ঈদ উদযাপনে শরীয়তের নির্দেশনা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১০ ২০১৯, ১৭:৫৮

মাওলানা জুনাইদ আহমদ জুনেদ

ঈদ অর্থ খুশি বা আনন্দ। তাই ঈদ আসলেই আমরা খুশিতে মেতে উঠি। আর এটাই স্বাভাবিক। আমরা যেহেতু মুসলমান, সেহেতু আমাদের খুশি হতে হবে শরীয়তের নির্দেশনা মতে। প্রিয় নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানার বহু পূর্ব থেকেই আরবের সকল শ্রেণির লোকেরা প্রতি বৎসরে দু’দিন খুব আনন্দ-উল্লাস করতো। সহজ কথায়- ঈদ উদযাপন করতো। একদিন সৌর বৎসরের প্রথম দিন। আরেকদিন হেমন্তকালের প্রথম দিন।

তাদের এ আনন্দ ছিল নিছক তাদের মনগড়া। তারা নিজেদের খেয়াল খুশী মতোই যে যেভাবে ইচ্ছা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতো। কারণ, তারা ইসলামি শরিয়তের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করতো না। তাইতো তাদের যুগকে জাহিলিয়্যাতের যুগ বলা হয়ে থাকে। প্রিয় নবিজী (সাঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় গেলেন,তখন দেখলেন- মদীনাবাসীরা সেই জাহিলি যুগের প্রথা অনুযায়ী উক্ত দুই দিন আনন্দ উল্লাস করে উদযাপন করছে। তখন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এ দিন দু’টির পরিবর্তে আরো উত্তম দু’টি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি হল ঈদুল ফিতর আর অপরটি হল ঈদুল আজহা। (আবু দাউদ) । এরপর থেকে মুসলমানরা এ দু’দিনেই ঈদ উদযাপন করা শুরু করেন। তবে মুসলমানরা ঈদের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে যাতে করে

বিধর্মীদের মত সীমা ছাড়িয়ে না যান, আনন্দে মেতে উঠে যেন আল্লাহকে ভুলে না যান এবং তাদের এ আনন্দও যেন সাওয়াবের কাজ হয়ে যায় এ সব দৃষ্টিকোণ থেকেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের দিনে কিছু কাজ সম্পাদন করাকে

সুন্নত ঘোষণা করেন। হাদিস শরীফে রয়েছে, রাসূল (সাঃ) আরাফার দিনে,জুমুয়ার দিনে,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে বিশেষভাবে গোসল করতেন। (আহমদ,ইবনে মাজাহ)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ)তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদুল ফিতরে খাবার গ্রহণ না করে নামাযে যেতেন না। আর ঈদুল আযহায় নামাযের পূর্বে খাবার গ্রহণ করতেননা, নামায থেকে ফিরে এসে খাবার গ্রহণ করতেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।

এমন আরো কতগুলো হাদিস শরীফের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম দুই ঈদের দিনে পালনীয় কিছু সুন্নত কাজ লিপিবদ্ধ করেছেন।

ঈদুল আজহার দিনে পালনীয় সুন্নতসমুহ হলঃ

*ঈদের দিন প্রাত্যুষে ঘুম থেকে উঠা।

*মিসওয়াক করা

*গোসল করা

*নিজের কাছে থাকা উত্তম কাপড় পরা

*সুগন্ধি ব্যবহার করা

*শরীয়ত সম্মত সাজ-গোজ ও খুশী প্রকাশ করা

*ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোনকিছু না খাওয়া

(ফিরে এসে নিজ কুরবানির গোশত থেকে আহার করা)

*সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া

*ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা

*ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা

*উজর না থাকলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

*উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া।

উক্ত সুন্নত কার্যগুলো সম্পাদনের মাধ্যমে যদি আমরা ঈদ উদযাপন করতে পারি তাহলেই আমাদের ঈদ উদযাপন হবে নবিজী (সাঃ) এর নির্দেশিত নিয়মে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের অনেকেই এসবের ধার ধারেননা। বরং ঈদের মত পবিত্র দিনেও অনেককে ঘৃণ্য পাপের কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়! কেউ মদ-জোয়ার মত ঘৃণ্য কাজেও জড়িয়ে পড়েন। কেউকেউ টিভি-সিনেমায় অশ্লীল ফিল্ম দেখেও দিনটি কাটিয়ে দেন! যা কোন মুসলমানদের জন্যই শোভনীয় নয়। তাই আমাদেরকে এসব থেকে বেঁচে থেকে শরীয়তের নির্দেশনা মেনে ঈদ উদযাপন করা উচিত।

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক