একজন আল্লামা ইকবাল এমনি এমনি তৈরি হয় না

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ২১ ২০১৯, ২০:০৪

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

আল্লামা ইকবাল জন্মেছিলেন পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে। তাঁর মাতৃভাষা ছিল পাঞ্জাবী, যদিও তাঁর পূর্বপুরুষরা কাশ্মিরী ব্রাহ্মণ ছিলেন বলে জানা যায়। অথচ দেখুন তিনি যখন সাহিত্য চর্চা করলেন তখন তা করলেন মূলত ফারসি ও উর্দু জবানে। পাঞ্জাবি ভাষায় তাঁর লেখা যৎসামান্য। মাতৃভাষা পাঞ্জাবিতে না লিখে তিনি যে ফারসি, উর্দু এবং ইংরেজী ভাষায় লিখলেন এতে তাঁর যেমন কোন সমস্যা ছিল না তেমনি পাঞ্জাবীদেরও কোন আপত্তি ওঠেনি। কারণ ফারসি ও উর্দুকে তারা উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য মহৎ সাহিত্য ও চিন্তার ভাষা হিশেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন।

এছাড়া একজন মুসলিম হিশেবে তিনি শিশু বয়স থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কুরআন পাঠ ও অধ্যয়ন করেছিলেন। তাঁর পিতা তাঁকে শিশু বয়সেই কুরআন ও আরবি ভাষা এমন মনোযোগের সঙ্গে পড়তে বলেছিলেন যেন তাঁর কাছে মনে হয় যে কুরআনের সঙ্গেই তিনি কথা বলছেন। পরবর্তীকালে যোগ্য আলেমের তত্ত্বাবধানে ইসলামী তালিমও নিয়েছিলেন তিনি।

ব্রিটিশ ভারত উপনিবেশের একজন নাগরিক হিশেবে তিনি ইংরেজী শিক্ষাও গ্রহণ করেছিলেন। ইংরেজী ভাষা ভালমত শিখেছিলেন। ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। ব্যারিস্টারও হয়েছিলেন। এরপরে পিএইচডি গবেষণার জন্য জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো জার্মান ভাষাও কিছু না কিছু শিখতে হয়েছিল তাঁকে।

এই নিবিড় ও বহুমুখী ভাষা ও জ্ঞান শিক্ষার ফসল হলেন কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল। এর ফলে আমরা তাঁর কাছ থেকে উচ্চমানের ফারসি ও উর্দু ভাষায় কাব্য ও দর্শনের মিশ্র রচনা যেমন পেয়েছি তেমনি পেয়েছি চোস্ত ইংরেজী ভাষায় লেখা তাঁর অনবদ্য দর্শন, ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ক নবভাষ্য ‘রিকন্সট্রাকশন অফ রিলিজিয়াস থ্যট ইন ইসলাম’ গ্রন্থটি।

একজন বড় মাপের মনীষা তৈরি হবার পেছনে থাকে এইরকমের নিবিড় ও বহুমুখী পঠনপাঠন, অধ্যয়ন ও বিচিত্র ভাষা ও জ্ঞানার্জনের প্রেক্ষিত। এমনি এমনি এসব হয় না। এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে।