উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হব: পীর সাহেব চরমোনাই

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৮ ২০২০, ১৫:৪৭

চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করে ভিনদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সামাজিক ও ধর্মীয় অস্থিতিশীলতা তৈরী করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।

এসময় তিনি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এবং মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং মানবমূর্তি বা ভাস্কর্য নিয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিকে দেশ বিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আজ (৮ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।

পীর সাহেব বলেন, সরকার যেখানে প্রতিবাদ সমাবেশের অনুমতি দিয়ে যৌক্তিক আলোচনা ও মতামতের পরিবেশ সংযমের সাথে বজায় রেখেছে সেখানে জনবিচ্ছিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণিটি উলামায়ে কেরামকে সন্ত্রাসী ভাষায় গালিগালাজ করছে, ঢালাওভাবে অপবাদ দিচ্ছে। মাহফিলের মতো ধর্মীয় সংস্কৃতিকে উগ্রপন্থায় প্রতিহত করার ঘোষণা ও রাজপথে সন্ত্রাসী কায়দায় উগ্র বক্তব্য ও শ্লোগান দিচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। আইন অমান্য করে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে আলেমসমাজকে মারধর, অপমান এমনকি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এহেন পরিস্থিতিতে আমরা পরিষ্কার করে জানাচ্ছি যে, উলামায়ে কেরামের দাবীর মধ্যে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোন বিদ্বেষ ছিলো না, অসম্মানও ছিলো না। বরং বিষয়টি ছিলো দেশের প্রায় ৯২% জনগণের বোধ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মূর্তি স্থাপন না করে অন্য কোন পন্থায় তাকে স্মরণ করার দাবী।

আলেমসমাজ ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনগণ এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে নিজেদের প্রাণের আকুতি তুলে ধরতেই পারে। এই যৌক্তিক দাবীকে কেন্দ্র করেই তারা তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত মূর্তি প্রীতি ও বিজাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরামকে অপদস্থ করার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এসব কোন দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও তার পরিবার ৭১ সালে একনিষ্ঠভাবে মুক্তি সংগ্রামের সহযোগী ছিলেন। তার দরবার ছিলো এলাকার সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের আশ্রয়স্থল। বিষয়টি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সর্বজন বিদিত। যারা এ বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তামাশায় পরিণত করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

পীর সাহেব বলেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি ইস্যুতে চরম উস্কানীর মুখেও দেশের শান্তি ও স্থিতিশিলতা বজায় রাখার স্বার্থে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সীমাহীন ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু এরই মাঝে গতকাল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি ভূইফোড় সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের নামে একটি জঘন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। সঙ্গে আরো দুইজন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হকের নামেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু মনে করিনি। যে কারণে ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি মাত্র।

ক্ষমতাসীন সরকার এবং তাদের সুবিধাভোগী উগ্র সমর্থকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ ঐক্যবদ্ধ। শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মানুষের ধৈর্য্যেরও একটা সীমা আছে। আমরা অনেক অপমান সহ্য করেছি। সরকার যদি তাদের সুবিধাভোগী উগ্র সমর্থক এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী শক্তিগুলোর বাড়াবাড়ি ও উস্কানীমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশপ্রেমিক জনতা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।

মূর্তি স্থাপন করে শেখ মুজিবকে স্মরণ করা মানে মুসলিম রাষ্ট্রনায়ককে ইসলামের আলোকে দাফন কাফন না করে বিধর্মীয় পন্থায় তার শেষকৃত্য করার মতই নিন্দনীয় কাজ বলেও জানানো হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী ও আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেএম আতিকুর রহমান, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, বরকত উল্লাহ লতিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, জিএম রুহুল আমীন, মাওলানা খলিলুর রহমান, এডভোকেট একেএম এরফান খান, ছাত্রনেতা এম হাছিবুল ইসলাম, নুরুল করীম আকরাম, এডভোকেট আবদুল বাসেত, শ্রমিক আন্দোলন নেতা শহিদুল ইসলাম কবির, যুবনেতা ইলিয়াস হাসান প্রমুখ।