এ স্বর্গ ছোঁয়া যায় না

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১৬ ২০১৯, ১৫:৩২

সুফিয়ান ফারাবী

মক্কা যাবার পথে আমাদের নিয়ে ছুটে চলা গাড়িটি হঠাৎ মাঝপথে
দাঁড়িয়ে পড়লো। সৌদিতে জালানি সংকট নেই। পুরো তেলের
উপর ভাসমান একটি দেশ। এবং এর উপর ভর করে আজ বিশ্বের
অন্যতম ধনী রাষ্টে পরিণিত হয়েছে সৌদি। এখানকার
গাড়িগুলোর কন্ডিশনও খুব ভালো। সরাসরি জাপান থেকে
আমদানি হয়। তবুও কেন হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে
গাড়িটি দাঁড়িয়ে পড়লো!

এটা দেখার জন্য গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। দেখলাম,
অতিরিক্ত গতিতে চলাচলের কারণে গাড়ির দু‘টো টায়ার ব্রাস্ট
হয়েছে। গাড়ির ড্রাইভার চাকা খুলছেন। আমি
জিজ্ঞেস করলাম, ভাই , গাড়ি সচল হতে কতক্ষণ লাগতে
পারে?
তিনি বললেন, আধঘন্টা সময় লাগবে। আপনারা
কিছুক্ষণ গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা চলা করতে পারেন।
ঠিক হয়ে গেলে আমি আপনাদের ডাকবো।
মুসিবত কখনো কখনো সৈাভাগ্যেরও কারণ হয়।
কখনো কখনো জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়।

আমাদের মুসিবতও বলা যায় একপ্রকার সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগাবো বলে মনস্থির করলাম।
কতো শত হাদিসে মরুভূমির ঘটনা পড়েছি। বিক্ষ্যাত
লেখক “পাওলো কয়েলহোর” বই পড়ে জেনেছি ,মরুভূমির বৈচিত্রের কথা। তিনি
বলেছিলেন,একটা বইয়ের স্তুপ মুসাফিরকে যা শেখায় এর
চেয়ে বেশি শেখায় দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি।

তাঁর সেই কথায় আমার মনে আকাঙ্খা জেগেছিল।
ইচ্ছে হয়েছিল কোন একদিন বৈচিত্রময় মরুভূমির
বৈচিত্রতা দেখবো। আমার আনন্দ হচ্ছিল এই ভেবে ,আজ
সেদিনটি আমার জীবনে এসেছে।
পা বাড়ালাম মরুপ্রন্তরের দিকে। হাঁটি হাঁটি পা পা
করে গাড়ি থেকে বেশ দূরে চলে এলাম। একা একা মরুদ্যান
দেখতে বেরিয়ে এসেছি। শুধু মরুদ্যান নয় , জীবনে যা
কিছু দেখেছি, যেসব সৈান্দরয উপভোগ করেছি সবই
একা করেছি। আর এতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।

কিছুদূর আসার পর দেখলাম, মরুভূমিতে একপ্রকার
প্রণী আছে। দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো। শুধু
আকৃতিতে ছোট। শুধুই ছোট না। অনেক ছোট।
বড়জোড় পাঁচ থেকে সাত ইঞ্চি। সৌদিয়ানরা খায়। খুব
আয়েশ করেই খায়। শরিয়তেও এটা খাওয়া বৈধ। আসহাবে
রাসূলিল্লাহ খেয়েছেন। রাসূল(সাঃ) খাননি। তবে কাউকে
খেতে নিষেধও করে যান নি।

এপ্রাণীর বসবাস বালিতে।
কিন্তু শরীরে বালি লেগে থাকে না। গর্ত থেকে বের হওয়ার
সাথে সাথেই দেহ থেকে বালি ঝরে যায়। মরুভূমিতে
বসবাস হওয়ার কারণে সাধারণত মানুষ দেখে না এ

প্রণীটি। যখনই দেখে, সঙ্গে সঙ্গে লোকচক্ষুর আড়ালে
চলে যায়। প্রণীটির নাম “দাব্ব”। আরবিয়ানরা এরকম
উচ্চারণ করে।

এ জাতীয় আরো যত মরুপ্রাণি আছে সবগুলো বের হয়
রাতের বেলায়। দিনে তেমন একটা দেখা যায় না।
সৌভাগ্যবসত আমি দেখেছি।

শুধু বিষাক্ত সাপগুলো দিনেও বের হয়। এ সাপগুলো এতটাই
বিষাক্ত, দংশনের পাঁচ ছয় মিনিটের মাঝে দংশিত প্রাণির
মৃত্যু হয়। এবং মুখ দিয়ে অনবরত ফেনা বের হতে থাকে।

পৃথিবীতে কয়েক ধরণের মরুভূমির আছে। বালুময়
মরুভূমি, পাথর মরুভূমি, পাহাড়ি মরুভূমি ও উপকুলিয়
মরুভূমি। বলুময় মরুভূমি ও উপকুলিয় মরুভূমির মাঝে
উদ্বিদ থাকে। প্রাণের সংখ্যাও ভালো। তবে পাথর ও পাহড়ি
মরুভূমিতে উদ্বিদ, ঘাস-গাছের সংখ্যা নেই বললেই
যথাযত হবে বলে মনে করি। আমি এখন যেই মরুভূমিতে
আছি এটা উপকুলিয় মরুভূমি। তার মানে এখনও
জেদ্দাতে।

এতক্ষণে প্রায় এক কিলোমিটার চলে এসেছি। যারা
চরে গিয়েছেন তাঁরা জানবেন, বালিতে হাঁটা কতটা
কষ্টকর। “এক কদম সামনে এগুতে চাইলে দুই কদম পেছিয়ে যাই” এরকম
অবস্থা। ক্লান্ত শরীর আর সামনে যেতে চাচ্ছে না। গাড়িও
বোধহয় ঠিক হয়ে গেছে। এমন সময় সামনে এমন
একটা সৈান্দরয দেখলাম যা আগে কখনো দেখিনি। যেন
পৃথিবীর সকল সৈান্দরয তার কাছে সেজদারত।

দেখলাম, বালির উপর পানি থৈ থৈ করছে। সোনালি বালিতে পানি দেখে
মনে হচ্ছিল হাজারো মাণি-মুক্তা ঝলঝল করে জ্বলছে। আবার
উপর থেকে পানি বাষ্প হয়ে আকাশে চলে যাচ্ছে।
প্রকিতিক এই সৌন্দর্য় দেখে মনে হচ্ছিল স্বর্গ বলতে
কিছু নেই। এটাই স্বরগ।

আমি সেই সৈান্দরযকে হাতে স্পরষ করারা জন্য সামনে
অগ্রসর হলাম। এই স্বর্গ আর আমার মাজে দূরত্ব খুব
বেশি হলে এক শ গজ হবে। তার মানে স্বরগের পৈাঁছতে
আমার সময় লাগবে দু‘মিনিট। কিন্তু আমি প্রায় পাঁচ
মিনিট হেঁটে ফেলেছি। তবুও মনে হচ্ছে আরো এক শ
গজ হাঁটতে হবে। আমি আরো তিন, চার মিনিট
হাঁটলাম। তবুও মনে হচ্ছে আরো এক শ গজ দূরে। ঠিক
এমন সময় বুঝলাম সামনে স্বরগ তো দূরের কথা পানিও
নেই। যা দেখছি তা মরীচিকা। প্রচন্ড উত্তাপে বালি
দেখতে পাানি মনে হচ্ছে। এরচেয়ে বেশি কিছু না।
নিজেকে এক অর্থে চরম বোকা মনে হলো।

ধুর, কতো বড় ধোকা-ই না খেলাম। আবার এটাও মনে হলো ,আমি কি
হাতের সামনে স্বরগ পেয়েও ছেড়ে দিলাম!
ইমরাউল কায়েস বলেছিলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন
ধাঁধা হলো মরুভূমি। যার রহস্য মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।