ইসলামী দলগুলোর রাজনৈতিক দৈন্য

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০৮ ২০১৮, ১২:২২

সৈয়দ শামছুল হুদাঃ ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন একটি কালো দিন। বিশেষকরে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য। আরো বিশেষভাবে বললে যারা দ্বীনের পথে নিজেদের কোরবানী করে দিয়েছে তাদের জন্য। আমরা সকলেই জানি, যারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের মন নরম থাকে, তাদের অমায়িক ব্যবহারই তো মূল পুঁজি দ্বীন প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে। সেই জায়গাটাতেই আঘাতটা আজ লেগেছে। আর কষ্টটা সে জন্যই অনেক বেশি।

দাওয়াতের কাজ যারা করেন, তাদের মিশন ভিশন থাকে এক ধরণের। আর যারা রাজনীতি করেন, সংগঠন করেন, অন্যান্য পেশায় থেকে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মিশন ও ভিশন ভিন্ন। আজ বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের মধ্যে একটি সংকট তৈরী হয়েছে। সংকটের চূড়ান্ত রূপ আমরা ১লা ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে প্রত্যক্ষ করেছি।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এদেশের ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো এই সংকটে কী ভূমিকা পালন করতে পেরেছে? যখন মিশনারী কাজগুলো কোন সংকটে পরে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পৃষ্টপোষকতা দেয়। তাদেরকে নৈতিক সাপোর্ট দেয়। তাদেরকে সাহস যোগায়। আজ ৫দিন হলে গেলো, বাংলাদেশের কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল টঙ্গীর ঘটনা নিয়ে একটা সাংবাদিক সম্মেলনও করতে পারলো না। দলগত ভাবে ঘটনার তদন্তও দাবী করতে পারলো না। সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে নিজ নিজ ব্যানারে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইতে পারলো না।

এদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমাহীন ব্যর্থতা একবার নয় বারবার দেখেছি। দলীয় শক্তিটাকে তারা যথাযথ ব্যবহার করেন না। করতে পারেন না। তারা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে এতই ব্যস্ত যে, জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও অনেক সময় করণীয় ভুলে যায়। দেশের সব সংকটেই কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররাই রাজপথে থাকে। তারাই মাইর খায়। তারাই রাস্তায় চিল্লায়। তারা অন্ধভাবে বড়দের এমনভাবে বিশ্বাস করে যে কারণে ডাক দিলেই তাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়।

কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ব্যতিত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। যে কোন ঘটনায় তারা তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করে। ছাত্রদের ওপর নির্ভর করে। কেন তারা এত বছর পরও দলীয় স্বতন্ত্র কাটামো দাঁড় করাতে পারছে না? ঘুরে ফিরে সব জায়গাই একই মানুষ। একই ব্যক্তি। এটা একটি জাতীয় সমস্যা।

কওমী মাদ্রাসার পরিচালনা পদ্ধতি থেকেই এই সমস্যার উদ্ভব। কওমী মাদ্রাসার যিনি প্রতিষ্ঠাতা, তিনিই মুহতামিম, তিনিই শায়খুল হাদীস, তিনিই কোন দল, সংগঠনের আমীর, তিনিই প্রধান হিসাব রক্ষক, তিনিই সবকিছু দেখভাল করার একক দায়িত্বশীল। মূলত তিনি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেন না। এই অবস্থাটা দেশের জাতীয় রাজনীতি, আন্দোলনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

দেশে একেক সময় একেক রূপ ধরে সংকট তৈরী হয়। এগুলো মোকাবেলা করার জন্য আলাদা আলাদা শক্তি দরকার। সব জায়গায় যদি একই লোক কথা বলে, তাহলে মনে হয় সমস্যা। এটা আমার ভাবনা। আপনি হয়তো এর সাথে ভিন্নমতও পোষণ করতে পারেন। আমি মনে করি, প্রতিটি সেক্টর এ স্বতন্ত্র শক্তি তৈরী করা দরকার।

আজ টঙ্গীতে যে সমস্যাটা তৈরী হয়েছে, আমি মনে করি, তরুনদের একটা শক্তিশালী টীম হওয়া দরকার, যারা এ ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত নিজেরা করবে। ঘটনা কীভাবে ঘটলো, কারা সূত্রপাত করলো, এখানে তৃতীয় কোন শক্তি আছে কী না? কেউ সুযোগ নিয়েছে কী না? কেউ পরোক্ষভাবে উস্কে দিয়েছে কী না? সরকার ও প্রশাসনের ভুমিকা কী? এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে বড়দের কাছে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবে, জাতিকে অবহিত করবে। এর জন্য ধারাবাহিক কাজ করা দরকার। এই কাজটা ইসলামী দলগুলো তাদের কর্মীবাহিনী দিয়ে করতে পারতো। কিন্তু ইসলামী রাজনৈদিক দলগুলোর দুর্বলতা এত বেশি যা আলোচনা করতে গেলে কম্বলের লোম বাছার মতো অবস্থা হয়ে যাবে।

আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। ঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং করণীয় নির্ধারণে তৌফিক দান করুন।