অসুস্থ এবং দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৩ ২০১৯, ২২:৫৮

মাওলানা জুনেদ আহমদ

সুস্থতা, অসুস্থতা, সুখ এবং দুঃখ মানুষের পথচলার সঙ্গী। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ এবং সুস্থতা-অসুস্থতা আসবেই। বিচিত্র জীবনে যেমন কোন মানুষকেই আজীবন সুখে থাকতে দেখা যায় না তেমনি আজীবন সুস্থ থাকতেও দেখা যায় না। আর এসবই হয়ে থাকে কেবল আল্লাহর ইচ্ছায়। কেউ ইচ্ছে করলেই আমৃত্যু সুখেও থাকতে পারেননা; সুস্থও থাকতে পারেননা। কখনো না কখনো অল্পক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ অনুভব করেন; অল্পদিনের জন্য হলেও অসুস্থতায় পড়েন। যখন কেউ দুঃখের সময় অতিবাহিত করেন বা অসুস্থতায় পড়েন, তখন তিনি নিজেকে অসহায় জ্ঞান করেন ; তখন তাঁর প্রতিটি মুহুর্তে কষ্ট অনুভূত হতে থাকে। বিশেষ করে যখন কোন ব্যক্তি জটিল কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যান, তখন ঐ ব্যক্তি দুশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েন। মানসিকভাবে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে যান! তাঁর ঐ মানসিক বিপর্যয়ের সময় কোন প্রিয়জন তাকে দেখতে গেলে; ভাল-মন্দ খবর নিলে উনি অনেকটা খুশী হন। তাঁর দুশ্চিন্তা অনেকটা লাঘব হয়। মনে প্রফুল্লতা আসে। যা তাঁর সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়ক হয়। ঈমানদার মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব হলো অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, তার সাথে কুশল বিনিময় করা। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে তার কষ্ট হলে তাকে সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা করা। যেমনটা আমরা আমাদের সহোদর ভাই-বোনের বেলায় করে থাকি। কারণ, আমরা শ্রেষ্ঠ নবী (সা.) এর শ্রেষ্ঠ উম্মত। আর আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করতে এবং মুসলমানে মুসলমানে ভাই ভাই হয়ে একে অন্যের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে উৎসাহ প্রদানের নিমিত্তে ইরশাদ করেছেন – “মুসলমান মুসলমানের ভাই” (মিশকাত)।

যেহেতু আমরা মুসলমানরা ভাই ভাই। সেহেতু আমাদের আপন ভাইদের দুঃখের সময় এবং অসুস্থতার সময় যেভাবে পাশে দাঁড়াই; সেবা করি,সেভাবে অন্য মুসলমানদের বেলায়ও তেমনটা করা উচিত। প্রিয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন -“এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে :

(ক) অসুস্থকে হলে তাকে দেখাশুনা করবে।

(খ) মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযার নামাজে উপস্থিত হবে।

(গ) দাওয়াত করলে গ্রহণ করবে।

(ঘ) দেখা হলে সালাম দিবে।

(ঙ)  হাঁচি শুনলে উত্তর দিবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে)।

(চ) উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনা করবে।

উক্ত হাদীস শরীফের দ্বারা জানা যায়, কোন মুসলমান ভাই অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া (সেবা-শুশ্রূষা করা) উচিত। এটা আমাদের উপর তাঁর হক। এখানে সে আমাদের সহোদর ভাই কি না বা নিকটাত্মীয় কি না(?) এমন প্রশ্ন তুলার প্রশ্নই আসেনা!

বরং এ হকটুকু আদায় করে আমরা লুফে নিতে পারি রহমতের ফেরেশতাগণের অফেরতযোগ্য দোয়া ও আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতে ভরা জান্নাতী উদ্যান।

এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবিজী (সা.) এর হাদীসঃ- হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়। -(তিরমিজি শরীফ)।

আর দুঃখী বা বিপদগ্রস্ত হলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসতেও রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপুল উৎসাহ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন -যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুসলমানের মুসিবত দূর করবে,আল্লাহ তায়ালা ক্বিয়ামতের দিন তার মুসিবত দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন দরিদ্রের প্রতি অনুগ্রহ করবে, আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে তার উপর অনুগ্রহ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে,আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন।যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দাহ তার কোন মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে,আল্লাহ তায়ালা তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকবেন। (মেশকাত)। অসুস্থ ও দুঃখী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে। কাজেই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হলো তাঁদের পাশে দাঁড়ানো।

লেখক : শিক্ষক