ইসলাম প্রতারণাকে সমর্থন করে না

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২৯ ২০১৯, ২১:০৫

মাওলানা জুনাইদ আহমদ

মানুষের সাথে প্রতারণা করাকে ইলাম সমর্থন করে না প্রতারকদের আল্লাহ ভীষণ অপছন্দ করে না। ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। আর ধোঁকা ও প্রতারণা সমাজে অশান্তি ও বিদ্বেষের সৃষ্টি করে। তাই এমন ঘৃণ্য কর্মকে ইসলাম অপছন্দ করেরে না। ধোঁকা দেয়া এবং প্রতারণা করাকে আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের অভ্যাস বলে আখ্যায়িত করেছেন! এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-আর মানুষদের মধ্যে কিছু এমন রয়েছে যারা বলে,আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আধৌ তারা ঈমানদার নয়। (সূরা বাক্বারাহ – ৮)। ধোঁকাবাজ ও প্রতারকরা যেভাবে মুখে এক কথা বলে আর কাজে অন্যটা করে তেমনি মুনাফিকরা নবীজী (সা.) এর যুগে উনার সামনে বলত- আমরা আল্লাহকে রব ও আপনাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করি এবং পরকালের প্রতিও আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।

কিন্তু অন্তর থেকে তারা অবিশ্বাস করতো। তাই নিঃসংকোচে বলা যায় ধোঁকাবাজ আর মুনাফিক একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ! অর্থাৎ অভ্যাগতভাবে এক ও অভিন্ন। আর এমন লোকদের জন্য আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন! এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন – “তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি!” (সূরাহ বাক্বারাহ-১০)

মুনাফিকদের সাথে যেমন ধোঁকাবাজ -প্রতারকদের হুবহু মিল রয়েছে। তেমনি মুনাফিকরা মুনাফিকি করে যেমনি লাভবান হতে পারেনা বরং নিজেদেরই ক্ষতি করে থাকে, তেমনি ধোঁকাবাজ – প্রতারকরাও অন্যের ক্ষতি করতে পারেনা বরং নিজেদেরই ক্ষতি করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারদেরকে ধোঁকা দেয়। বরং এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয়না অথচ তারা তা অনুধাবন করতে পারেনা।” (সূরাহ বাকারাহ-৯)

অপরদিকে রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন- তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ভাইয়ের জন্য ঐ জিনিস পছন্দ না করবে,যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (বুখারি)। উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে নিজের জন্য যা পছন্দ করি তা অন্যের জন্যও করা। আর নিজের জন্য যা অপছন্দ করি তা অন্যের জন্যও অপছন্দ করা।

অথচ ধোঁকাবাজ যারা তারা কখনই এমনটা করেনা। তারা কস্মিনকালেও নিজে ধোঁকা খাক বা নিজের ক্ষতি হউক এটা চায়না, তারা শুধু শুধু অন্যকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। যা কোন মুমিনের আলামত হতে পারেনা। আপনি যদি আমাদের সমাজের দিকে দৃষ্টি দেন, দেখবেন প্রত্যেক জায়গায় এখন ধোঁকা আর প্রতারণার ছড়াছড়ি। কোথাও যাবেন? বাসে বা ট্রেনে উঠবেন? দেখবেন ওখানে যাত্রীদের সাথে অথবা যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের সাথে ধোঁকাবাজি করছে! আপনি কেনাকাটা করবেন? দেখবেন দোকানী আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে অথবা ক্রেতা দোকানীকে ধোঁকা দিচ্ছে! তা কিভাবে হচ্ছে জানেন? যেমন আপনি সব্জি বা ফলমূল কিনবেন, দেখবেন উপরে ভাল গুলো দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে আর আপনাকে দেয়ার সময় ভালোর সাথে নিচে রাখা খারাপগুলোও দিয়ে দিচ্ছে। এটা হচ্ছে দোকানী কর্তৃক ক্রেতাকে ধোঁকা দেয়া। আর আপনি কোনকিছু কিনলেন। কেনার শেষে মূল্য দেয়ার সময় ভাল টাকার সাথে জাল বা অচল টাকা দিয়ে দিলেন। এটা হচ্ছে ক্রেতা কর্তৃক দোকানীকে ধোঁকা দেয়া। এমন পদ্ধতিতে নবীজী (সা.) যুগেও এক বিক্রেতার ধোঁকা দেয়া ও নবীজী (সা.) কর্তৃক এমন ঘৃণ্য কাজের ভর্ৎসনা বাক্য উচ্চারণের প্রমাণ রয়েছে। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের এক স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাবারের স্তুপে হাত প্রবেশ করালেন, তাঁর আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তাই তিনি বললেন- ‘হে খাবারওয়ালা, এটা কি ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.), তাতে বৃষ্টির পানি পড়েছিল।

তিনি বললেন- তুমি কি তা খাবারের উপরে রাখতে পারলে না,যাতে মানুষ তা দেখে ? যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে ‘যে আমাদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’! অথচ এমন ঘৃণ্য কর্ম এখন অহরহ হচ্ছে।

আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসীতে গেলেন ঔষধ কিনতে, সেখানেও দেখবেন ফার্মেসী ওয়ালা কিভাবে আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে।

তা কিভাবে জানেন? দেখবেন যে নামের ঔষধ লিখা রয়েছে সেটা না দিয়ে শুধু গ্রুপ ঠিক রেখে অন্য নামের ঔষধ দিয়ে দিয়েছে! অথচ আপনাকে সেটা অবগতও করেনি। এটাও ধোঁকা। এটাও প্রতারণা। নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতারকদের ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারি করেছেন! হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন- রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, প্রতারকরা জাহান্নামে যাবে! (বায়হাকি)। আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন।

লেখক : ইমাম ও শিক্ষক