কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি: সফলতা ব্যর্থতা আর কৃতিত্বের খতিয়ান

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২১ ২০১৯, ১৭:৪৭

[] ওয়ালি উল্লাহ আরমান []

কওমি সনদ স্বীকৃতি প্রসঙ্গে আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক বহুদিনের এবং এটা খুব সহজে থেমে যাবে বলে মনেও হয় না। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, এই স্বীকৃতি এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী সরকারের হাত ধরে। এবং এটাও তিক্ত বাস্তবতা যে, আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থী জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়েও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এই স্বীকৃতি চূড়ান্ত করেনি। এই ইস্যুসহ চলমান যেকোনো সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কেও অধিকাংশের নৈতিক সমর্থন আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির প্রতি। ঠিক এই সমর্থনের জায়গাটাতে এসেই এই প্রশ্ন করা যৌক্তিক যে, এই অন্ধ ভালোবাসা এবং সমর্থনকে বিএনপির যেভাবে মূল্যায়ন করা উচিত ছিলো তার সিকিভাগও কি তারা তাদের সুদিনে করেছে?

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি জায়গায় খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা অনেক অনেক এগিয়ে। আর সেটি হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনমনীয়তা এবং অবিচলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথায় যদি কোন বিষয় আসে, তিনি সিদ্ধান্ত নিতে কারো তোয়াক্কা করেন না। অথচ আমরা বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের তিনটি মেয়াদের বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই তিনি অনেক সিদ্ধান্ত দ্বিধা সংশয়ে ভুগে নিয়েছেন এবং তার দুর্বল সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছে গোটা জাতি। কওমি সনদ স্বীকৃতির বিষয়টি তেমনই একটি সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন হচ্ছে, এর দায়ভার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের উপরে কতটুকু যাবে?
শুনতে তিক্ত হলেও এটি অনেকাংশে প্রমাণিত সত্য যে, বিএনপি বরাবর ইসলামপ্রেমি জনতাকে নিজের রিজার্ভ বেঞ্চ মনে করে তাদেরকে অবমূল্যায়ন এবং অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকে। এর বিপরীতে আওয়ামীলীগ ইসলামপন্থীদেরকে অজ্ঞাত কারণে নিজের প্রতিপক্ষ জ্ঞান করে এসেছে। ইসলামপ্রিয় জনতাও সে কারণে তাদেরকে সন্দেহ এবং সংশয়ের চোখেই দেখতে অভ্যস্ত। ২০০৬ সালে খেলাফত মজলিসের সাথে পাঁচ দফা চুক্তি, আবার ছুড়ে ফেলা এবং সর্বশেষ ২০১৮ এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট এবং খাদেমুল ইসলাম জামাতকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে তারা এই সংশয়ের যৌক্তিকতাও প্রমাণ করে দিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগই ৩০০ ভোটের এমপি দিলীপ বড়ুয়াকে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিত্বসহ হাসানুল হক ইনু এবং রাশেদ খান মেননদের মতো জনবিচ্ছিন্ন, গণধিকৃত ব্যক্তিদের বছরের পর বছর মন্ত্রিত্ব দিয়ে রেখেছিলো।

আমাদের মধ্যে অনেকে ক্ষোভ এবং হতাশা মিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, ২০০১-এ চারদলীয় জোটের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পেছনে আলেম-ওলামা, ইসলামী সংগঠন এবং ইসলামপ্রেমী জনতার বিশাল ভূমিকা ছিলো। অথচ নির্বাচনের পর দেখা গেল ইসলামী ঐক্যজোটকে সরকারে মূল্যায়ন করা হয়নি। স্বচক্ষে দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ইসলামী ঐক্যজোটের মন্ত্রিত্ব প্রসঙ্গে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর সাথে কূটকূটকৌশলী গেম খেলেছিলেন বিএনপি’র প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং হারিস চৌধুরীর মতো ব্যক্তিবর্গ। তাদের দিক থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব এই তিন পক্ষকে উস্কে দেয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, সেই উস্কানিতে পরিণতি না ভেবে আমাদের অনেকে পা দিয়েছিলেন। বিএনপিও এমন ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি ঝামেলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলো যে, একদিকে ইসলামী ঐক্যজোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে একটি মন্ত্রী পদ তার নিজস্ব কোটায় রাখলো, অপরদিকে তাদের দেশি-বিদেশি বন্ধুদের কাছে জবাবদিহিতা থেকে বেঁচে গেলো যে, একজন মৌলবাদীকে কেন মন্ত্রী করা হলো?

এবার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন তো, আসলে মন্ত্রিত্ব প্রদানে ব্যর্থতার দায় এককভাবে বিএনপির, নাকি আমাদের অপরিণামদর্শী নেতৃত্বেরও কিছুটা দায় নিতে হবে?

