জনদুর্ভোগ ইসলামে নিষিদ্ধ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ২১ ২০১৯, ১৬:০৩

দুর্ভোগ বা হয়রানি মানুষের জন্য অনেক কষ্টের। মানুষকে দুর্ভোগ বা হয়রানিতে ফেলে কষ্ট দেয়া ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় কেউ কাউকে দুর্ভোগ বা হয়রানিতে ফেললে তার জন্য রয়েছে মারাত্মক গোনাহ।

দেশে শান্তি ও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে জরিমানা বা সাজার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বাস অবরোধ আন্দোলনে নেমেছে যানবাহন শ্রমিক-মালিক সমিতি। আর এতে অসহনীয় কষ্টের শিকারে পরিণত হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ।

আবার বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভাগীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ব্যর্থ হয়েছে। পেঁয়াজে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে মুষ্টিমেয় কিছু লোক ফায়েদা লুটে নিলেও অধিকাংশ মানুষই চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

কোনো কারণ ছাড়াই লবনের দাম বৃদ্ধির গুজব উঠেছে । এতেও হয়রানি ও কষ্টের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে কষ্ট দেয়াও ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

উন্নয়নের নামে মাসের পর মাস সড়কে খোঁড়াখুড়ির মাধ্যমে মানুষকে দুর্ভোগ ও হয়রানি করাও এর ব্যতিক্রম নয়। দুর্ভোগ ও হয়রানির মাধ্যমে মানুষকে বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়াকে পাপ বলে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তাআলা। কুরআনে এসেছে-

‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৮)

কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিলে ঈমানহীন হয়ে পড়ে মানুষ। তাই মিথ্যা, প্রতরাণা, ধোঁকা, গিবত, গাল-মন্দসহ কোনো কাজেই মানুষকে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। এমনকি মানুষের মনের রাগ-ক্ষোভ ও অভিমান কারো ওপর প্রয়োগ না করা। যাতে যার সঙ্গে রাগ ক্ষোভ কিংবা অভিমান করা হয় সে যেন কষ্ট না পায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে অন্যায়ভাকে দুর্ভোগ বা হয়রানি করতে নিষেধ করেছেন। অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে ব্যক্তি যেনো তার প্রতিবেশিকে কষ্ট না দে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন মেহমানদের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।’ (মুসলিম)

মানুষকে কষ্ট দেয়া আল্লাহর কাছে অনেক বড় অপরাধ। এ অপরাধকে সুদের মতো মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তোমরা কী জানো সবচেয়ে বড় সুদ কী? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

‘কোনো মুসলমানের সম্মানহানি ও (তাকে) অপদস্ত করাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় সুদ।’

প্রকৃত ঈমানদার কখনো কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সব মানুষকেই প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, যাদের থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ। হাদিসে এসেছে-

‘ওই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে ওপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন-

‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি প্রকৃত মোমিন হতে পারে না। এভাবে তিনবার বলার পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সেই ব্যক্তি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন- ‘যার অনিষ্টতা থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

মনে রাখতে হবে, কাউকে কষ্ট দেয়া ব্যক্তি যদি নামাজি-রোজাদার ও দানসাদকারী হলে সে জাহান্নামে যাবে বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
‘এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহ রাসুল! এক নারী বেশি বেশি নামাজ, রোজা এবং দান-সদকা করে। কিন্তু সে তার প্রতিবেশিকে তিরস্কার করে এবং কষ্ট দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এমন নারী জাহান্নামে যাবে।
ওই আবার বললেন, ‘আরেক নারী নামাজ, রোজা এবং দান-সদকা কম করে, তবে সে তার প্রতিবেশীকে গালিগালাজ করে না এবং কষ্ট দেয় না। এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সে নারী জান্নাতে যাবে।’ (মুননাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বুঝা যায়, ইসলাম শান্তি ও সহাবস্থানের দিকে মানুষকে আহ্বান করে। অন্যায় ও অপরাধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। শান্তি ও সহাবস্থানে রয়েছে আল্লাহর রহমত। আর অন্যায় ও অপরাধে রয়েছে ধ্বংস ও অশান্তি।

ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক মানুষকে কষ্ট দেয়া যেমন ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই কোনোভাবেই কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না। শান্তি ও সহাবস্থানের লক্ষ্যে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত, যে কোনো সমস্যার সমাধানে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে সমাধানের সুপথ খুঁজে বের করা।

সড়কে যাত্রীদের হয়রানি না করা। আবার যাত্রীরা শ্রমিকদের হয়রানি করা থেকে বিরত থাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে শান্তি ও স্বস্থি ফেরানো। এসবই ঈমানের একান্ত দাবি।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধানের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই হোক ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ তাআলা সবার প্রতি রহম করুন। আমিন।