আল হাসানাহ রক্তদান সোসাইটি’র ৪র্থ বর্ষে পদার্পণ ও ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আজ ২৬ ডিসেম্বর শনিবার দুপুর ১১ ঘটিকা থেকে, ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর দয়ামীরে অনুষ্ঠিত হয়।
“মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসুন রক্তদানে” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাও চেয়ারম্যানঃ হাফিজ মাওলানা সাঈম উদ্দিনের সভাপতিত্বে,আল হাসানার অন্যতম সদস্য মাওলানা সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় শুরুতে পবিত্র কালামুল্লাহ থেকে তিলাওয়াত করেন আল হাসানার অন্যতম সদস্য হাঃ মীর মাহদী হাসান ও ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন আল হাসানার অন্যতম দায়িত্বশীল হাঃ ছায়েম আহমদ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের রক্তদানে উৎসাহিত ও সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এমনই আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আজকের অনুষ্ঠানে আল হাসানার অন্যতম সদস্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০ বার রক্তদান করায় কাজী আব্দুস সামাদকে গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড এবং ৩৫ জন সক্রিয় রক্তদাতা সদস্য কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ময়নুল হক চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব শ্যামল বণিক,দয়ামির ইউপির চেয়ারম্যান জনাব এস টি এম ফখর উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল হাই মুশাহিদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব আনা মিয়া,দক্ষিণ সুরমা উপজেলার স্যানেটারি অফিসার জনাব এম,এ,জুনায়েদ আহমদ,ওসমানী নগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব জুবেল আহমদ সেকেল,দারুল আজহার মডেল মাদ্রাসা গোয়ালাবাজারের প্রিন্সিপাল মুফতি মিনহাজ উদ্দিন মিলাদ। আইকন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সভাপতি মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, আল হাসানাহ’র সাবেক পরিচালক মাওলানা যাকারিয়া যাকি,সাদিপুর বার্তার প্রতিনিধি জনাব আহমেদ মালিক।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এবং আল হাসানার পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন অন্যতম দায়িত্বশীল মুফতি এনামুল হক ফুজায়েল, মোজাক্কির আহমেদ নাজু, হাফিজ ইমাদ বিন রফিক, রাজিবুল ইসলাম ইমন,শাব্বির আহমেদ মামুন ও সোসাইটির রক্তযোদ্ধারা সহ প্রমুখ।

মানব সেবায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করায় – আইকন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খিদমাহ ব্লাড ব্যাংক, ব্লাড গ্রুপ দয়ামীর,অঙ্গীকার মানব কল্যাণ সংস্থা, আল এহসান সমাজ কল্যান সংস্থা, স্মাইল চ্যারিটি, আল ফালাহ ইসলামী জনকল্যান পরিষদকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। “রক্ত দিন জীবন বাঁচান” ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তই এক লাল রঙের। এর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মানুষের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে, এটা ছাড়া কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমনঃ দুর্ঘটনায় আহত রোগী, অস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসবকালে, ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল রোগে, এলিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, থিমোফিলিয়া ইত্যাদি কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে বছরে পাঁচ থেকে ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়, যার মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মাধ্যমে। বাকি রক্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশাদার রক্তদাতা এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

রক্ত অবশ্যই মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানবদেহ থাকবে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো হয়ে পড়ে, প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কলকারখানায় তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি। নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে! এমনটাও আশা করা যায় না। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, বলা হয় ‘করিলে রক্তদান, বাঁচিবে একটি প্রাণ’ ‘সময় তুমি হার মেনেছো রক্তদানের কাছে, দশটি মিনিট করলে খরচ একটি জীবন বাঁচে। এ সময় আল হাসানার যাবতীয় কার্যক্রম দেখে অতিথিরা ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং যেকোনো মুহুর্তে আল হাসানাহ কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন।

উল্লেখ যে ২০১৭ সালে ১৬ডিসেম্বর সোসাইটির যাত্রা শুরু, সিলেট জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ওয়াজ মাহফিলে ক্যাম্পিং তথা কর্মসূচির আলোকে এ পর্যন্ত ১০০০হাজার ব্যাগ রক্ত দান করে অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।এবং ৫০০০ হাজার মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে।এছাড়াও হত দরিদ্র বিপদগ্রস্ত মানুষদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে।

পরিশেষে দয়ামীর বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাঃ মাওঃ মুকাদ্দাস আলী সাহেবের দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।