করোনা আপডেট; গবেষণার নতুন তথ্য, কি ঔষধ, নিজে কি করতে পারবেন 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২৮ ২০২০, ১৪:৪৯

১. উপসর্গগুলা আবার মনে করে নেই- জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, ঠান্ডায় কাপুনি, শ্বাসকষ্ট, দুর্বল লাগা, গায়ে ব্যাথা খুবি কমন। কোন নতুন জ্বর বা কাশি বা গলা ব্যাথা হলেই ধরে নিবেন কোভিড হয়েছে। মাথা ব্যাথা, বমি, পেট ব্যাথা ও ডায়েরিয়া ও দেখা যাচ্ছে অনেকের।

২. বয়স কম হলেই বেচে যাবেন এমন কোন গ্যারান্টি নাই। নতুন এক গবেষনায় দেখা গিয়েছে নিউ ইউর্কের দুইটা হাসপাতালে মৃতদের ২৫% এর বয়স ৫০ এর কম- অনেকের অন্য কোন রোগ ছিলনা।

৩. হৃদরোগ, ব্লাড প্রেশার এর সমস্যা, ডায়েবেটিস অথবা স্থুলতা (মোটা বা obesity) যাদের আছে তাদের খারাপ হওয়ার রিস্ক বেশি। স্থূলতা কম বয়সিদের মধ্যে সব চেয়ে বড় রিস্ক।

৪. কোভিড এর জন্যে কার্যকরি কোন ঔষধ এখনো নাই। যে ঔষধ এর নাম দেখছেন পত্রিকায় কোনটাই প্রমানিত নয়, কিন্ত গবেষনা চলছে। যদি কোন ডাক্তার দিয়ে থাকে, এটা সকরুণ ব্যবহার। যেহেতু আর কিছুই কাজ করছে না, একটা ঔষধ দেয়া যদি কাজ করেও যায়, লেগে গেলো।

৫. সাধারন মানুষ তিনটা কাজ করতে পারেন সংক্রমনের ঝুঁকি কোমানোর জন্যে। বাসা থেকে একদম নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বের হবেন না। খাবার ছাড়া অন্য কোন কিছু কেনার জন্যে মার্কেটে যাবেন না। জনসমাগম হবে এমিন জায়গা এড়িয়ে চলুন।

৬. এরপর যে কাজটা দরকার তা হলো মুখ ঢাকা। এবং ঠিক মত। নাক বের করে রাখবেন না। কথা বলার জন্যে খুলে কথা বলবেন না। একদম যতক্ষন বাসার বাইরে ততক্ষন মুখে রাখবেন। কোন কারনেই খুলবেন না।

৭. সামাজিক দুরত্ব মেনে চলবেন। হাত মিলাবেন না, জড়িয়ে ধরবেন না, কারো বাসায় যাবেন না, কাউকে বাসায় আসতে দিবেন না। শুধু দরকারি কাজ ছাড়া একদম বাসায় থাকবেন।

৮. জ্বর বা কাশি হলেই আতংকিত হবেন না। অধিকাংশ মানুষ ইন শা আল্লাহ ভাল হয়ে যাবে। অনেক পানি পান করবেন, জ্বর বা ব্যাথার জন্যে প্যারাসিটামিল খাবেন এবং যত সম্ভব আইসোলেট করবেন। টেস্ট করাতে পারলে করবেন। শ্বাসকষ্ট হলেই হাসপাতালে যাবেন।

৯. আতংকিত না হলেও আবার উড়িয়ে দেয়া যাবে না। অনেকেই এটাকে হাচি-কাশির রোগ বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। গত সপ্তাহে এক গবেষনায় দেখা গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, করোনাভাইরাসের মৃত্যুর ঝুঁকি ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে ২০ গুন বেশি। মনে রাখবেন ইনফ্লুয়েঞ্জা এপিডেমিক কিন্ত অনেক ভয়াবহ যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের ক্ষেত্রে এটার ঝুঁকি আরো অনেক বেশি কারন আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা তেমন সিরিয়াস না যেমন যুক্তরাষ্ট্রে (যুক্তরাজ্য বা ইউরোপেও এত খারাপ হয়না)।

