ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ : গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ১১ ২০২০, ১৪:১০

এহসান বিন মুজাহির;

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজকের এদিন সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ, হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের ১৭ রমজান ৩১৩ জন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সা.) মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে কাফেরদের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ইতিহাসে এ যুদ্ধকে বদর যুদ্ধ বলে অবহিত করা হয়। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এই যুদ্ধের আগে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে বেশ কিছু খণ্ডযুদ্ধ হয়। কিন্তু বদর ছিল দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম বড় আকারের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে অমুসলিমদের সেনাসংখ্যা ছিল ১০০০। ছিল ১০০টি ঘোড়া, ৬০০ লৌহবর্ম এবং অসংখ্য উট। অমুসলিমদের সেনাপতি ছিলেন ওতবা বিন রবিআ। যুদ্ধে ৭০ জন অমুসলিম নিহত হন এবং বন্দীও হন ৭০ জন।

এদিকে মুসলিম বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর বাকি সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন। মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে: ৭০টি ও ২ টি।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে আবু জাহালের ১০০০ সুজজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৩১৩ জন নিরস্ত্র সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ তা’আলার গায়েবি সাহায্যে আবু জাহেলের বিশাল বাহিনীকে পর্যদুস্ত করেছিলেন অত্যন্ত কঠিনভাবে। বদরের যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর ২৪ জন সরদারের লাশ একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এই যুদ্ধে দু’জন আনসার কিশোর সহোদর হযরত মা’আজ (রা.) ও হযরত মু’আজ (রা.) আবু জাহালকে হত্যা করেছিলেন। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা.) আবু জাহালের মাথা কেটে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট হাজির করেছিলেন।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন। আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহীত ও ৭০ জন বন্দি হয়েছিল। এরা ছিল গোত্রসমূহের সদরদার ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। এ জিহাদে ইসলাম ও রাসূল (সা.) এর ১৪ জন শত্রুর মধ্যে আবু জাহাল, উৎবা ও শায়বাসহ এগার জন জাহান্নামে পৌঁছে যায়। জিহাদ শেষে বদর প্রান্তরে নিয়ম অনুযায়ী ৩ দিন অবস্থান শেষে চতুর্থ দিনে রাসূল (সা.) মদীনার পথে যাত্রা করেছিলেন। এ সময়ে তাঁর সাথে ছিলো বন্দিরা ও গণিমতের মালামাল। আর এসবের তত্ত্ববাবধানে ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব (রা.)। রাসূল (সা.) ছাফরা প্রান্তরে কাফের বাহিনীর পতাকা বহনকারী নজর ইবনে হারেসকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে। বদর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

যেসব পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণে বদর যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল তা হচ্ছে, মদীনায় সফলভাবে ইসলাম ও ইসলামী শাসন সু-প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, সন্ধির শর্তভঙ্গ, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধবংস সাধনের অপচেষ্টা এবং নবীজী (সা.) কে চিরতরে নিচিহ্ন করার অশুভ চক্রান্ত।

বদর যুদ্ধ আমাদেরকে প্রেরণা যোগায়। বদরের চেতনা ছিল আপসহীন। মুসলমানদের হৃদয়ে ছিল ঈমানি বল। বুকে ছিল অসীম সাহস। ভরসা ছিল আল্লাহর উপর।

আসুন আমরা বদরের পবিত্র চেতনাকে বক্ষে ধারণ করে সকল অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে চিরসংগ্রামী হয়ে উঠি। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার তাওফিক দান করুন

লেখক : প্রধান শিক্ষক শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল ও সভাপতি, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।