আল মাহমুদ আমাদের কবি -ওমর ফারুক মজুমদার

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০১৯, ০৫:০৪

আল মাহমুদ আমাদের কবি

০১

নজরুল ফররুখের পর বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী কবির নাম ‘আল মাহমুদ’। কবি সাহিত্যিকরা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের লেখায় টিকে থাকে জাতির আদর্শ, সংস্কৃতি। ফলে, বামপন্থীরা বার বার চেষ্টা করে যায় বাংলা সাহিত্যের কবি সাহিত্যিক ও লেখকদেরকে অর্থের প্রলোভন ও জাগতিক সম্মানের লোভ দেখিয়ে ইসলামী আদর্শ থেকে দুরে রাখতে। এমনকি মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়া কবিদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখাতে। শামসুর রহমান ও অন্যান্যরা যেমন লিখেছে। কিন্তু আল মাহমুদকে তারা সে কাজটি করতে পারেননি।

যেমনটি কবির ভাষায় :
‘বইয়ের ভেতর অচেনা জগত। অস্বীকারের, বিদ্রোহ ও নাস্তিক্যের জগত। যে জগতের সাথে আমার পূর্বপুরুষের রক্তের ছিটা যেখানে যেখানে গেছে তাদের কারোরই কোনো সম্পর্ক ছিল না। শত শত বছর ধরে এই উপমহাদেশে তারা যা প্রচার করতেন ও নিজেদের লতাগুল্মসহ আমল করতেন তাতে আর যাই হোক কোনো প্রকার নাস্তিকতাকেই আস্বাদন করতে হয় নি। শুধু আমি সেই হতভাগা যে কবিসুলভ ঔদাসিন্যে হাঁটতে হাঁটতে এক আগুনের ভেতর পড়ে যেতে যেতে কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়েছি।অন্তরের অন্তস্থলে আমার ইসলাম প্রচারক পূর্ব-পুরুষদের দোয়ার বরকতে কোথাও সামান্য অবশিষ্ট ছিল। যার জন্য আমার পক্ষে প্রত্যাবর্তনের সোজা পথের ওপর মুখ থুবড়ে পড়া সম্ভব হয়েছে।’
— আল মাহমুদ > “যেভাবে বেড়ি উঠি”।

০২

কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। নিঃসন্দেহে বলা যায় কবি আল মাহমুদের শেষটা ভালো ছিলো। তিনি আল্লাহ ভীরু ও নামাযি ছিলেন।এবং জাগতিক সম্মানকে উপেক্ষা করে ইসলামী কবি হিসেবেই আমাদের কাছে পরিচিত ছিলেন।তাই তো তাঁর ইন্তেকালের খবর শুনে অনলাইন-অফলাইনে ধার্মিক ও আলেমদের শোক প্রকাশ পেয়েছে। জাতীয় মসজিদে তাঁর জানাযায় অংশ নিতে হাজার হাজার মুসল্লির সমাগম হচ্ছে। সর্বপরি তাঁকে যে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের কবি তথা আমাদের (ডানপন্থীদের) কবি হিসেবে কবুল করেছেন তাঁর উজ্জল দৃষ্টান ‘আমাদের এ মিছিল’ কবিতাটি- আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো ?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।
আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখয়বয়ে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয়নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।(অংশবিশেষ)

০৩
আমরা জানি, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের মনোবাসনা ছিলো…মসজিদের পাশে যেনো তাঁর কবর হয়। দয়াময় আল্লাহ ইসলামের কবি নজরুল ইসলামের আশা পূরণ করেছেন। তেমনি সদ্য চলে যাওয়া কবি আল মাহমুদের ইচ্ছে ছিলো-
‘কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ’
-আল মাহমুদ (স্মৃতির মেঘলা ভোরে)

শেষকথা, কবি আল মাহমুদ একজন মাকবুল বান্দা। রাব্বুল আলামীন তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরন করেছেন। শুভ শুক্রবারেই তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন।একজন ধার্মিকের জীবনে এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
মাওলা পাক যদি জান্নাতি ফুলের শুভেচ্ছার আয়োজন করে থাকেন, তাহলে দুনিয়ার ফুলের শুভেচ্ছা কিংবা মুক্তিযোদ্ধা উপাধির কী প্রয়োজন।আমাদের প্রার্থনার শিশিরে সিক্ত হোক কবির কবর। আমরা গর্বিত কবির শেষ পরিচয়ে- ‘আল মাহমুদ আমাদের কবি’।