাহ ও মাওলানা ইকবাল খলিলের যৌথ পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন দামপাড়া মাদরাসার মুতাওয়াল্লি আলহাজ মোহাম্মদ আবু মনসুর, হেফাজত নেতা মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা আবদুল মাবুদ, মাওলানা সোহাইল সালেহ, মাওলানা সরোয়ার আলম, মাওলানা শামসুল হক জালালাবাদী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মনসুরুল হক, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা ইমরান সিকদার, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা আবু তাহের ওসমানী, মাওলানা জাকারিয়া মাদানী, মাওলানা আশরাফ বিন ইয়াকুব, মাওলানা মোশতাক মাদানী, মাওলানা কারী আবু রায়হান প্রমুখ।