আল মাহমুদ ও ঢাকাই কবিতার কনইস্যুর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০১৯, ১২:৩৭

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত: আমাদের ছাত্রাবস্থায় ও প্রথম তারুণ্যে আমরা যখন একটু আধটু কবিতা পড়তে শুরু করেছিলাম তখন পঞ্চাশের কবিরাই রাজত্ব করছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের কবি প্রজন্ম ততদিনে ইতিহাস হয়ে গেছে। ত্রিশের কবিরা তখনো দারুণ প্রভাব বজায় রেখেছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা কেউ আমাদের চোখের সামনে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। চল্লিশের কয়েকজন কবি অবশ্য সশরীরে হাজির ছিলেন। যেমন আহসান হাবীব ও সৈয়দ আলী আহসান বা আবুল হোসেন। কিন্তু তাঁদেরকে মনে হত ইতিহাসে বিলীয়মান। অন্যদিকে পঞ্চাশের একঝাঁক কবি তখন আমাদের চোখের সামনে বাংলা কবিতাকে রুল করছিলেন। যেমন শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী প্রমুখ। আবার ওপার বাংলায় ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও আরো কয়েকজন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন শামসুর রাহমান, সৈয়দ হক খুব বর্ণাঢ্য নাগরিক জীবনশৈলী বেছে নিয়েছিলেন। তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও স্টাইল ছিল আমাদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয়। কবি সাহিত্যিক বলতে কি বোঝায় তা আমরা তাঁদেরকে দেখেই জেনেছি, বুঝেছি। আল মাহমুদের কবিতা সম্পর্কে অনেক উচ্চ ধারণা সেই তখন থেকেই খেয়াল করেছি ঢাকার কবিতা কনইস্যুরদের মাঝে। তবে তাঁর ব্যক্তিত্ব ঢাকার নাগরিক সাহিত্যামোদীদের কাছে অত আকর্ষণীয় ছিল বলে আমার মনে হয়নি। আল মাহমুদের কবিতা তাঁর ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পার্সোনালিটি নিয়ে তরুণদের মধ্যে তেমন ক্রেজ আমি দেখিনি। যদিও তাঁর কবিতার সৌকর্য নিয়ে উভয় বাংলায় একধরণের সমীহ সবসময়ই ছিল।
আর তাছাড়া তখন থেকেই লক্ষ করছিলাম অন্য সব কিছুর মত বাংলা কবিতা নিয়েও কবিদের দলাদলি। আর আল মাহমুদকে তখন থেকেই নাগরিক বিদগ্ধমহলে প্রতিপক্ষ কাব্যাদর্শের কেউ বলে মনে করা হচ্ছিল। তাঁকে আঁকা হচ্ছিল একজন কৃষ্ণ ঘোড়সওয়ার বা ব্ল্যাক হর্স নাইট হিশেবে।
এরপরে এই কাব্য বিভক্তির সিলসিলা কতদূর গড়িয়েছে এবং আজ তা যে আমাদের খোদ আত্মার বিভাজনে রূপ নিয়েছে সে ট্রাজেডি এখন কমবেশি আমরা সবাই বড় বেদনার সঙ্গে অনুভব করছি।
আল মাহমুদের প্রয়াণ আমাদের চোখের সামনে বিকাশমান বাংলা কবিতার পঞ্চাশের সেই কিংবদন্তীকুলের যেন শেষ কিস্তি!