এক অশীতিপর আলেমের সংগ্রাম : আরেকটি সংগ্রামের ডাক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৬ ২০১৯, ১৪:০০

হাবীব আনওয়ার: শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী অশীতিপর বৃদ্ধ এক ব্যক্তিত্ব। সর্বজনশ্রদ্ধেয় ধর্মগুরু তিনি। ইসলামের সমসাময়িক ইতিহাসে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, অবিস্মরণীয়।
তাঁর বয়সের মানুষ সমাজে খুব একটা নেই। এই বয়সে মানুষের কথাবার্তা কিছুটা অগোছালো হয়ে যায়। এটা তাঁর ত্রুটি নয়৷ বরং এই বয়সেও ধর্ম ও মানবতার জন্য সমান তালে কাজ করে যাওয়া তাঁর আত্মনিবেদনের এক ঈর্ষণীয় নমুনা ৷ শতবর্ষের কাছাকাছি বয়সে এসেও তিনি দেশের মানুষের কথা ভাবেন, মাহফিলের সভাপতির আসনে বসে শ্রোতাদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন, এ এক উজ্জ্বল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ৷

বার্ধক্যজনীত কারণে সেদিন হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে তিনি তাঁর কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারেননি, তবে তিনি যা বলেছেন সঠিক ও সময়োপযোগী কথাই বলেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্লামা আহমদ শফীর অগোছালো সেই বক্তব্যকে আমাদের মিডিয়াগুলো এমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপস্থাপন করলো যে, সারা দুনিয়া জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, এতে মিডিয়া মোড়লদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। ফলাফল হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। যা আমরা দেখতে পাচ্ছি বিবিসির চালানো এক জরিপে। তিনি যা বলেছেন তার উপর দেশের ৯৫% মানুষ যে একমত এর প্রমাণ মিলেছে তাঁর উক্ত বক্তব্য নিয়ে করা বিবিসি বাংলার সেই জরিপে।

মজার ব্যাপার হলো, সূবর্ণচরের বর্বরোচিত গণধর্ষণের ঘটনায় যারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল, তাদের আধমরা বিবেকও সেদিন জেগে উঠল! বিভিন্ন জায়গায় ১৫/২০ জন মিলে মানববন্ধন করল আর মিডিয়া একে বিশাল মানববন্ধনে রূপ দিল। পক্ষান্তরে আমিরে হেফাজত তার বক্তব্য নিয়ে যখন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন, তখন মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচারের কথা বেমালুম ভুলে গেল! তবে আশার কথা, মিডিয়ার এই দ্বিমুখী আচরণ জনসাধারণের কাছে আরও আগেই ধরা পড়ে গেছে ৷

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও
ইউএনএফপির মতে, বিশ্বে ৮৯টি দেশের মধ্যে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার দিক থেকে পাপুয়া নিউগিনির অবস্থান এক নম্বর আর বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় ৷
(সূত্র; দৈনিক কালের কণ্ঠ ২৫ মার্চ, ২০১৬)

ধর্ষণের খবরে বছর শুরু হওয়া একটি দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন দরদী অভিভাবক আল্লামা আহমদ শফী কর্তৃক নারীদের নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার
দাবীকে যারা রং মাখিয়ে সমালোচনা করছেন, কথিত নারী অধিকারের নামে জ্বলে উঠছেন তাদের মতলব ভালো নয় ৷ নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রায় ৯০% মুসলমানদের এই দেশে আজ মানবতার চরম অসভ্য আচরণ নারী নির্যাতনের এই ভয়াবহ চিত্রের কারণসমূহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সহশিক্ষাও একটি ৷ যা আদৌ ইসলাম সমর্থন করে না ৷ মূলত এই কথাটিই বলতে চেয়েছেন তিনি ৷ অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যায়, আল্লামা আহমদ শফীর সমালোচনা করে ওরা মূলত ইসলামের শ্বাশত পয়গামকেই সংকুচিত করতে চায় ৷ যে চাওয়া কখনও পূরণ হবার নয় ৷

অধুনা সরকার স্বীকৃত কওমী শিক্ষাকমিশন আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী দাওরা পরীক্ষা দিয়ে মাস্টার্সের সনদ লাভ করছে ৷ সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত পন্থায় পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশের কওমী মহিলা মাদরাসাগুলোতে ৷ যে কারণে নারী ঘটিত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখা যায় না ৷ তাই কওমী মাদরাসা শিক্ষাকমিশন আল হাইয়াতুল উলইয়া’র চেয়ারম্যান হিসেবে আল্লামা আহমদ শফীকে এদেশে নিরাপদ নারীশিক্ষার অগ্রদূত বলা যায় ৷ তাঁর মতো একজন বয়োজৈষ্ঠ সচেতন নাগরিক দেশে নারী নির্যাতনের এ ভয়াবহ চিত্রে শংকিত না হয়ে পারেন না ৷ তাঁর এ দাবী শুধু যৌক্তিকই নয়, প্রশংসনীয়ও বটে ৷ কেবল তাঁর মুখেই এ দাবী শোভা পায় ৷ কারণ তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষাবোর্ড থেকে উত্তীর্ণ লাখো আলেমের মধ্যে একজনের নামেও কোন আদালত নারী নির্যাতনের মামলা দেখাতে পারবে না কেউ ৷

দুই.
আল্লামা আহমদ শফী বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি দেশের সর্ববৃহৎ মাদরাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক। দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির। কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সভাপতি ও সরকার স্বীকৃত কওমী শিক্ষাকমিশন হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান। বিশেষত তিনি মুসলিম উম্মাহর অন্যতম রাহবার। যে কারণে এটা স্বাভাবিক যে, বাতিল শক্তিগুলো সবসময় তাঁকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে। তাঁর যে কোন বক্তব্যের তিলকে তাল বানিয়ে মানুষের কাছে উপস্থাপন করবে। তাই, যারা সবসময় তাঁর আশপাশে অবস্থান করেন, তাদের একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

তিন.
সারাদেশে এখন ধর্ষণের মহোৎসব চলছে। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ধর্ষণের খবর ছাপা হচ্ছে। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ মুক্তি চায়। আদরের কন্যাকে ঘর থেকে বাহিরে পাঠিয়ে একটু নিশ্চিন্ত থাকতে চায়। কিন্তু কেউ এ নিয়ে মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না। এর কারণ, প্রথমত লজ্জা আর দ্বিতীয়ত অধিকাংশ ধর্ষক ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ৷ যদ্দরুণ নিজেদের জানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই সবাই নিশ্চুপ ৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ, অশ্লীলতা, মাদক ও সহশিক্ষার বিরুদ্ধে ইসলামের আলোকে যদি একটি গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়, তাহলে মানুষ যথেষ্ট সাড়া দিবে। কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন হলো, দেশের ক্রান্তিকালে হেফাজত কি কাঁধে নিবে এই গুরু দায়িত্ব?

সম্পাদনা: ইলিয়াস সারোয়ার