আনিসার দিনলিপি | রিমা বসাক পূজা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ৩১ ২০১৯, ১০:৫৬

গল্পটা একটি সাধারন মেয়ে আনিসাকে নিয়ে। কিন্তু এই সাধারণ মেয়ে আনিসার ছিল কিছু অসাধারণ গুন । অন্যায়কে প্রশ্রয় দিত না আনিসা। সব সময় হাসি-খুসি আর প্রতিবাদী মনোভাব, সমাজ সেবা এসব গুনের জন্যই সবার কাছে প্রিয় ছিল আনিসা।

আনিসা কলেজ জীবন শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পা রাখে। আর তাকে পড়াশুনার জন্য ঢাকায় পা রাখতে হয়। নতুন মানুষ আর নতুন পরিবেশে সে খুব ভাল ভাবেই খাপখায়িয়ে চলতে থাকে। ঢাকা শহরের রাস্তা খুব একটা ভাল চিনে না আনিসা। একদিন ভার্সিটি যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখে ছেলেরা ইভটিজিং করছে একটা মেয়েকে। আনিসা তখন আগে পরে কি হবে তা না ভেবেই তার প্রতিবাদ করতে শুরু করে। আর যখন দেখে এসবে কিছু হচ্ছে না , তখন একটা থাপ্পড় দেয় একটা ছেলেকে । আর চারপাশের মানুষ তখন তাকিয়ে ছিল আনিসার দিকে। আনিসা তখন সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো – বাঙালী পারে শুধু থাকিয়ে থাকতে। নিজেরাও কিছু করবে না অন্য কেউ প্রতিবাদ করলে এমনভাবে তার দিকে থাকাই যেন ও ভিন্ন গ্রহের মানুষ । তারপর মেয়েটার দিকে থাকিয়ে বলে বাঁচলে বাঁচার মতো করে বাঁচো। ভীতুর মতো বার বার মরার চেয়ে মাথা উঁচু করে মরার মধ্যে শান্তি পাবে একটা। তারপর আনিসা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসে উঠে পড়ে।

ঢাকা শহরের বাসগুলোতে সব সময় দু’একটা অমানুষ থাকে আর সবাই চেয়ে চেয়ে দেখলেও আনিসা চেয়ে চেয়ে দেখতে পারে না। প্রতিবাদটা তার রক্তের মধ্যে আছে তো। হঠাৎ একটি বৃদ্ধ মহিলাকে দারিয়ে থাকতে দেখে আনিসা তার সিট ঐ মহিলাকে দিয়ে আনিসা দাড়িয়ে যাচ্ছিল তখন আনিসা খেয়াল করল কিছু ছেলে একটি মেয়েকে বাজে ভাবে তার শরীরে ধরেছে আনিসা প্রথমে বুঝতে পারে না, পরে বুঝতে পারে এটা ইচ্ছাকৃত। তারপর আনিসা স্বজোরে ঐ ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলে যে – ভাইয়ারা আপনারা এই আপুকে বিরক্ত করছেন কেন ? তখন ছেলেগুলো উত্তরে বলে কই না তো আমরা তো এমন কিছুই করিনি। কিন্তুু আনিসার প্রতিবাদে ভরসা পায় ঐ মেয়েটি। মেয়েটি তখন বললো আপনারা আমায় অনেকক্ষন ধরেই বিরক্ত করছেন। তখন বাস এর অন্যরাও ঐ ছেলেগুলোকে বকাবকি করতে শুরু করে। তখন আনিসা বলে তোদের মতো অমানুষের জন্য মেয়েরা রাস্তায় চলাচল করতে পারে না নিরাপদে। তোদের মত অমানুষের এই বাসে জায়গা নেই। নাম এখনই এই বাস থেকে। সবার চিৎকারে ছেলেগুলো বাস থেকে নেমে পড়ে মাথা নিচু করে। তখন ঐ মেয়েটি আনিসার দিকে তাকিয়ে মুছকি একটা হাসি দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আনিসা তার ভার্সিটির সামনে চলে আসে । ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে একটা শান্তির হাসি দেয়। আবার কেউ কেউ ভয়ে আনিসার দিকে তাকাই না, কথা তো আরও অনেক দূরে। কিন্তুু আনিসার তাতে কিছু যায় আসে না। ও ওর মতো আড্ডা হাসাহাসিতে ব্যস্ত। আর আড্ডায় তার মেয়ে বান্ধবীদের বলতে থাকে শুন – বাঁচলে বাঁচার মত বাঁচবি । প্রতিদিন হাজার বার মরার চেয়ে প্রতিবাদ করে মর। তখন তোকে মরার পরও তোকে সবাই মনে রাখবে।

সেই আড্ডার সময় আসে একটি ছেলে,নাম অর্নব। অর্নব খুব পছন্দ করত আনিসাকে। কিন্তুু আনিসা দেখতে এতো সুন্দরী ছিল না। অর্নব আনিসাকে তাও পাগলের মতো পছন্দ করত। আনিসার নিষ্পাপ হাসি, মায়া ভরা চোখ, আর স্পষ্ট ভাষার জন্যই অর্নব এতো ভালবাসাত। কিন্তুু আনিসা অর্নব বা অর্নব এর মতো ওকে পছন্দ করত যারা সবাইকে একটা কথাই বলত,’আমি এসব নিয়ে এখনো ভাবিনি’। অন্য সবাই হাল ছাড়লেও অর্নব আনিসার ভালবাসা পাওয়ার আশা ছাড়েনি। আর আনিসাও অর্নবকে পাত্তা না দেওয়াটাকে তার রুটিনের একটি অংশ করে নিয়েছিল। আর এভাবেই চলতে থাকে আনিসার প্রতিটি দিন।