কখন কে গুম হবে, খুন হবে, আল্লাহ এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানে না -এরশাদ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৮ ২০১৮, ১১:৩৭

কখন কে গুম হবে, কখন কে খুন হবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আর ওই প্রধানমন্ত্রী জানেন। আর কেউ তা জানে না।’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ।

তিনি বলেন ‘আমরা শান্তিপ্রিয়। শান্তিতে বিশ্বাস করি। নিজের নিরাপত্তা চাই, পরিবারের নিরাপত্তা চাই। আমার ছেলের নিরাপত্তা চাই। প্রতিবেশীর নিরাপত্তা চাই। কারও কোনও নিরাপত্তা নেই। কখন কে গুম হবে, কখন কে খুন হবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আর ওই প্রধানমন্ত্রী জানেন। আর কেউ তা জানে না।’

তিনি বলেছেন, ‘এখন সরকার চালায় একজন মানুষ। একজন মানুষ ১৬ কোটি মানুষকে শাসন করতে পারে না। আমরা একক নেতৃত্বের সরকার চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে সরকার চালায়, সে যদি বলে, অমুক আর নেই, তাহলে ওই লোক আর থাকে না। কেউ তার খোঁজ পায় না। ডিবির কাছে যাবেন, তারা বলবে জানে না। পুলিশের কাছে যাবেন, তারাও বলবে জানে না। কয়েকদিন পরে ওই লোকের মৃতদেহ নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে। এই অবস্থা চলতে পারে না।’

শনিবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত জাতীয় জোটের ব্যানারে মহানগর জাতীয় পার্টি ও মহানগর ইসলামী ফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধান অতিথি ছিলেন।

ক্ষমতায় গেলে প্রাদেশিক সরকার গঠন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করতে চাই। চট্টগ্রাম প্রদেশ হবে। আপনারা আপনাদের সুখ-দুঃখ দেখবেন। কারও মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। সাতটা প্রদেশ করবো। চট্টগ্রাম প্রদেশের নাম হবে চট্টলা। যদি আপনার না চান তবে অন্য নাম হবে। কিন্তু প্রদেশ হতেই হবে। একজন মানুষ ১৬ কোটি মানুষকে শাসন করবেন, এটা কোথাও নেই, এটা হতে পারে না।’

বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচার দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘একসময় আমাকে বলতো স্বৈরাচার। কিন্তু মানুষ এখন আর তা বলে না। মানুষ এখনও বলে, এরশাদ সাহেবের সময় ভালো ছিলাম। এখন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে। এখন কি বলবেন? এখন লজ্জায় মুখ ঢাকবেন না, আঁচলে মুখ ঢাকবেন না। লজ্জা তো নেই, সে এখনও বড় বড় বক্তৃতা দেয়। আমরা স্বৈরাচার না, এটা প্রমাণ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। স্বৈরাচার হচ্ছে এখনকার সরকার, বর্তমান সরকার। দুর্নীতিতে পাঁচ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কে? এই দুই সরকার।’

গত ‘২৭ বছরে কিছুই হয়নি এবং সব অন্তসারশূন্য’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার চাই। যেসব নির্বাচন হয়েছে, কারচুপি হয়েছে। এখন তো আর নির্বাচন হয় না। এখন সিল মারা নির্বাচন হয়।’

বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, ‘এখন নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে দেশ। তারা এটা বলে। এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে কয় ঘণ্টা সময় লাগে? আগে লাগতো ৫ ঘণ্টা। এখন লাগে ১৫ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে রংপুর যেতে সময় লাগে ১৫ ঘণ্টা। উন্নয়নের মহাসড়কে এতো খানাখন্দ কেন? এতো খাল-বিল কেন? টাকাগুলো গেলো কোথায়? কার পকেটে গেলো?

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের মহাসড়ক নয়, দুর্নীতির মহাসড়কে চলছে দেশ। দুর্নীতির মহাসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা। উদ্ধার করতে হবে সবাইকে, উদ্ধার করতে হবে দেশকে। এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে উদ্ধার করতে হবে। আমরাই পারবো দেশের মানুষকে উদ্ধার করতে।’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও বলা হয়েছে ব্যাংকের টাকা নেওয়ার কেউ নেই। এখন বলা হচ্ছে ব্যাংকে টাকা নেই। কোথায় গেল এই টাকা? কৃষককে ব্যাংকের ঋণের টাকা দিতে না পারলে জেলে যেতে হয়। কৃষকের বিচার হয়, প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম আসে, এদের তো বিচার হয় না!’

শেয়ারবাজার বলে কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার ধ্বংস। কে ধ্বংস করলো, আপনার জানেন? আরেকটি ঘটনা, যেটা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি, তা হলো ব্যাংক লুট, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট। এটা কোথাও হয় নাই, একমাত্র বাংলাদেশে এটা হয়েছে। ৮শ’ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কীভাবে লুট হলো, কে ডাকাতি করলো, নাম পর্যন্ত বলতে পারলেন না। তার মানে, আপনারা এটার সঙ্গে জড়িত আছেন। না হয় নাম বলেন না কেন? আমরা জানি তারা কে। কিন্তু তারা নাম প্রকাশ করবে না।’

এরশাদ বলেন, ‘শিক্ষা বলতে কিছু নেই। শিক্ষাব্যবস্থায় এখন পচন ধরেছে। আগে পাস করা কঠিন ছিল। এখন ফেল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিপিএ-৫ পাচ্ছে, কিন্তু ইংরেজিতে নিজের নাম লিখতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ঘুষ সহনীয় পর্যায়ে খেতে। বলেছেন, আমরা সবাই নাকি ঘুষ খাই। এরপরও তিনি মন্ত্রী আছেন। কোথায় গেছে দেশ! কোন রসাতলে গেছি আমরা! কোন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা!’

ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে সমাবেশে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সোলেমান আলম শেঠ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।