আদালতে হাসছিল বৈধ অস্ত্রধারী সেই খ্রিষ্টান জঙ্গী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১৬ ২০১৯, ০৪:৫০

আবির আবরার: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন ট্যারেন্টকে হাতকড়া পরিয়ে খালি পায়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকালে ২৮ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত খৃস্টান জঙ্গীকে ক্রাইস্টচার্চ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির করা হয়। এ সময় হাসছিল সে।

শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলা চালায় ব্রেনটন। কাছাকাছি লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। দুই মসজিদে হামলায় নিহত ৪৯ জন। এর মধ্যে আল নুর মসজিদে ৪১ জন ও লিনউড মসজিদে ৭ জন নিহত হন। একজন হাসপাতালে মারা যান। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ৪০ জন। এর মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আজ নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ব্রেনটনকে। তিনি নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনের অ্যান্ডারসনস বে এলাকার বাসিন্দা। আদালতে যখন জঙ্গী ব্রেনটনকে হাজির করা হয়, তখন তাঁর পরনে ছিল বন্দীদের সাদা পোশাক, হাতে হাতকড়া এবং খালি পা। ডকে তাঁর ছবি তোলার সময় সে আলোকচিত্রীদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল। তখন তার পাশেই ছিলেন দুই পুলিশ সদস্য।

৫ এপ্রিল পর্যন্ত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আদালতে দায়িত্বরত আইনজীবী রিচার্ড পিটারস জানান, এর মধ্যে তাঁর জামিনের কোন আবেদন হচ্ছে না। তাঁর নাম গোপন রাখারও কোন আবেদন ছিল না।

তবে বিচারক পল কেলার হামলাকারী ব্রেনটনের ছবি তোলা ও ফুটেজ নেওয়ার অনুমতি দিলেও তিনি বিচার সম্পর্কিত অধিকার বজায় রাখতে ব্রেনটনের ছবি প্রকাশের সময় মুখ ঝাপসা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অভিযোগে ব্রেনটনের কোনো পেশার কথা উল্লেখ করা হয়নি। আদালত কক্ষে সাধারণ লোকজনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

হামলাকারীর কাছে বৈধ অস্ত্র ছিল

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারী জঙ্গীর পরিচয় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। স্থানীয় সময় শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, হামলাকারীর নাম ব্রেন্টন টারান্ট (২৮)। হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। সে গত দুবছর ধরে নিউজিল্যান্ডের ডানিডিনে বসবাস করছে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন জানান, হামলাকারী জঙ্গী বৈধ অস্ত্র বহন করছিল। এতে হামলায় ব্যবহৃত গুলি কিনতে তাঁর সমস্যায় পড়তে হয়নি। এ ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেন আরডার্ন।

উপপ্রধানমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বিরোধী দলের নেতা সাইমন ব্রিজেসসহ অন্যদের নিয়ে স্থানীয় সময় শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী।
হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টকে ক্রাইস্টচার্চ জেলা আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ব্রেন্টন টারান্টের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। টারান্টের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা করা হয়েছে। বিচারক জানিয়েছেন, অবশ্যই মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে।

এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারে বাতি নিভিয়ে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শোক-নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে মোমবাতি জ্বেলে শোক জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ এ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করা হয় ৷