উন্নত ও মানবিক সমাজের উপমা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ২৬ ২০১৮, ০৫:৫৫

খতিব তাজুল ইসলাম ● ইউরোপ আমেরিকার কথা আসলেই আমরা বেহায়াপনার আতংকে ভোগি। মদ জিনা জুয়া এবং বেহায়াপনা এই কটি জিনিসই আমাদের চোখের সামনের ভাসে সারাক্ষণ। সত্যিকার অর্থে অধিকাংশ মুসলিম দেশসমূহে সবকটি অসুস্থতা বিদ্যমান। ওরা জায়েজ মনে করে আর মুসলমানরা নাজায়েজ জেনে করে। মদ জিনা জুয়া আর বেহায়াপনা এখন মুসলিম দেশে ওপেন কারবার। সুদের সাগরে মুসলিম জনপদ আজকাল ভাসছে। কলেজ বিশ^বিদ্যালয় গুলো জিনার চাদরে ঢাকা। তাহলে যে দোষ বিজাতীয়দের আমরা দেই সেই অসুস্থতায় তো মুসলমানরাই খোদ অসুস্থ। তসলিমা নাসরিন জরায়ূর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। জরায়ুর স্বাধীনতা কি এই বিশে^ কোথাও নেই? আছে সবখানে আছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জরায়ুর স্বাধীনতা ভোগ করে নারীরা বেজায় বিরক্ত। পুরুষরা কেবল ভোগের স্বাধীনতা লাভ করে। নারী ভোগের স্বাধীনতা পেয়ে পুরুষের জন্য দরজা খোলে আর বিপদ ডেকে এনেছে তারা তাদের নিজেদের জন্য। আমি কোন ভিনগ্রহ থেকে কথা বলছিনা। বলছি প্রত্যক্ষ ভাবে একটি জরায়ুর স্বাধীনতার দেশ থেকে। তসলিমা মূলত মুসলিম বিদ্বেষীদের মুখপত্রের কাজ করছেন। জরায়ুর আজাদী বলতে আসলে কি তা পশ্চিমা নারীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যাস্ট মুসলিম সমাজে জরায়ূর স্বাধীনতার বিস্তার ঘটিয়ে তসলিমা বিদেশীদের পক্ষলম্বন করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমাদের চোখের সামনে হাজার হাজার নারীরা জরায়ূর স্বাধীনতা ভোগ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ক্রন্দন করছে সেখানে তসলিমা যে খোয়াব দেখাচ্ছেন সেটা বেশ পুুরনো স্যাক্যালে বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে।

পরে যা বলতে চাচ্ছি তা হলো উন্নত সমাজ বিনির্মাণের মূল বিষয় বস্তু কি? আমরা সাধারণত বলি যে ইউরোপিয়রা ভোগের সমাজে বসবাস করে। বাংলাদেশের বড় বড় লেখক কলামিস্ট চিন্তাবিদদের ভাষা আর কথায় বার বার সে কথাই ফুটে উঠে। আমি ইনসাফের উপর থেকে যদি কথা বলি তাহলে বলবো মুসলিম সমাজটাই আজ ভোগের সমাজে রূপান্তরিত হয়েগেছে। ভোগ মানে বিলাসিতা, সম্পদের অপচয়। সম্পদের অপচয়ের ক্ষেত্রে আরব রাজা বাদশাহ আর শাইখদের উপমা রূপকথাকে ও হারা মানায়। ঠিক তদ্রুপ বাংলাদেশের এলিট সমাজের কথা ভাবুন। যারা গুলশান বনানি উত্তরায় বসবাস করে। যারা মন্ত্রী এমপি মেজর জেনারেল। যারা সরকারি বড় বড় পদ দখল করে বসে আছে। যারা শিল্পপতি তাদের জীবন ধারার দিকে লক্ষ্য করুন। দেশের সাধারণ মানুষের জীবন ধারা থেকে সম্পুর্ণ আলাদা। এমনকি জীবনের মৌলিক অধিকার টুকু সাধারণ নাগরিকগণ যেখানে পায়না সেখানে তারা আরাম আয়েশের সর্বোচ্চ সুপানে বসবাস করে। এবার আসুন দেখি ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থা কেমন?

অপচয়কারীগণ শয়তানের ভাই! আল্লাহর কালামের এই বাক্যের দিকে একবার তাকাই আর তাকাই বৃটেনের সমাজ ব্যবস্থার দিকে। যারা রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ থেকে ঝরা পাতা খুটে খুটে নেয়। বোতল কেন কাগজ লাকড়ি সহ সকল ফেলে দেয়ার মত যত জিনিস যা আছে সবই তারা আহরণ করে। রিসাইকেলিং সিস্টেমের মাধ্যমে পুণরায় প্রক্রিয়াজাত করে প্রতিটি জিনিস আবার ভিন্ন রূপে ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলে। যে জাতি টয়লেটের বজ্রসহ পানি এক লাইন দিয়ে নেয়, সমান ভাবে কিচেনের পানি অন্য পাইপ দিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে জলাধারে নিয়ে আবার ব্যবহার উপযোগী করে তুলে। জবাই কৃত পশুর রক্ত ময়লা আবর্জনা কোথায় রাখবেন, দৈনন্দিন ঘরের আবর্জনা কোথায় ফেলবেন, রাস্তাঘাটের আবর্জনা কোথায় রাখবেন সবি বণর্ননা করা আছে। হাসাপাতালের বজ্রের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা। গাড়ি গ্যারেজ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির বজ্রের জন্য কঠোর ভাবে নিয়ম রাখা আছে। আমি মনে করি বৃটেনের শুধুমাত্র ফেলে দেয়া বজ্রের জন্য যে নিয়ম কানুন এবং ব্যবস্থাপনা আছে সেটা বাস্তাবায়িত করতে বাংলাদেশের আরো ৫০০ শত বছর সময় লেগে যাবে। এটা কি ভোগের অংশ? না জনগণের নিরাপত্তার মৌলিক অংশ? শুধু কি তাই? যানবাহন এবং রাস্তাঘাটের যে নীতিমালা আছে তা বাস্তবায়ন বাংলাদেশ আদৌ করতে পারবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ। গাড়ির কালো ধোয়াই হলো কেন্সার সহ নিঃশ^াস জনিত সকল কঠিন রুগের উপলক্ষ। ওরা মদ মাদক থেকে বেরিয়ে আর সুস্থ সেক্সুয়াল জীবনে যদি ফিরে আসতে পারতো তাহলে কোন রুগ বালাই কিছুই থাকতোনা তাদের সমাজে। বিষাক্ত বজ্র আর কালো ধোয়ার কি নিয়ম আছে দেশে? থাকলে তা কেউ মানে? বিষাক্ত বাতাস পানি মাটি নদি নালা খাল পুকুর হলে কি অবস্থা হবে বা হচ্ছে তা মনে হলে গা শিহরিয়া উঠে। ঈমান ও আমলের ওয়াজতো ঠিকই চলছে সাথে সমান ভাবে চলছে ওজুর পানি নষ্ট করার মহড়া। কেউ যদি বলে আল্লাহ আল্লাহ করলেই হলো! বাবা এতো কিছু দেখার কি দরকার? তাহলে গোটা সমাজ যখন টয়লেটের পরিবেশ হবে, নালা নর্দমার গন্ধে কোথাও সুস্থ বাতাস আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা তখন নামাজ পড়বেন কোথায়? মানসিক ও শারিরিক পঙ্গুত্ব বরণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় যে আর থাকবেনা।

ঔষধে মারাত্মক ভেজাল, খাদ্যে মারাত্মক ভেজাল। এমনকি আজকাল শোনা যায় পাকা ঘর বানাতে কমদামি বাজে সিমেন্ট দালালরা বিক্রি করে। তাতে নতুন বিল্ডিংগে ধরে ফাটল, নতুন পুল ভেংগে যায়। এভাবে সমাজের পরতে পরতে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজমান। আমরা যাদের ভোগের সমাজ বলে দোষারোপ করছি তারা তাদের রাস্তাঘাট খাল বিল নদি নালা, খাদ্য ও ঔষধ, যানবাহন, ঘরনির্মাণ সহ সব জাগায় নিরাপত্তা বহাল করেছে। সাধারণ মানুষকে পংগুত্ব বরণ থেকে হেফাজত করেছে। শুধু কি তাই? তারা তাদের বিচার ব্যবস্থাকে ইনসাফের উপর কায়েম রেখেছে। প্রতিটি নাগরিকের ঘরের নিরাপত্তা দিয়েছে। তারা দিয়েছে প্রতিটি শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পুর্ণ গ্যারান্টি। আমরা আমাদের সমাজকে কি দিলাম? তারা ভোগ করছে ঠিকই কিন্তু নিজেরে দেশের নাগরিকদের সকল সুবিধা দিয়ে। আর আমাদের লিডাররা ভোগের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে বানিয়েছে গিনিপিগ। আমাদের সমাজ এতো অসচেতন যে সাধারণ নাগিরিক সে জনেই না যে রাষ্ট্র থেকে তার কি কি পাওনা আছে? ইউরোপ আমেরিকা কি আমাদের হাত পা ধরে রেখেছে? না আমাদের মগজে কোন ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে যাতে সুস্থ উন্নত সমাজ নিয়ে ভাবতে না পারি? স্বাধীনতার সুফল তো তখনই ভোগ করতে পারবো যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক অন্তত তার জীবনের মৌলিক অধিকার টুকু কিছু না কিছু হলেও ভোগ করতে সক্ষম হবে।

তাজুল ইসলাম । লন্ডন ২২ মার্চ ২০১৮