আল মাহমুদের মৃত্যুদিন শুক্রবারও, আবার শনিবারও!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০১৯, ০৯:২৫

আবির আবরার:

গতকাল রাত ১১টায় উভয় বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ মারা গেছেন ৷ স্বরচিত একটি কবিতায় তিনি শুক্রবারে মৃত্যুর আশা প্রকাশ করেছিলেন-

কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক, মেনে নেবো: এ আমার ঈদ।
ফেলে যাচ্ছি খড়কুটো, পরিধেয়, আহার, মৈথুন –
নিরুপায় কিছু নাম, কিছু স্মৃতি, কিংবা কিছু নয়;
অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে জমে আছে শোকের লেগুন;
কার হাত ভাঙে চুড়ি? কে ফোঁপায়? পৃথিবী, নিশ্চয়।
স্মৃতির মেঘলাভোরে শেষ ডাক ডাকছে ডাহুক,
অদৃশ্য আত্মার তরী কোন ঘাটে ভিড়ল কোথায়?
কেন দোলে হৃদপিণ্ড, আমার কি ভয়ের অসুখ?
নাকি সেই শিহরণ পুলকিত মাস্তুল দোলায় !
আমার যাওয়ার কালে খোলা থাক জানালা দুয়ার
যদি হয় ভোরবেলা স্বপ্নাচ্ছন্ন শুভ শুক্রবার।
(স্মৃতির মেঘলাভোর, আল মাহমুদ)

কিন্তু কবি স্বপ্নাচ্ছন্ন ভোরবেলায় নয়, মারা গেলেন শুক্রবার দিবাগত রাতে ৷ যে কারণে অনেকে বলছেন- তিনি শুক্রবারে মৃত্যুর যে অাশা প্রকাশ করেছিলেন, তার সেই অাশা পূর্ণ হয়েছে ৷ বিপরীতে আবার অনেকেই বলছেন, হিজরী বা চান্দ্র সন অনুযায়ী তিনি শনিবারে মারা গেছেন ৷ এমতাবস্থায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, আসলে কোনটা সঠিক?

মূলত চান্দ্র বৎসর ও সৌর বৎসর দুটিই আল্লাহর সৃষ্টি ৷ কয়েকটি আয়াতে কারীমায় এর প্রমাণ রয়েছে ৷

নিয়মানুসারে চান্দ্র বৎসর গণনার জন্য মাগরিব থেকে মাগরিবের সময়কে দিন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কেননা চাঁদ দেখেই দিনের শুরু হয়ে থাকে ৷ রোযা, ঈদ ইত্যাদি পালন চাঁদ দেখার পরই ধর্তব্য হয়ে থাকে ৷ আর বলা বাহুল্য যে, চাঁদ দেখা যায় মাগরিবের সময় ৷

অন্যদিকে সৌর বৎসর এর দিন গণনা হয় রাত 12.01am টা থেকে 12pm পর্যন্ত ৷ যেমন, ইংরেজি বা ঈসায়ী সন। যে কারণে ঈসাব্দের শুরুতে রাত ১২টার পর ‘নিউ ইয়ার’ উদযাপন করা হয়ে থাকে ৷

আবার কোন কোন গণনায় সকাল থেকে দিনের সূচনা হয়ে রাত শেষে একদিন হয় ৷ যেমন আমাদের বঙ্গাব্দ সনে হয়ে থাকে। এজন্যই সূর্য উঠার পর থেকে দিনের শুরু ধরা হয় ৷

সুতরাং ঈসায়ী সন ও বঙ্গাব্দ সন হিসেবে কবি জুমাবার মারা গেছেন – এটি বলা যেতে পারে। তবে জুমাবার এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদীস যদি আরবি গণনা হিসেবে হয় তখন কবির মৃত্যু শনিবার হয়েছে বলেই বিবেচিত হবে। আর তিনি শুক্রবারের ফজীলত প্রাপ্ত হবেন না ৷

উল্লেখ্য, হাদীসে জুমাবারে মৃত্যুর ফজীলত হিসেবে বলা হয়েছে- যার মৃত্যু শুক্রবারে হবে কিয়ামত পর্যন্ত তার কবরের আযাব মাফ হয়ে যাবে ৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই ফজীলত পেতেই হয়ত কবি শুক্রবারে মৃত্যুর আশা প্রকাশ করেছিলেন ৷