ওয়াসিফ ফরিদদের খুঁটির জোর কোথায় : আমাদের দুর্বলতা কই?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৪ ২০১৮, ১৩:১০

 

আরিফ খান সাআ’দ

সম্প্রতি টঙ্গী ময়দানে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এতায়াত গ্রুপের বাংলাদেশ অংশের শীর্ষ নেতা জনাব ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেব সম্পর্কে তাবলিগ জামাতের লোকদের ভেতর দুটো কথা শোনা যায়-
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।
২। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দশ বারো বছর আমেরিকা জার্মানি ও আরবে অবস্থান করেছেন। সেসময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কূটনৈতিক সংগঠরের সাথে কাজ করতন।

উপরের দুটো তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে বলা যায় তাবলিগে তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই ঢুকেছেন এবং বাংলাদেশের তাবলিগ পরিপূর্ণ ভাবে মাটিতে দাফন হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাবেন তিনি। শুরু থেকেই কাকরাইল মারকাযে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ গোলযোগে মূল হোতা হিসেবে তিনি সমালোচিত ও বিতর্কিত একটি চরিত্র।

বাংলাদেশে ইসলামের বিশুদ্ধ ধারার বিস্তৃত কাজে যাদের অবদান তাদের অন্যতম হলো-
১। কওমি মাদরাসার সাথে সম্পৃক্ত জনতা
২। তাবলিগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত জনতা
– কওমি মাদরাসায় বিতর্ক আনার কেন্দ্রীয় চরিত্র জনাব ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সাহেব।
– তাবলিগ জামাতে বিতর্ক আনার কেন্দ্রীয় চরিত্র জনাব ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেব।

আমেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক এই দুই জনেরই অত্যন্ত গভীর এবং তাবলিগ বিতর্কেও রহস্যজনকভাবে দুই জন একই মেরুতে একত্র হয়েছেন। যদিও কৌশলগত কারণে দুইজনই আড়ালে থেকে অন্যদেরকে ফোকাস করছেন। দুই জনই একাধিক বার দেশ দুটো ভ্রমণ করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে। দেশ দুটোর ইশারা কেনো দেয়া হলো বিস্তারিত জানার জন্য প্রাথমিকভাবে পাঠকদেরকে নদওয়াতুল উলামার ড. নজরুল হাফিজ নদভী লিখিত ‘মাগরেবি মিডিয়া আওর উনকি আসারাত’ বইটি পড়ার অনুরোধ করছি। প্রাথমিকভাবে।

টঙ্গী ময়দানে এতায়াত বাহিনীর আক্রমণেও রাশিয়ার কমিউনিষ্টদের মতো প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
১। এতায়াত বাহিনীর সদস্যদের ডান বাহুতে সবুজ রঙের ফিতা ও বাম বাহুতে কালো রঙের ফিতা লাগানো ছিলো।
২। আক্রমণকারীদের গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো ছিলো।
৩। প্রতি দশ জনের একটি করে গ্রুপ ও একজন করে গ্রুপ লিডার ছিলো।
৪। সন্ত্রাসী গ্রুপটি সবার মাথা টার্গেট করে আক্রমণ করেছে।
৫। প্রথমে মুরুব্বিদের কামরা দখলে নিয়েছে।
৬। গোডাউনে আগুন জ্বালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্দ নষ্ট করেছে।
৭। ময়দানের ভেতরে অবস্থিত মাদরাসায়ে উলুমে দ্বীনীয়ার গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কোরআন পাঠরত শিশু কিশোর ছাত্রদের বেদম প্রহার করেছে। মৃত্যুর আতঙ্কে তিন শতাধিক বাচ্চা ছাত্র পালিয়ে মাঠে বেরিয়ে এলে প্রচার করেছে হুজুররা শিশুদের ময়দান দখল করতে নিয়ে এসেছে।
৮। তাদের পক্ষে অডিও ভিডিও ডকুমেন্ট সংরক্ষণের টিম ছিলো। তারা জোর পূর্বক তাদের পক্ষে জবানবন্দী নিয়েছে।

তবে তারা ভুলে গেছে যে, পুরো দৃশ্যপট অন্যরাও ভিডিও করতে পারে। সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধানদের মাথায় এটাও ঘুণাক্ষরেও ছিলো না, আড়াল থেকে ভিডিও হয়ে সেগুলো ভাইরাল হবে। ময়দানকে নিজেদের ফিল্ড মনে করে নিশ্চিন্ত মনে প্রহার কর্ম করেছে। আগে কাকরাইলে এভাবেই তার বাহিনী দিয়ে তার প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেছে, আহত করেছে। সেগুলোর ভিডিও ভাইরাল হয়নি। কিন্তু এটা যে উন্মুক্ত ময়দান! এটা মাথায় রাখা দরকার ছিলো।

তবে গ্রুপটির নেতা জনাব ওয়াসিফুল ইসলামের জন্য এই সামান্য ভুল ভয়ের কারণ না। সময় গড়িয়ে কয়েকদিন পরেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এবং তাবলিগ দাফনের কাজে সচল হতে পারবে। কারণ-
১। হুজুররা রাজপথে আন্দোলন করছে, কিন্তু এই আন্দোলনের কোনো ফলাফল নেই। মামলা না করে হাজার হাজার জনতার মিছিল মরুভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণের মতো। দিনশেষে খালি হাতে ঘরে ফিরে যাবে। মামলা করে একশো জনের মিছিল বের করলেও আদালত সেটাকে চাপ হিসেবে নেয়। হুজুররা হামলা-মামলায় নেই। আল্লাহর কাছ থেকে আজর নিবেন। আল্লাহর কাছ থেকে আজর নিলে খামাখা মিছিল কেনো? ঘরে ফিরে সবর করলেই হয়!

২। উলামায়ে কেরামের সমর্থনপুষ্ট আলমী শুরার তাবলিগওয়ালাদের কোনো আমির নেই। কেন্দ্রীয় আইকন ছাড়া কোনো জামাত বেশিদিন টেকে না। ধীরে ধীরে সবাই শেষ পর্যন্ত এক আমীরে লীন হয়ে যাবে, কেউ টেরও পাবে না। শূরার অধীনেই কাউকে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ঘোষণা দেয়া অনিবার্য। রাসূল সা. যুদ্ধে একজন কেন্দ্রীয় পতাকাবাহী নিশানবরদার রাখতেন। সে শহীদ হলে আরেকজন পতাকা উঁচিয়ে রাখবে। সে শহীদ হলে আরেকজন পতাকা উঁচিয়ে ধরবে। এভাকে একটা আইকন সামনে রাখতে হবে। শুরাওয়ালাদের কোনো পতাকাবাহী আইকন নেই। যা তাদের আছে। ফলে একসময় মেরুদণ্ডহীন বিশাল হক পথের অনুসারীরা হয়ত অস্তিত্ব হারাবে অথবা তাদের সাথে মিলে যাবে।
বিশ্বাস না করতে চাইলেও হয়ত এটাই দুর্ভাগ্যজনক ভবিষ্যত!