১০. তিনটা কাজ করলে কাজ দেখা গিয়েছে। প্রথম, অক্সিজেন। অকারনে অক্সিজেন না। যার অভাব আছে তার। ৯২% এর কম যদি অক্সিজেন স্যাচুরেশান চলে যায় তাহলে অক্সিজেন দেয়া উচিত (কিছু কেইসে ভিন্ন কিন্ত অধিকাংশ এটাতে ধরবে)। অক্সিজেন দেয়াই আসল চিকিৎসা যেটার প্রমান পাওয়া গিয়েছে।

১১. অতিরিক্ত অক্সিজেন দেয়ার চেয়ে রোগী কে prone করা যায়। Proning হলো একটা রোগীকে উপর হয়ে শুয়ে থাকতে বলা, পেটের উপর। এভাবে দেখা গিয়েছে যে অনেকটা ফুসফুসের ধারণক্ষমতা বাড়ে। এ দিয়ে অক্সিজেন এর চাহিদা ও কমে আসে এবং দেখা গিয়েছে আইসিইউতে ভর্তি করার দরকার ও কমে আসে।

১২. কোভিডে দেখা গিয়েছে যে রক্তের জমাট বাধা বেড়ে যায় (coagulopathy)। এটার জন্যে রক্ত পাতলা করার জন্যে (anti-coagulation বা blood thinning) ঔষধ দেয়া হচ্ছে। Enoxaparin ইঞ্জেকশান সব চেয়ে উত্তম কিন্ত তা না হলেও Rivaroxaban ট্যাবলেট ও নেয়া যেতে পারে। একজন ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া নিবেন না, রক্তপাত এর ঝুঁকি আছে। আগে থেকে নিয়েও লাভ নাই, রোগ সংক্রমিত হলেই নিবেন।

১৩. নিজে নিজে ঝুঁকি নিতেই পারেন, কিন্ত এতে শুধু নিজের ক্ষতি না। অনেকেই বলছেন যে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও তো ঘড় থেকে বের হই। কিন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। এবার কিন্ত নিজেকে না শুধু, নিজের পরিবার, প্রতিবেশি সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। আমার পরিচিত একজন এরকম পাত্তা না দিয়ে যা ইচ্ছা তা করেছে। তার বাবা এখন নাই। এরকম প্রচুর পরিবারে।

১৪. হাসপাতেলে প্রচন্ড চাপ পড়ছে এবং পড়বে। ডাক্তারদের অকারনে জ্বালাবেন না। তাড়া পরিবার ফেলে নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। প্রচন্ড মানষীক চাপে আছে। তাদের কে তাদের কাজ করতে দিন। তাদের সিদ্ধান্ত গুলো শ্রদ্ধা করুন।

১৫. হার্ড ইমিউনিটি তে ঝাপানো সুইডেনের মাত্র ৭% মানুষের এন্টিবডি ছিল এপ্রিলের শেষে- সব খোলা রেখেই। প্রতি লাখ মানুষে ইউরোপের মধ্যে মৃত্যুর হার এখন সব চেয়ে বেশি। যেকোন সিম্পেল মেডিকেল কলেজের টেক্সটবই পড়লেই জানবেন এটা কোন স্ট্র‍্যাটেজি হতে পারেনা। আমাদের সাস্থ ব্যবস্থা একদম ভেঙে পরেছে। এরকম অমানবিক কিছু সাপর্ট করা যায় না। বাংলাদেশে সংক্রমন কমানো না গেলে অন্যান্য দেশ আমাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছেদ করবে। যেই অর্থনীতির কথা ভেবে করছি, সেই অর্থনীতি আরো ডুবে যাবে।

ডা. রাইক রেদোয়ান, কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল