ইউকে জমিয়তের উদ্যোগে লন্ডনে শায়খুল হিন্দ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ২৯ ২০১৮, ০২:১২

একুশে জার্নাল লন্ডন: আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সহ দেশ বিদেশের উলামায়ে কেরামের স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহন

আমাদের স্বাধীনতা ও ইসলামী জাতিসত্ত্বা হযরত শায়খুল হিন্দের ত্যাগ তীতিক্ষার ফসল

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের উদ্যোগে লন্ডনে প্রথমবার হযরত শায়খুল হিন্দ কনফারেন্স অনুষ্টিত হয়েছে। গত ২৬ জুন মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টার মিলনায়তনে স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসেনা, জমিয়তে উলামার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান (রাহ:) এর স্বরণে অনুষ্ঠিত এ কনফারেন্সে বর্ষিয়ান আলেম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। কনফারেন্স এ লন্ডনে অবস্থানকারী প্রচুর সংখ্যক নেতৃস্থানীয় উলামা মাশায়েখ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুধীজন স্বতঃষ্ফুর্ত আংশ গহন করেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সভাপতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব আহমদের সভাপতিত্বে ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদের যৌথ পরিচালনায় আয়োজিত
শায়খুল হিন্দ কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপ জমিয়তের সাবেক সভাপতি মাওলানা শায়খ আছগর হোসাইন, ইউকে জমিয়তের উপদেষ্টা ও লন্ডন ইসলামিক স্কুল এর প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়খ তহুর উদ্দীন, ওয়াল্ড ইসলামিক ফোরামের চেয়ারম্যান মাওলানা ঈসা মনসুরী।

প্রধান বক্তার বক্তব্য প্রদান করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, কনফারেন্সে শায়খুল হিন্দ এর সংগ্রামী জীবন এর উপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল মুনতাকিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শায়খ তরিকুল্লাহ, জমিয়ত নেতা মাওলানা শায়খ ইমদাদুল্লাহ সাহেবজাদায়ে কাতিয়া, খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী, ইউকে জমিয়তের সহ সভাপতি মাওলানা ফখরুদ্দীন সাদিক, মাইলেন্ড মসজিদের খতিব জমিয়ত নেতা মাওলানা নাজির উদ্দিন, ইউকে জমিয়তের উপদেষ্টা আলহাজ্ব শামছুজ্বামান চৌধুরী, মাস্টার সৈয়দ ফররুখ আহমদ, সৈয়দপুর সামছিয়া সমিতি ইউকের সভাপতি পির আহমদ কুতুব, ডঃ এম এ আজিজ, মাওলানা রফিক আহমদ রফিক, কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী, আলহাজ্ব খালিস মিয়া, ইউকে জমিয়তের ট্রেজারার হাফিজ হোসেন আহমদ বিশ্বনাথী, জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা শামসুল আলম কিয়ামপুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাফিজ ইলিয়াছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সহ সেক্রেটারি মুফতি সালেহ, খেলাফত মজলিস লন্ডন শাখার সভাপতি মাওলানা এনামুল হক, ইউকে জমিয়তের যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা সৈয়দ হুসেন আহমদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আব্দুস সামাদ, হাফিজ জিয়া উদ্দিন, সহকারী ট্রেজারার মুফতি মুতাহির, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, সহ প্রচার সম্পাদক হাফিজ মাওলানা রশিদ আহমদ, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা খালিদ, লন্ডন শাখার সহ সভাপতি হাফিজ গিয়াস উদ্দিন, মিডিয়া কর্মী বুলবুল আহমদ প্রমুখ। কোরআন তেলাওয়াত করেন ক্বারী আহমদ হাসান ও জমিয়ত নেতা হাফিজ মাওলানা মুশতাক আহমদ। নাশীদ পরিবেশন করেন মাওলানা সাইদুর রহমান ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী বলেন, আমি এ যাবত লন্ডন ও ইংল্যান্ডে ৩৬ বার এসেছি কিন্তু এবার প্রথম ইউকে জমিয়তের উদ্যোগে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ হযরত শায়খুল হিন্দ (রহ:) শিরোনামে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি। এর জন্য আমি ইউকে জমিয়তের দায়িত্বশীলগনকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লামা তাফাজ্জুল হক বলেন, শায়খুল হিন্দ (রাহ:) আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাসের এমন অভূলনীয় ও অচিচ্ছেদ্য চরিত্র, যার অবদান ও আলোচনা কখনও শেষ হবেনা। তিনি হযরত কাসিম নানুথভী, হযরত রশীদ আহমদ গঙ্গোহী ও হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহ:)’র ইলমী ও আমলী বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণ উত্তরাধিকারী বহনকারী একক মহান ব্যক্তিত্ব। মুহাদ্দিস হবিগঞ্জী ইউকে জমিয়তের পক্ষ থেকে কনফারেন্সকে সামনে রেখে শায়খুল হিন্দ (রাহ:) নিয়ে বিশেষ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের আহবান জানালে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তাতে সম্মতি দেন।
বিশেষ অতিথির আলোচনায় মাওলানা ঈসা মন্সূরী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যের আলোকে বলেন, হযরত শায়খুল হিন্দ আমাদের হারানো গৌরব পূণরুদ্ধারের জন্য আধুনিক শিক্ষিত সমাজের সাথে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি শেষ জীবনে অতীব গুরুত্বের সাথে দেখেছেন। আজো শায়খুল হিন্দের যুগ আমাদের মধ্যে অব্যাহত রয়েছে। তার নীতিমালাও অনুসৃত পথ ধরেই আমাদেরকে মনঞ্জিল পানে অগ্রসর হতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা শায়খ আসগর হুসেইন তার বক্তব্যে বলেন, শায়খুল হিন্দ মাল্টা ফেরত ঐতিহাসিক বক্তব্যে কোরআনকে মনে প্রাণে গ্রহন করার ও অনৈক্য থেকে দূরে থাকার প্রতি সর্বাদিক গুরুত্বারোপ করেছিলেন। আমাদেরকে এ কথাটি সর্বাদিক গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করতে হবে।
মাওলানা তহুর উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে উলামায়ে কেরামের ত্যাগপূর্ণ অবদানকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয় না। আমাদেরকে অধিক গুরুত্ব সহকারে উলামায়ে কেরামের অবদানকে তুলে ধরতে হবে।

মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী বলেন, শায়খুল হিন্দ ১৯০৯ সালে জমিয়তুল আনছার নামক সংগঠন গড়ে তুলেন। ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তুর্কি খলিফার সমর্থন ও আফগানিস্তানের পথে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের চুক্তি সম্পাদনের জন্য মক্কা গমন করেন। একই বছর ডিসেম্বর মাসে শায়খুল হিন্দ গ্রেফতার হন। ১৯২০ সালের মার্চে মাল্টা থেকে ছাড়া পেয়ে বোম্বে পৌছে স্বাধীনতার চেতনায় খেলাফত কনফারেন্সে যোগদেন। এসময় তাঁকে শায়খুল হিন্দ উপাধী দেয়া হয়। ১৯২০ সালে জীবনের অন্তিম সফরের কিছুদিন পূর্বে সর্ব ভারতীয় জমিয়তের সম্মেলনে সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি আব্দুল মুনতাকিম। তিনি বলেন, মুসলিম জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সর্র্বাপেক্ষা বেশি ত্যাগ তীতিক্ষার পরাকাষ্ঠা যে মহান ব্যক্তিত্ব প্রদর্শন করেগেছেন, তিনি হলেন হযরত শায়খুল হিন্দ (রাহ:)। তিনি হলেন একাধারে রেশমী রোমাল আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মূল প্রেরণা। মাল্টার দীর্ঘ কারা জীবন ভোগ করে হযরত শায়খুল হিন্দ হেকমত, কর্মকৌশল, কুটনৈতিক অভিযান, ডায়ালগ ও মিশনারী চিন্তাধারা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি হাতে নিয়ে অবিরাম গতিতে কাজ করে যাওয়ার এক অবিশ্বাস্য প্রেরনার নাম। শায়খুল হিন্দের অনুসৃত পথ ধরেই আজ আমাদেরকে সর্ব বিষয়ে সাফল্যের মনঞ্জিলে পৌছাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শুয়াইব আহমদ, উপস্থিত নেতৃবৃন্দ, অতিথিবৃন্দ ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সমাবেশ সফল করায় জমিয়ত নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।