২০০৫-০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দুই বছরে কওমি সনদ স্বীকৃতির দাবিটি ক্রমে উচ্চকিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের অদূরদর্শী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরকারের সামনে প্রকাশ পেতে থাকে।

কওমি অঙ্গনের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি তথা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর গতিপথ দুই দিকে চলে গেছে। শায়খুল হাদিস রহ. চারদলীয় জোট ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান এবং রানিং এমপি হিসেবে মুফতি আমিন রহ. এর প্রভাব বেড়ে গেছে। যদিও লালবাগ মাদ্রাসা ইতোপূর্বে বেফাক বোর্ডে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বেফাকের দাবী এবং অবস্থান ছিলো সবচেয়ে সুদৃঢ়। কারণ দেশের সিংহভাগ কওমি মাদ্রাসা বেফাক বোর্ড ভুক্ত, যেটি এখনো অনিবার্য সত্য।

স্বীকৃতির দাবি জোরালো হবার সাথে সাথে ‘ক্রেডিট, ‘কৃতিত্ব’ এবং ‘নিয়ন্ত্রণ’ কার ভাগে যাবে, এটা নিয়েও শুরু হয় প্রকাশ্য রাজনীতি।

বেফাকের মধ্যেও পরোক্ষভাবে একাধিক বলয় সক্রিয় ছিলো। মজলিসের তৎপরতা ছিল ক্রেডিট যেন তাদের দিকে যায়। ইসলামী মোর্চা চাচ্ছিল তারা ক্রেডিট নিবে। কিন্তু কওমি সনদ স্বীকৃতি প্রসঙ্গে সবসময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক ও অভিন্ন অবস্থানে ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেব এবং আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব। তাদের তৎপরতা ছিলো ক্রেডিট বেফাকের হাতেই থাকবে, কিন্তু সেখানেও নির্দিষ্ট কোনো বলয় যেন এর নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে। (যদিও ছয় বছর যাবত তাদের চলার গতি ভিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কোনো বৈঠকে তারা দুইজন একমত পোষণ করলে তাদের চেয়ে বড় কেউ সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও সিদ্ধান্ত তাদের কথার উপরেই হয়। উদাহরণ হিসেবে এ বছর বেফাক এবং হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে তারা উভয়ে একমত পোষণ করার পর পদ এবং ব্যক্তি হিসেবে আরো বড় কারও কারও আপত্তি ধোপে টেকেনি এবং পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে)

ওই সময় মুফতি ওয়াক্কাস সাহেবের সাথে সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, আন্তঃবোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছে আমার। কে, কীভাবে নিজের স্বার্থ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে কেমন আচরণ করেছেন, অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছি আমি।

২০০৬ এর আগস্টে শায়খুল হাদিস রহ. সনদ স্বীকৃতির দাবিতে মুক্তাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ততোদিনে তিনি চারদলীয় জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। মুক্তাঙ্গনে তার কর্মসূচিতে সংহতি জানান চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব সৈয়দ ফজলুল করীম রহ.। তবে শাইখুল হাদিস রহ. এর দাবী ছিলো, স্বীকৃতি বেফাকের অধীনেই যেন হয়।

তখনো পর্যন্ত হাটহাজারী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ইস্যুতে নীরবে-নিভৃতে থাকতেন। বরং পটিয়া কর্তৃপক্ষ কওমি সনদসহ আরো অনেক বিষয়ে জাতীয়ভাবে ভূমিকা পালনে সচেষ্ট ছিলেন। হাটহাজারী জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব দেয়া শুরু করে ২০১০ এর পর থেকে।

এদিকে জোট সরকারেরও যেহেতু মেয়াদ ঘনিয়ে এসেছে, তাই যেকোনো মূল্যে তারা সনদ স্বীকৃতি কার্যকর অথবা নীতিনির্ধারণী প্রজ্ঞাপন জারি করে কওমি অঙ্গনের বহুল উচ্চারিত দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে চাইছিলো। কারণ তারা জানতো এই ইস্যুটি ভবিষ্যতে কওমি অঙ্গনে ভোটের হিসাবে তাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিএনপি সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বরাবর পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া অথবা অবস্থানকে ভীত চোখে দেখতো। হয়তো তারা সে কারণে একটি ডাবল গেম খেলতে চেয়েছিলো যে, একদিকে স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন জারি করে কওমি অঙ্গনকে আশ্বস্ত করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রাখবে। আবার পশ্চিমারা আপত্তি উত্থাপন করলে তাদের কাছেও কৌশলী জবাব দিতে পারবে।

এরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মূলক সময়ে জঘন্য ঘৃণ্য খেলা শুরু করলো একটি মহল। চারদলীয় জোটে থাকা কওমি এমপিদের কাছে শুনেছি, বিভিন্ন বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিরা স্বীকৃতি প্রসঙ্গে নেতিবাচক অথবা সংশয়মূলক কথা বলতেন যে, ‘এভাবে নিচের দিকের ধাপগুলো অতিক্রম না করে সরাসরি মাস্টার্স স্বীকৃতি দেওয়াটা কেমন হবে?’ (এ প্রতিক্রিয়া এখনো আমাদের আশপাশের জামাতি ভাই-বন্ধুরা অহরহ দেখিয়ে থাকেন)

প্রভাবশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দার চৌধুরী ছিলেন জোট সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি শেষ মুহূর্তে বেফাকের বাইরে অন্য বোর্ড কর্তাদের এই বলে স্বীকৃতি ইস্যুর জলঘোলা করে দেন যে, ‘আপনারা কেন বেফাকের কর্তৃত্ব মেনে স্বীকৃতি গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিবেন? বরং আপনারা দাবী তুলুন যে, প্রত্যেক বোর্ডকে আলাদা আলাদা স্বীকৃতি দিতে হবে।’

সীমাহীন আফসোস এবং দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, তার এই প্রতারণাপূর্ণ এবং ডাবল স্ট্যান্টের টোপ অন্যান্য বোর্ড সাথে সাথে গিলে ফেলে। বিশেষ মহলের পরামর্শে তারা তারেক রহমানকে খুশি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং তাকে প্রধান অতিথি করে বনানী মাঠে বিশাল একটি সমাবেশও করে ফেলে। ঘটনাপ্রবাহে তারপরের দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে আলেমদেরকে বলা হয়, আপনারা সকল বোর্ড এক হয়ে আসেন।

এখানেও হয়তো বিএনপি দুটি বিষয়ে সংশয় এবং দোদুল্যমান ছিলো। প্রথমত পশ্চিমারা কওমি স্বীকৃতিকে কোন চোখে দেখবে? দ্বিতীয়ত স্বীকৃতি কার্যকর করতে গেলে সংসদে উত্থাপন, বিল পাস, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন এবং নতুন আইন প্রণয়ন করে এটি কার্যকর করা সময়সাপেক্ষ। তারা হয়তো এটাও ভাবছিল যে, আলেম-ওলামারা রাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দাবী করে বসেন কিনা?

সুতরাং চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে কওমি সনদ স্বীকৃতি না আসার দায়ভার বিএনপি’র অদূরদর্শিতা অথবা দোদুল্যমানতা, জামাতের ঈর্ষাকাতরতা নাকি আমাদের অপরিণামদর্শিতা এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব, এটি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলেই আপনার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে, বেফাক এই সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে চাচ্ছিলো না। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উপর সরকারের দমন-পীড়ন এমন নেতিবাচক ভাবনার বড় একটি কারণ হিসেবেই কাজ করছিলো।
কিন্তু যখন দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য তৎপরতায় এমন আশঙ্কাজনক অবস্থার তৈরি হলো যে, দেশের ৯০ ভাগ কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক বেফাককে বাইরে রেখে মুফতি রুহুল আমিন সাহেব এবং মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবের নেতৃত্বে কওমি সনদ স্বীকৃতি কার্যকর হয়ে যেতে পারে। তখন বেফাক তড়িৎ সিদ্ধান্ত পাল্টে এই সরকারের কাছ থেকেই স্বীকৃতি গ্রহণে সম্মত হয়। তাছাড়া সরকার নিজেও জানতো যে, আল্লামা শাহ আহমদ শফি সাহেবকে বাইরে রেখে স্বীকৃতি দিলে সেটি পরিত্যাজ্য, হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়বে। বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ বাদে গোটা কওমি অঙ্গণ তার নেতৃত্বে এবং নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়।

সংযুক্তি……………………
সকল বিতর্কের পরেও এই সত্য অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই যে, বর্তমান সরকার আল্লামা শাহ আহমদ শফি হাফিজাহুল্লাহ এর হাতে কওমি সনদের স্বীকৃতি তুলে দিয়েছে। অনেকে দাবী তুলছেন, বর্তমানে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি হাজিহুল্লাহকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অবসরে পাঠানো উচিত। এটা আসলে আমাদের অদূরদর্শিতা। কেননা, শায়খ বিহীন বাংলাদেশকে কল্পনা করে দেখুন; অনৈক্য ও খণ্ড খণ্ড বাংলাদেশের চিত্র ভেসে উঠবে। বাংলাদেশের জন্য এখনো তাঁকে জরুরী। তাঁকে অবসরে পাঠানোর আওয়াজ না তুলে এটা বলুন যে, তাঁকে যেন সাধারণভাবে প্রকাশ্যে না আনা হয়। এটাই আওয়াজ তুলুন, খুব জোরেশোরে। সাধারণভাবে প্রকাশ্যে না আসলে এসব বিতর্ক আর হবে না ইনশাআল্লাহ।

(একজন ক্ষুদ্র মানুষ হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের নিবিড় দ্বীনচর্চার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু যেহেতু সময়ের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামগণ স্বীকৃতি প্রসঙ্গে অভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন তাদের প্রতি আস্থা এবং আনুগত্যের জায়গা থেকে মনে করছি, হয়তো এর মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে এই বিশ্বাসও আছে যে, যদি ভবিষ্যতে এই স্বীকৃতি আমাদের গলার ফাঁস হিসেবে আবির্ভূত হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আসহাবে সুফফার অনুসরণ যে মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য, নিশ্চয়ই টিমটিম করে হলেও সেই ধারা এই মাটিতে টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ)