কার জন্য কে কাঁদে। রশীদ জামীল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ২৮ ২০১৯, ০৯:৫৪

বাবুনগরির জন্য এখন দরদ দেখানোর নীতিগত অধিকার আছে আমাদের? এতদিন কোথায় ছিলাম? আল্লাহপাক তো চক্ষু দুইটা দিয়েছিলেন দেখবার জন্য। একটা বন্ধ করে রেখেছিলাম কেন?

তিনি আজ হসপিটালাইজড। ডাক্তাররা বলছেন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে যেতে পাসপোর্ট লাগে। সরকার তাঁর পাসপোর্টটি জব্দ করে রেখেছে। আমরা মাঝেমধ্যেই ফেইসবুকে এসে আবেগতাড়িত হচ্ছি আর ‘বাবুনগরির পাসপোর্ট ফেরত চাই’ বলেই ভাবছি, এরচে বেশি আমাদের আর কী করার আছে।

এই যে অবস্থা, এই যে একটা মানুষ চিকিৎসার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন, এ জন্য দায়ী কে? দায় কি শুধু সকারের? আমাদের কোনো দায় নেই?

হেফাজতের আন্দোলনের কারণে কেউ যদি সরকারের কাছে অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে বাবুনগরি দুই নাম্বার অপরাধী। প্রথম সিরিয়াল আল্লামা আহমদ শফীর। কিন্তু সরকার তো আল্লামা শফীর পাসপোর্ট আটক করল না।
কারণ কী?

কারণ আমরা।
কারণ আমাদের আবেগ।
কারণ আমাদের হুজুগ এবং মোহ।

সরকার আমাদের ম্যান্টালিটি ভালোই রিড করতে পেরেছে। সরকার জানত আহমদ শফীর পাসপোর্টে হাত দিলে, অথবা তাঁকে গ্রেফতার করলে আমরা ক্ষেপে উঠব। তাই সেখানে হাত দেয়নি। কিন্তু বাবুনগরিকে ধরে জেলে পুরে রাখলে সমস্যা নাই। আসলেই কোনো সমস্যা হল না।

সরকার ভাবল এই লোককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হলেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া আসবে না। আসলও না।

অতএব, সরকার ভাবল লোকের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখলে কেউ কিছু বলবে না। কেউ কিছু বললও না।

সুতরাং, এমন নীরিহ কাউকে পেলে তাকে নিয়ে যা খুশি করা যায়। যেভাবে খুশি খেলা যায়। কেউ কিছু বলবে না। সরকার যে সঠিক ছিল, গত ছয় বছরে আমরা কি সেটাই সেটাই প্রমাণ করে দিইনি?
.
দুই
কথা যা বলার সরাসরিই বলাই ভালো। সত্য বলার অভ্যাস করা সহজ। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, সহজ কাজগুলোই আমরা করতে পারি না। যদি পারতাম, আমাদের নিয়ে বাকিদের অন্যভাবে ভাবতে হতো।

আমাদের আরেকটা সমস্যা হল চোখ-কান বন্ধ করে ‘জ্বি হুজুর’ বলে যাওয়া। তাকলিদ বা এত্বায়াত তো এটাকে বলে না। বড়দের সম্মান করতে হবে, তাদের হুকুম তামিল করতে হবে…ঠিকাছে। তারমানে এক বড়কে তাজিম করতে করতে আসমানে উঠিয়ে রাখব, অন্যদের জমিনের নিচে দাফন করে ফেলব__তাহলে তো হল না।

আল্লামা আহমদ শফী দেশের শীর্ষ আলেম। লক্ষ উলামার উস্তাদ। তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। তারমানে কিই এই যে, তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র শ্রদ্ধাভাজন। আর কেউ নাই? তারমানে কি এই যে, তিনি কোনো কথা বললে সেটা গ্রহণ না করলে অথবা পালটা যুক্তি তুলে ধরলে তাঁকে অপমাণ করা হয়ে গেল? অতিরিক্ত আবেগ আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে আমরা কি টের পাই?

এখন আমি যদি বলি, আল্লামা আহমদ শফী যদি সরকারেরে সংশ্লিষ্ট মহলকে একটি ফোন করে বলতেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাবুনগরির পাসপোর্ট ফেরত চাই, মনেহয় ২৪ ঘণ্টাও লাগত না,__তাহলে আমার কি বেয়াদবি হয়ে যাবে?

হলেও কিচ্ছু করার নাই। আমি তাই বিশ্বাস করি। আমি মন থেকেই বিশ্বাস করি আল্লামা আহমদ শফীর একটা ফোনকলই বাবুবগরির পাসপোর্ট ফেরত পাবার জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি জানি না এর পেছনে কোন হেকমত কাজ করছে!

আমি জানি না বাবুবগরির বিরুদ্ধে আল্লামা আহমদ শফীর কানে কারা কী বিষ ঢালছে। আবার কিছু কিছু জানিও। পেছন থেকে যারা কলকাটি নাড়ছে, এবং বাবুনগরির মতো একজন সাদা মনের মানুষের ব্যাপারে হুজুরকে এভাবে উদাসিন করে রেখেছে, তারা হয় দালাল আর না-হয় চামচা। সুতরাং আজ একই সাথে আমাদের দুইটা স্লোগান দেওয়া দরকার।

#বাবুনগরির_পাসপোর্ট_ফেরত_চাই
#দালাল_ও_চামচামুক্ত_আহমদ_শফী_চাই।
.
যার কেউ নাই, তার সারা দুনিয়া।
বাবুনগরি! পৃথিবী আপনার সাথে আছে।
আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সুস্থ হয়ে ওঠা দরকার।