ইসারায়েলের বর্ডার কোথায়? জাতিসংঘে এরদোগানের প্রশ্ন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২৫ ২০১৯, ১৭:৪৪

জাতিসংঘের ৭৪তম জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের ভাষণ

১। অবিচারের কারণে আমাদের বিশ্ব আজ অনেক চ্যালেঞ্জ ও দুঃখ কষ্টের মোকাবিলা করছে। আমাদের সভ্যতার মহান স্কলার রুমি এভাবে ন্যায়বিচারকে সংজ্ঞায়িত করেছেন :
“ন্যায়বিচার হলো মানুষকে তাদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব যথার্থভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। আর তারা যেসব বিষয়ের হকদার তা তাদেরকে প্রদান করা।”
এটা সুস্পষ্ট, আজ আমাদের মাঝে না আছে অধিকার আর না আছে দায় দায়িত্ব।

২। অবিচার অস্তিরতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও অপচয় উৎপন্ন করে। আজ আমরা যে সংগঠনে (জাতিসংঘে) সমবেত হয়েছি তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বুক থেকে অবিচার দূর করার জন্য, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্রমে সন্ত্রাসবাদ, ক্ষুদা, বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মৌলিক ইস্যুতে সমাধান পেশ করার যোগ্যতা হারিয়েছে।

৩। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কী কী জিনিস অর্জন করতে পারি- এটা উপলব্ধি করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটা মেনে নেয়া অসম্ভব যে, পৃথিবীর এক অংশের মানুষ বিলাসিতার জীবন যাপন করবে এবং সম্মৃদ্ধি উপভোগ করবে আর পৃথিবীর অন্য অংশের মানুষ দারিদ্র, বঞ্চণা ‍ও অস্বাক্ষরতার যাতাকলে ক্লিষ্ট হবে।
এটা দেখা অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক, বিশ্বের গুটিকয়েক সৌভাগ্যবান মানুষ ডিজিটাল টেকনলজি, রোবটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেদবাহুল্য নিয়ে আলোচনা করছে আর বিশ্বের দুই শত কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। একশ কোটি মানুষ ক্ষুদায় ভুগছে।
আমরা এই বাস্তবতা কোনোভাবে অস্বীকার কেরতে পারবো না, যদি আমরা সবাই নিরাপদ না হই, তবে আমরা কেউ নিরাপদ হতে পারব না।

৪। পারমানবিক অস্ত্র হয় সবার জন্য নিষিদ্ধ হওয়া উচিত, না হয় সবার জন্য বৈধ হওয়া উচিত।
৫। আমরা বর্তমানে ৫০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছি।
৬। ইয়ামেন ও কাতারে হস্তক্ষেপ মানবকি ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের এই সংকটটি দ্রুত সমাধান করা উচিত। গত বছর জামাল খাশোগীর নির্মম

হত্যাকাণ্ড এই অঞ্চলে ন্যায়বিচার, সাম্যের প্রয়োজনীয়তার প্রতীক হয়ে আছে। কোর্ট আজ পর্যন্ত কোন রায় প্রদান করেনি।
মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি, যিনি কোর্ট রুমে সন্দেহজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এটা আরেকটা করুণ ঘটনা। এমনকি তাঁর পরিবারকে যথাযথভাবে লাশ দাফন করার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে চলেছে।
এই দুজনের ঘটনা একটা গভীর প্রতীক যে, এই অঞ্চলে সাম্য ও ন্যায়বিচার কতটা প্রয়োজন।

৭। ইসরাইলী দখলদারিত্বে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অবিচারের আরেকটি জ্বলন্ত প্রতীক।
গত কয়েকদিন আগে ইসরাইলী বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনি এক নারীকে রাস্তায় জঘন্যভাবে হত্যার ছবি যদি বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করতে না পারে, তবে আমরা মূঢ়তার এমন একটি পর্যায়ে আছি যেখানে আহাজারি কোন দ্যোতনা সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়।

১৯৪৭ সালের মানচিত্রে ইসরাইল ছিল মোটামুটি অদৃশ্য আর বর্তমানে ফিলিস্তিন মানচিত্রে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। ইসরাইল এখনো ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে এবং তারা চাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বাকি ভূমিও দখল করে নিতে। খুব ভালো। তবে জাতিসংঘ কী করছে?

তারা কেবল রেজ্যুলেশন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু তা কখনো বাস্তবায়ন করেনি। সুতরাং আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, জাতিসংঘ মূলত কী করে? আমাদের মনোযোগের বিষয় হলো কবে, কখন ন্যায়বিচার প্রিভেইল করবে? আমরা আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না, আমরা বাস্তবায়ন চাই। এই অবিচার থেকেই আমাদের যাবতীয় দুঃখ, দুর্দশার উৎপত্তি হয়েছে।

আমরা জানতে চাই, আসলে ইসরাইলের বর্ডার কোথায়?