এটাই কি দেওবন্দের আদর্শ?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১১ ২০১৯, ১৪:৫৯

আরিফ জাব্বার

মুফতি জাবের কাসিমী হাফিযাহুল্লাহ্
(সিনিয়র উস্তাদ, জামিয়া ইসলামিয়া তা’লীমুস সুন্নাহ্) বর্তমানে ঢাকার মানিকনগর জামিয়া ইসহাকিয়া মাদরাসায় হাদিসের কিতাব পড়ান৷ সেখানকার ছাত্রদের ভাষ্যমতে তিনি একজন ঈর্ষণীয় গুণাগুণ সম্পন্ন উস্তাদ৷

কিন্তু শুনে আশ্চর্য হয়েছি যে, তাঁকে বারিধারা মাদরাসায় উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ দিতে কাসেমী সাহেব কড়াভাবে নিষেধ করেছেন এবং এটা নাকি কাসেমী সাহেবের ওসিয়ত৷

বারিধারা মাদরাসার কমিটি ও দায়িত্বশীল সকল আসাতিযায়ে কেরামকে ডেকে তিনি বলেছেন যে, আমার ছেলে জাবের, তাকে আপনারা কোনোদিন বারিধারা এবং সোবহানিয়া-আমার এই দুই মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিবেন না৷

হুজুরের কথা শুনে বারিধারা মাদরাসার বর্তমান নায়েবে মুহতাতিম মাওলানা নাজমুল হাসান সাহেব বললেন: হযরত! আপনার জীবদ্দশায় আমরা জাবেরকে আনবো না৷ তবে আপনার ইন্তেকালের পর আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচার মাধ্যমে সুরাহা করবো৷

তখন কাসেমী সাহেব রাগান্নিত হয়ে বললেন, যদি আপনারা কোনোদিন জাবেরকে আমার দুই মাদরাসায় নিয়ে আসেন, তাহলে আমি ইংদাল্লাহ এটার জন্য মুআখাযা করবো৷ কিয়ামতের দিন আপনাদেরকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবো৷

যখন বাংলাদেশের সকল উর্ধ্বতন উলামায়ে কেরাম, যারা কওমী অঙ্গনের মুক্বতাদা বনে বসে আছেন, তারা নিজ ছেলেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে গিয়ে তাদেরকে উচ্চ পদে বসানোর পায়তারা করে যাচ্ছেন, যার দরুণ দেশের সুউচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো নানারকম সমস্যা জড়িতাবস্থায় শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার৷ এমন সময় কাসেমী সাহেবের এই কঠোর অবস্থান দেখে যে কোনো চিন্তাশীল ব্যক্তির বিবেক নাড়া দিয়ে উঠবে৷

কাসেমী সাহেব আরো বলেন, আমি আমরণ দ্বীনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছি খালেস খেদমতের মাকসাদে৷ ভিন্ন কিছুর আশা কখনো লালন করিনি৷

আমার ছেলে যদি যোগ্য হয়ে থাকে, আল্লাহ তা’আলা তাকে দিয়ে দ্বীনের খেদমত নিবেন৷ আমি দোআ করি আমার ছেলে বারিধারার মতো আরো কয়েকটি মাদরাসা কায়েম করুক, কিন্তু আমার উপর ভর করে উন্নতির আশা করুক তা আমি কখনো চাই না৷

আমি চেষ্টা করি পদে পদে দেওবন্দের নিঃস্বার্থ অনুকরণ করতে৷ অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করে বলে থাকেন, হুজুর আপনার ছেলেকে যোগ্যতার ফলেই তো এখানে আনা হচ্ছে, নিছক আপনার ছাহেবজাদা হিসেবে তো আসছেন না, তাহলে এখানে আপনার দ্বিমত পোষণে যথার্থ কারণ কী?

আমি তাদেরকে লক্ষ্য করে বলি, দারুল উলূম দেওবন্দের আসাতিযায়ে কেরামদের কোনো ছেলে/আত্বীয়-স্বজন যতো যোগ্যই হোক না কেন তারা কি দারুল উলূমে উস্তাদ হিসেবে আসতে পারবেন??
কষ্মিন কালেও না৷

আজ দেশের প্রতিটি স্থানে যেমন উত্তরাধীকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি চলে, আমাদের অঙ্গনেও যদি অনুরুপ অবস্থা হয়, তাহলে তা বড়ই পরিতাপ ও আফসোসের হবে৷

রাসূল সাঃ এর কোনো পুত্র সন্তান যৌবনে পদার্পণ না করার পেছনে খোদায়ী হিকমত সবাই বয়ান করি, কিন্তু নিজের ছেলেকে স্বপদে অধিষ্ঠিত করার সময় ফেতনা ফাসাদের কথা কি একবারো যেহেনে আসে?

নিজেকে দেওবন্দী মানহাজের আলেম বুক ফুলিয়ে সবাই দাবী করি৷ তবে প্রশ্ন হলো, এটাই কি দেওবন্দের আদর্শ?