একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল, অসহনশীল প্রতিক্রিয়া

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২১ ২০১৮, ০০:৩৬

মাহমুদ মুজিব: বিগত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সোমবার জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ায় ‘সুচিন্তা বাংলাদেশ’ নামক সরকার সমর্থিত একটি সংগঠন বিভিন্ন মাধ্যমে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ‘জংগীবাদবিরোধী একটি সমাবেশ করে। শুরু থেকেই তাদের সাথে কথা ছিলো, আমাদের মাদরাসায় জাতীয় সংগীতের চর্চা নেই, তাই আমরা জাতীয় সঙ্গীত পড়তে পারবোনা। তারা তা মেনেও নেয়। সে অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াতের পরই হঠাৎ তাদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত ঘোষক জাতীয় সংগিত পাঠের ঘোষনা দেয়। এবং কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মোবাইল সেট থেকে মিউজিকসমৃদ্ধ সংগিত বাজাতে শুরু করে। ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে অনেকটা বাধ্য হয়ে দাড়িয়ে যান।
ঘটনা এতটুকুই। হ্যাঁ, এখানে কেউ মিউজিকের প্রতিবাদ করেননি। সন্দেহ নেই এটি দূর্বল ঈমানের পরিচায়ক। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে অপ্রস্তুত অবস্থায় যে বিষয়টি বিবেচনায় এসেছিলো তা হলো-

১- বিষয়টি যেহেতু জাতীয় সঙ্গীতের, তাই তখন মিউজিকের প্রতিবাদ করলে ওরা মিডিয়াতে জাতীয় সঙ্গিতের অবমাননা বলেই চালিয়ে দিতো তাতে কোন সন্দেহ নেই।
২- স্টেইজে বসা সিএমপি পুলিশ, চান্দগাও থানা পুলিশ ও প্রভাবশালীদের উপস্থিতিতে আরো বড় কোন ঝামেলা তৈরী হোক, যার খেসারত হয়ত পুরো কাওমী অঙ্গনকে দিতে হতো তা কেউ চান নি।
হ্যাঁ, আমাদের এই বিবেচনা ভুল হতে পারে, তবে তা ছিলো সম্পুর্ণ অপরিকল্পিত, অনাকাংখিত ও অসতর্কতাপ্রসূত। সর্বজ্ঞানী, অন্তর্জামী আল্লাহ তা’আলা সব দেখেছেন এবং কর্ম-ক্রিয়া সম্বন্ধে ভাল জানেন। তারপরও মানুষের কাছে জবাবদিহিতার আগে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে এ ভুলের জন্য তাওবা করছি। আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা পাওয়াই আমাদের প্রধান চাওয়া।

এবার আসি এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়। যেহেতু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার মতোই একটি ঘটনা ঘটেছে সেহেতু হাজারো আবেগ আহত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই ভাষা অত্যন্ত কর্কশ, জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য হলেও সমালোচনাগুলো আমরা প্রায় মেনেই নিয়েছি। সবার কাছে আমরা ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছি। তবে আমাদের চাপা কান্নাটাও একটু মাথায় রেখে যা বলার ও করার করুন।

*
কেউ কেউ অনুষ্ঠানের অনুমতি বিষয়ে ব্যক্তিবিশেষকে দোষছেন। বিষয়টি এমন নয়। মূলত প্রোগ্রামটি জামেয়ার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা মুহাম্মদ ফুরকানুল্লাহ খলীল, সহকারী পরিচালক শায়খ ড. জসিম উদ্দীন নদভী ও শিক্ষাপরিচালক শায়খ শহিদুল্লাহ কাউসারসাহেবসহ মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের অবগতি সাপেক্ষে হয়েছিলো। তবে উনারা অনুষ্টানটি যে এ পর্যায়ের কিছু হবে তা আঁচ করতে পারেননি।
**
অনেকেই টাকার লেনদেনের কথা বলছেন। হয়তো কারো কাছ থেকে শুনে বা প্ররোচনা পেয়ে। তা কি একবারের জন্যও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যাচাই করে দেখেছেন? (كفى بالمرء كذبا أن يحدث بكل ما سمع)

***
গ্রেটওয়াল প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে,
গ্রেটওয়াল বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব এখানে নেই।
তবে হ্যা, অনেক দিন আগে মাদরাসার পার্শবর্তী খাল পরিস্কার করার সময় একটি গাইড ওয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রায় তিন বছর আগে সিটি মেয়র মহোদয় এটি পুণ:নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যা এখনো বাস্তবায়ন হয় নি। কোন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনও পায় নি। এখন কেউ যদি ‘গাইড ওয়াল’কে 60/70 লাখ টাকার ‘গ্রেটওয়াল’ অনুমোদন নিয়ে দেওয়ার ক্রেডিট নিতে চেষ্টা করে থাকেন তবে তা ডাহা মিথ্যা বৈ কিছুই নয়। আর বিষয়টি যাচাই না করে এভাবে ফলাও করে প্রচার করা يا أيها الذين آمنوا إن جاءكم فاسق بنبأ فتبينوا أن تصيبوا قوما بجهالة فتصبحوا على ما فعلتم نادمين এর পর্যায়ে পড়ে কিনা ভেবে দেখবেন।

সবার প্রতি অনুরোধ, আমাদেরকে নসীহত করুন। ভুল ধরিয়ে দিন। সমালোচনা করুন। তবে ইনসাফের সীমারেখা অতিক্রম করবেন না (ولايجرمنكم شنآن قوم على أن لاتعدلوا، اعدلوا هو أقرب للتقوى)।
আমাদের অপরাধ প্রচার করতে গিয়ে আপনারা ভুলধারণা, ‘অপবাদ’ বা ‘গীবত’ এর অপরাধে জড়িত হচ্ছেন না তো?
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ )
আমাদের কমন শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন কি না নিজেকে একটু প্রশ্ন করুন। (لاتشمت بي الأعداء)
নানুপুরের বিষয়টিকে আমরা এভাবেই যতটুকু পারা যায় আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছি।

বিঃদ্রঃ যারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন, বিপদে পড়া ভাইকে যে কোন ভাবে জবাই করাটাই একমাত্র সমাধান তাদের জন্য এ লেখাটি প্রযোজ্য নয়।

-মাওলানা মাহমুদ মুজিব, শিক্ষক, দারুল মা’রিফ চট্রগ্রাম।