আসুন একটি শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১৬ ২০১৯, ২৩:২২

হাফেজ মাওলানা মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু ওরফে নান্নু মুন্সী। ১৯৮৫ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে লেখাপড়া শেষ করে দীর্ঘদিন যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। নড়াইল জুড়ালিয়ার মাদরাসাসহ কয়েকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বীনি খেদমতের পাশাপাশি তিনি দর্জি পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। যশোর রেল স্টেশনের পাশেই ছিলো তাঁর দোকান।

২ ছেলে ৩ মেয়ের নিয়ে তাঁর সাজানো একটি সংসার ছিলো। তিনি ভালোবসতেন রাসুলকে। তাই রাসুলের অবমাননা সইতে না পেরে হেফাজতে ইসলামের আহবানে ২০১৩ সালের ৪ঠা মে রাতে পরিবারের লোকজনকে না জানিয়েই যশোর রেলওয়ে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের সাথে ঢাকায় এসে গাবতলীর স্পটে অবস্থান গ্রহণ করেন। পরে সেখান থেকে পায়ে হেটে শাপলা চত্বরে সমাবেত হন।

৫মে দিনভর আন্দোলন, সংগ্রাম শেষে রাতে পরিস্থিতি যখন ভয়ানক হয়ে উঠে তখন তিনার স্ত্রী ও সন্তানরা মোবাইলে বার-বার তাকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি স্ত্রীকে প্রতিউত্তরে বলেন, আমার সাথী-সঙ্গীদের এভাবে রেখে আমি সরতে পারিনা। তুমি বরং আমার সব সন্তানদের নিয়ে জায়নামাজে বসে যাও। সবাই মিলে আমার জন্য দোয়া করো আল্লাহ যেন আমাকে শাহাদাতের মর্যাদা নসীব করেন।

রাত ৮টায় তিনি কাকরাইলের দিকে অবস্থান করছিলেন। তখন সেখানে চারদিকে মৃত্যুর বিভীষিকা। কিন্তু তাঁর চোখেমুখে শাহাদাতের তামান্না। মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় তাঁর উপর হামলা হয়। হঠাৎ এক চিৎকারে কথা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। কেঁপে উঠে তাদের অন্তরাত্মা। কিছু সময় পর এক অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে যে, তিনি মারা গেছেন। তিনি তাঁর সাধ পূরণ করতে পেরেছেন। জামানার কারবালা শাপলার চত্তরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে রাসুল প্রেমের নিশান উড়িয়ে শাহাদতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হন তিনি।

কিন্তু তাকে হারিয়ে অসহায় ছোটছোট ৫ টি ছেলেমেয়ে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় স্ত্রী শাহনাজ পারভিন হয়ে পড়েন দিশেহারা। ২ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে তাদের সাজানো সংসারে হঠাৎ নেমে আসে নিরাশার কালো মেঘ। কষ্টের বিবর্ণতা কেড়ে নেয় তাদের জীবনের সব বর্ণিলতা। বেদনার বোবাকান্নায় ম্লান হয়ে যায় জীবনের সব সুর ছন্দ। তবু বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে, মানুষ করতে হবে শহীদ স্বামীর আমানত এ সন্তানগুলোকে।

আর সেই তাগিদে প্রিয় স্বামী শহীদ হাফেজ মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসাইন নান্নু সাহেবের দর্জি পেশাকে অবলম্বন করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সামান্য সেলাইয়ের কাজ করে ২টি ভিষণ অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা খরচ দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে অনেক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তদুপরি স্বামীর শোক, ২টি সন্তানদের দুরারোগ্য অসুস্থতা, প্রশাসনিক হুকমি-ধমকি,হয়রানি আর ঋণের ভার সইতে না পেরে একদিন হঠাৎ স্ট্রোক করেন তিনি।

বাবাকে হারিয়ে অসহায় সন্তানরা একমাত্র আশ্রয় মাকে হারাতে চাননি কোনোভাবে। তাই তারা মাকে বাঁচাতে বাবা মায়ের পরশধন্য একমাত্র সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করার ব্যাবস্থা করেন। এখনো বড় দুটি বোন সেলাইয়ের কাজ করে মায়ের চিকিৎসা ও ছোট ৩টি ভাইবোনকে মাদরাসায় পড়ানোর গুরুদায়িত্ব পালনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

মায়ের চিকিৎসার পর ভিটেমাটি বিক্রির টাকা দিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরে আশ্রয়ের জন্য নিন্মমানের একখন্ড জমি কিনেছেন। কিন্তু জায়গা ভরাট ও বাড়ি করার সামর্থ তাদের নেই। বর্তমান বাড়ির মালিক দয়া করে তাদেরকে তাদের পৈত্রিক ভিটেমাটিতে আগামী ঈদ পর্যন্ত সর্বশেষ থাকার অনুমতি দিয়েছেন। পরে কোথায় যাবেন সে গন্তব্য তাদের জানা নেই। একবুক হতাশা নিয়ে এখন তাদের পথচলা। সামনে অনিশ্চিত অপরিচিত এক পৃথিবী।

এটি গল্প নয় ৯০% মুসলমানদের এ দেশে রসুলের প্রেমে জীবন দেয়া এক শহিদী পরিবারের একটি বাস্তব চিত্র। গত কিছুদিন আগে আমাদের আহবানে ফরিদপুরের জামিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসায় ঐ শহীদ পরিবারের পক্ষথেকে শহীদের মাদরাসায় পড়ুয়া ১৩ বছরের বড় ছেলে এসেছিলো তার এক আত্নীয়কে নিয়ে। আমরা হাফেজ্জী হজুর রহঃ সেবা সংস্থার পক্ষথেকে তাদেরকে সামান্য কিছু টাকা ও জামা কাপড় দিয়ে নিজেদের লজ্জা ও অপারগতাকে ঢাকার সামান্য চেষ্টা করেছি।

সেদিন ছোট ভাইটির দিকে তাকিয়ে বারবার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে।নিজেদের বড় অপরাধী মনে হচ্ছিলো। হাদীসের বানী “আল মুসলিমু কা জাসাদিন ওয়াহিদ ” সকল মুসলমান একটি দেহের মত, একটি অঙ্গ ব্যাথা পেলে শরীরের সবকটি অঙ্গ ব্যাথাতুর হয়ে উঠার রাসুলের ঐ বানীটি আমাদের উপহাস করছিলো দারুনভাবে।

তাদের কষ্ট এতদিনেও কেনো আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেনি। আমরা এতো আশেকে রাসুল দাবিদারের এ দেশে রাসুলের প্রেমে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মর্যাদা রক্ষায় জীবন দেয়া একটি শহিদী পরিবার এতোটা অসহায়ত্ববোধ করছে এটা ভাবতে নিদারুন কষ্ট হচ্ছে।

আমাদের হাফেজ্জী হুজুর রহঃ সেবা সংস্থা ছাড়া মুসলিম এইড নামক একটা বিদেশি সংস্থা তাঁর একটি ছেলের লেখাপড়া বাবদ কিছু খরচ দিতো। কিন্তু অসুস্থতার কারনে মাদরাসা পরিবর্তন করায় গত একবছর যাবৎ সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়া সবাই রাজনীতিবিদদের মত মুখে গভীর সমবেদনা জানালেও তেমন কার্যকরি সহযোগিতা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।

তবে কি মুসলমানদের সে এক দেহ আজ অনুভূতিহীন হয়ে গেছে? নাকি স্বার্থপরতার ভাইরাসে আমদের চেতনা আজ প্যারালাইজড হয়ে পড়েছে।
আল্লাহ তুমি আমাদের উপর রহম করো। কাল কেয়ামতের মাঠে রাসুলের কাছে আমাদের অপমানিত হওয়া থেকে হেফাজত করো।

তাই আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে অসহায় এ শহীদি পরিবারটির পাশে দাঁড়াই। অন্তত তারা যেন আমার আপনার সন্তানের মত সম্মানের সাথে পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে পারে।

আমরা কি পারিনা সাহাবায়ে কেরামের মত শহীদদের সন্তান ও স্ত্রীদের থেকে কাউকে নিজের সন্তান, কাউকে নিজেদের ভাই কিবা বোন হিসেবে গ্রহন করতে কিবা তাদের পাশে দাঁড়াতে। দান কিবা যাকাতের একটি অংশও কি তারা পেতে পারেনা? তাই আসুন দোয়ার পাশাপাশি সবাই তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। সবাই শুধু দোয়া করে কিছু করার দায়িত্ব অন্যের উপর ছেড়ে দিলে রাজার পুকুরের মত পুরোটা পানি দিয়ে ভর্তি হবে দুধ দিয়ে নয়।
হে প্রভূ তুমি আমাদের তাওফিক দাও।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ-
উম্মে হাবিবা নীরা (বড় মেয়ে)
এ্যাকাউন্ট নাম্বার : 01006724
সোনালী ব্যাংক
কালেক্টরেট শাখা
যশোর।
যোগাযোগ নাম্বারঃ-01767197107,বিকাশ নাম্বারঃ- 01717933229

গ্রাম খরকী, মোল্লাবাড়ী,
এম এম কলেজ সংলগ্ন
কবরস্থান মসজিদের পশ্চিমে
কোতোয়ালি, যশোর।

লেখক:
কাউসার আহমদ সুহাইল
সহ সাধারণ সম্পাদক
হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) সেবা সংস্থা