এক আবরারের পর আমরা হারালাম আর‌ও এক আবরারকে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০২ ২০১৯, ০০:১৬

আরজু আহমাদ

নাইমুল আবরার রাহাত, ক্লাস নাইনে পড়ুয়া একটা ছেলে। সতেরো বছর বয়সী। প্রথম আলোর কিশোর পত্রিকা, আনিসুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত কিশোর আলোর আয়োজিত ‘কিআনন্দ’ নামক উৎসবে ইলেক্ট্রিক শকে খুন হয়েছে।

আমি সচেতনভাবেই খুন বলছি। এর বহুবিধ কারণ আছে। এই প্রোগ্রামটা কিশোরদের।

১. অপরিণত বয়সের বাচ্চাদের একটা অনুষ্ঠানে কেন পর্যান্ত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না? এই ধরনের আয়োজনে এত বিপুল সংখ্যক বাচ্চার সমাগমের মধ্যে যে ইলেক্ট্রিক সেইফটি প্রটোকল মেন্টেইন করা উচিত তা যে হয় নি- এই মৃত্যু এর প্রমাণ। আয়োজক কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারে না।

. ইলেক্ট্রিক শট লাগার পর আহত বাচ্চাটিকে ভেন্যু থেকে মাত্র ১ কিলোমিটারের কম দূরের (৮৫০ মিটার) শহীদ সোহরাওয়ার্দী ম্যাডিকেলে না নিয়ে গিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের তুলনামূলক অখ্যাত আয়েশা মেমোরিয়াল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই অজুহাতে যে, হসপিটালটা প্রোগ্রাম স্পন্সর। ঢাকার ব্যস্ততম সময়ে সাড়ে পাঁচগুণ দূরের হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত একটা শিশুর জীবন নিয়ে তামাশা করে কর্তৃপক্ষ। এটাও গুরুতর কর্তব্যে অবহেলা।

. নাইমুল আবরার রাহাতের বন্ধুদের ফেসবুক পোস্টের মধ্য দিয়ে এটা জানা গেছে আবরারের মৃত্যুর খবর আয়োজকদের কেউ স্কুল কিম্বা পরিবারকে জানায় নি। হাসপাতাল থেকে ড্রেস দেখে চিনতে পেরে প্রিন্সিপালকে জানানো হয়। এ কথা সত্যি হলে এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা।

সার্বিকভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, কিশোর আলো তথা অভিভাবক প্রতিষ্ঠান প্রথম আলো এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফেসবুকে এই ঘটনা প্রচারের পরেও কর্তৃপক্ষের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয় নি।

সম্পাদক আনিসুল হক দায়সারা ফেসবুক পোস্ট করেছেন সেটাও ফেসবুকে এ সংবাদ ভাইরাল হবার পর। অথচ এই ঘটনা কখন কিভাবে ঘটেছে এর কিছুই বলা হয় নি।

প্রথম আলো এই দীর্ঘকাল অবধি সময়েও এ সংবাদ প্রচার করে নি। (এই পোস্ট লেখা অবধি) যেখানে ইলেক্ট্রিক শট লাগার পরই নিউজ হওয়া স্বাভাবিক ছিল। কেননা খুব সঙ্গত কারণেই সেখানে প্রথম আলোর প্রতিনিধি ছিল।

এখনো অবধি এই ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয় নি। প্রভাবশালী মিডিয়া হাউজের মোড়লপনার ভয়ে চুপ থাকলে তো চলবে না। একটা সরল শিশুর জীবন এইভাবে শেষ হয়ে গেল! আহ!

কিশোর আলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামের যে ধরণ তা মূলত এদেশে উন্নাসিক ধরনের তরুণ সমাজ তৈরির প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট এই দেশের তরুণ সমাজকে পশ্চিমা জীবনাদর্শে চালিত করার এজেন্ডার অংশ।

নয়া সাম্রাজ্যবাদীদের এই দেশীয় দোসরেরা এইরকম দুয়েকটা নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুকে চার আনার মূল্য দেয় না। এদেশের শিশুদের প্রতি আদতে তাদের দায়বদ্ধতা নাই।

এক আবরারের পর আমরা আরও এক আবরারকে হারালাম।

আমরা রাষ্ট্রের কাছে এই খুনের বিচার চাই। প্রথম আলোকে অবশ্যই এই মৃত্যুর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে।

তদন্তপূর্বক এই ঘটনায় দায়ীদের ‘অবহেলা জনিত খুনের’ কারণে বিচার নিশ্চিত করতে হবে৷