আপনাদের সেবা করাই আমাদের কাজ – শেখ হাসিনা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ২৪ ২০১৮, ২০:৫০

উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে মহাজোটকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। এর ধারাবাহিকতা রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।’

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর হাসপাতাল মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। ২০০৯ থেকে আজকে ২০১৮। পুরো বাংলাদেশেই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সারা দেশেই সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। এর ধারাবাহিততা বজায় রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন। তাই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল সেই বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের কল্যাণে কোনো কিছু দিতে পারেনি। কিন্তু নিজেরা অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, বিদেশে পাচার করেছে। সেই অর্থ পাচার করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। শুধু বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, তা হবে না। আমার দরিদ্র মানুষও ফ্ল্যাটে থাকবে। আমরা সেই ব্যবস্থাই তৈরি করে দিচ্ছি। আমার রাজনীতিটাই হচ্ছে এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য। তাই আপনাদের কাছে আমরা ভোট চাই। আপনারা ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। এ মানুষ হত্যা করাই ছিল তাদের কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রতিরোধ করে। নির্বাচন হয়। আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। পরপর দু’বার ক্ষমতায় ছিলাম বলে আজকে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। মানুষের জীবনমান বদলেছে। উন্নত হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে। দেশের মানুষের ভাগ্য আমরা গড়ে দিয়েছি।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রায় ৩০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদে রাজধানীর দুরবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ ঢাকায় পানির জন্য হাহাকার ছিল। এক গাড়ি পানি কিনতে যেখানে ২শ’ টাকা লাগার কথা, সেখানে ১৫শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হতো। আর বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি থাকত। বিদ্যুৎই ছিল না। রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশনের করুণ অবস্থা ছিল। একটা অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।

সরকারের টানা ১০ বছর মেয়াদে পানি, বিদ্যুৎ ও কর্মসংস্থানসহ জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এ ঢাকা শহরে বস্তিগুলোর চরম দুরবস্থা। বস্তিবাসীরা সেখানে ভাড়া দিয়ে থাকেন। এরপরও তাদের নানা ধরনের সমস্যা ভোগ করতে হয়। এ ভাড়ায় তারা যাতে ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকতে পারেন- সেই লক্ষ্যে বস্তিবাসীদের জন্য দশ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বস্তিতে যেমন দৈনিক হিসাবে ভাড়া দিয়ে থাকা যায়, এ ফ্ল্যাটগুলোতেও ইচ্ছে করলে কেউ দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবেন। সেখানে তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সেইভাবে ঢাকা শহরে আমরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বস্তিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা করে দেব। যেন বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন কারও করতে না হয়। সেই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।

ঢাকা শহর ঘিরে রিং রোড তৈরির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ রিং রোডটা হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। খাল দখলকারীদের সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহর ঘিরে ৫টি নদী খনন করে তার নাব্য ফিরিয়ে এনে সেটার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করা হবে। সভা মঞ্চের পাশে অবস্থিত একটি খাল দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই খালটা আমি দেখতে পাচ্ছি। আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটি এলাকায় জলাধার থাকা উচিত। এ খাল বন্ধ হওয়া উচিত নয়। কাজেই আমি মেয়র সাহেবকে বলব, একটা প্রকল্প নিয়ে এ খালটা উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন। সেখানে যেন ভালো পানি থাকে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে এলিভেটেড রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ করছি, যানজট সমস্যা দূরীকরণে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় আমরা পাতাল রেল করব। তার সমীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এ পাতাল রেলও আমরা করে দেব। আর নদীগুলো খনন করে এ নৌপথও সচল করে দেব। এভাবে ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে। মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। যানজট মুক্ত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এ ঢাকায় ১১টি সরকারি স্কুল ও কলেজ তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগ আরও সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আমরা সারা দেশটাকেই সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আপনাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আমরা যাদের প্রার্থী করেছি তাদের বিজয়ী করুন। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমি আছি আপনাদের সেবায়। আপনাদের সেবা করাই আমাদের কাজ।