ইসলামের প্রতি মুসলিম শিক্ষিত শ্রেণীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহিত্যকে কাজে লাগাতে হবে : মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ২০ ২০২০, ১৪:২৭

১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার হাটহাজারী জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘বাংলাবাড়ি’র ৩য় বর্ষপূর্তি উদযাপন ও জাতীয় লেখক পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় লেখালেখি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত কর্মশালায় কাতারভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস এর সদস্য, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার রিসার্চ ফেলো, পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের আমীর ও শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর পরিচালক মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিত জনগন আজ মানসিক ও চিন্তাগত ধর্মান্তরের শিকার। আধুনিক বিশ্বে ইসলামী বিধিবিধানের উপযুগীতা সম্পর্কে তারা সন্দেহ ও সংশয়ের শিকার। বর্তমানে যেই শ্রেণির হাতে মুসলিম দেশসমূহের ক্ষমতা বা যারা ক্ষমতার কাছাকাছি রয়েছে, তাদের প্রায় সকলেই চিন্তাগত বিকৃতি, ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ সংশয় ও মানসিক ধর্মান্তরের শিকার। মুসলমানদের প্রতিটি ঘর ও পরিবার এই বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণের শিকার। কেন আজ মুসলিম দেশগুলোর এই দু:খজনক অবস্থা হলো?

মাওলানা ফারুকী বলেন, একদিনেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। ইউরোপের পাচার করা বিভিন্ন বাদ-মতবাদ, পশ্চিমা সভ্যতা-সংস্কৃতি ও প্রাচ্যবিদদের ছদ্মাবরণে গত কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম চিন্তাবৃত্তিতে এই আগ্রাসন চলছে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিল্প, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় অঙ্গনসহ সব কিছুর উপর এই আগ্রাসী থাবা বিস্তৃত।

মাওলানা ফারুকী বলেন, এই দু:খজনক অবস্থার মোকাবেলায় আমাদেরকে লেখালেখি ও সাহিত্যের পথ ধরে এগুতে হবে এবং মানসিক ধর্মান্তরের কেন্দ্রস্থল সাধারন শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামীকরণ করতে হবে। কারন এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই সমাজের ৯৮% শিক্ষিত লোক তৈরি হচ্ছ এবং তারাই গোটা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের চিন্তাগত সংশোধনের চিন্তা না করলে আমাদের যে কোনো ইসলামী আন্দোলন ও প্রয়াস ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।

মাওলানা ফারুকী বলেন, আমি মনে করি এই লড়াইটার জন্যই বাংলাবাড়ি ও জাতীয় লেখক পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে লোক তৈরি করতে হবে এবং তাদের হাতে কলমের অস্ত্র তুলে দিতে হবে।

উক্ত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এবং সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র উস্তায, লেখক ও গবেষক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, বিশিষ্ট লেখক ও সংগঠক মাওলানা রুহুল আমীন সাদী, জাতীয় লেখক পরিষদের সহসভাপতি সৈয়দ শামছুল হুদা, হাটহাজারী মাদরাসার উস্তাদ ও মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মুফতি আব্দুল্লাহ নাজীব, হাটহাজারী মাদরাসার উস্তাদ ও ভ্রান্ত মতবাদ বিষয়ক গবেষক মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাসিক দাওয়াতুল হকের নির্বাহী সম্পাদক ও নাজিরহাট বড় মাদরাসার উস্তাদ মাওলানা সরওয়ার কামাল, জাতীয় লেখক পরিষদের সেক্রেটারি আবদুল গাফফার, সহ-সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল আলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমীন নগরী ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ খাইরুল বাশার প্রমুখগণ।

দিনব্যাপী ‌লেখা‌লেখির কর্মশালায় লেখক হওয়ার কলা‌কৌশল, রোজনামচা, রচনা ও প্রবন্ধ লেখার নিয়মাবলী, বানানরী‌তি, বিরাম‌চিহ্ন প‌রি‌চিতি ও প্র‌য়োগ, অনুবাদনীতি, স‌া‌হিত্য সাধনার গ‌তি ও প্রকৃ‌তি, প‌ত্রিকায় লেখা‌লেখির নিয়ম ও কৌশল, অনলাইন ও সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্য‌মে লেখা‌লে‌খির বর্তমান ও ভ‌বিষ্যৎ, গল্প ও উপন্যাস তৈ‌রির মৌ‌লিক দিক, সংবাদ ও সাংবা‌দিকতার প্রাথ‌মিক কথা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কর্মশালাটি সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত চলে। বাদ মাগরিব উত্তীর্ণদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বাংলাবাড়ির পরিচালক এবং জাতীয় লেখক পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মাওলানা মুহাম্মদ ইশতিয়াক সিদ্দিকী।