ইসলামী ঐক্য ভাবনায় জামাতের সংশোধন কেন প্রয়োজন?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ২৮ ২০১৮, ২১:৪৬

মাওলানা আবুল হাসান শামসাবাদী: ইসলামের সঠিক আকীদা-আমল ব্যক্তিগতভাবে পালন এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনকারী সকলেরই সহীহ ইসলামের অনুসারী হওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে সকলে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী।

কেননা, উদাহরণ স্বরূপ, আন্দোলন-খেলাফত-জমিয়ত প্রমুখের সাথে জামাতের ইসলামী রাষ্ট্র কায়িমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যদি তাদের সংশোধনের ভিত্তিতে না হয়, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্নক্ষেত্রে বিড়ম্বনা দেখা দিবে, যেমন– পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ
“তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে।”
(সূরাহ হজ্ব, আয়াত নং ৪১)

ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতি পবিত্র কুরআনের উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যখন খেলাফত-জমিয়ত বলবে দেশে পাঁচওয়াক্ত নামায কায়িমের কথা, তখন জামাত বলবে, সফরে নামায তিনওয়াক্ত : জোহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়ার বিধান আছে। তেমনি খেলাফত-জমিয়ত বলবে–মহিলাদেরকে তাদের ঘরে নামায আদায় করতে আর জামাত বলবে–মহিলারা মসজিদে পুরুষের সাথে নামায পড়বে।

আবার খেলাফত-জমিয়ত রোযার সময় নির্ধারণে রাষ্ট্রীয় সাহরী-ইফতারের টাইমটেবেল দিবে সতর্কতামূলকভাবে ৩ মিনিট আগে-পরে করে। কিন্তু জামাত বলবে–সেটা প্রয়োজন নেই। কারণ, ফজরেরর আযান হলেও সাহরী খাওয়া যাবে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে অসুবিধা নেই।

তেমনি দেশে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত প্রতিষ্ঠার জন্য খেলাফত-জমিয়ত আদেশ জারি করবে–সবাই বেশভূষা, কাজ-কর্ম প্রভৃতিতে সুন্নাত মেনে চলুন। তখন জামাত বলবে–এসব হলো রাসূলের স্বভাবগত বিষয়, এগুলোকে সুন্নাত বলা এবং তার প্রতিপালনে জোর দেয়া হচ্ছে দ্বীনবিকৃতি।

তেমনিভাবে পুরুষের দাড়ি, নারীর চেহারার পর্দা প্রভৃতিতেও তাদের মধ্যে তুমুল মতদ্বৈধতা হবে।

সর্বপরি খেলাফত-জমিয়ত বলবে–নবীগণকে আদর্শ মানব হিসেবে জানুন এবং তাদের প্রতি “মাসুম” হওয়ার আকীদা রাখুন। তারা কখনো কোন গুনাহ করেন নি। তাদের সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ ঈমানের জন্য অপরিহার্য। তখন জামাত বলবে–মাসূম হওয়া নবীগণের অবধারিত গুণ নয় এবং সকল নবীকে দিয়ে আল্লাহ গুনাহ করিয়েছেন, যেন লোকেরা বুঝে যে, নবীগণ মানুষ, তারা ফেরেশতা নন।

তেমনি খেলাফত-জমিয়ত বলবে–সাহাবায়ে কিরাম (রা.) আমাদের জন্য অনুসরণীয়। তখন জামাত বলবে–রাসূলে খোদাকে ছাড়া কাউকে “মি‘য়ারে হক্ব” মানা যাবে না।

এভাবে ইসলামের নীতি-বিধান জারীতে অহরহ রেষারেষি ও দ্বন্দ্ব-ফাসাদ হতে থাকবে এবং একসময় দেশে হক ও বাতিল গুলিয়ে যাবে। যা দেশের মানুষকে চরম ভ্রান্তি বা বিভ্রান্তিতে ফেলবে।