‘এদেশে আলিম তো অনেকেই আছেন কিন্তু বীরপুরুষের বড়ই অভাব’

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১৪ ২০১৯, ১৭:০০

ইসলামী রাজনীতি আর মুফতি আমিনী; যেন পরস্পরের পরমাত্মীয়। ১৯৮১ সাল থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তিনি সরব থেকেছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইস্যুতে। সরকার তাঁকে করে রেখেছিল গৃহবন্দী। সকল অপশক্তির তিনি ছিলেন জীবন্ত ত্রাস। গত ১২-১২-১২ তারিখে জাতিকে এতিম করে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। পরাভব না মানা এই নেতৃপুরুষ হাফেজ্জী হুজুরের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করে এদেশের দ্বীনী আন্দোলনে হয়ে আছেন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। অসাধারণ এক শায়খুল হাদিস হিসেবেও ছিলেন পরিচিত। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন এ সময়ের জনপ্রিয় লেখক, গবেষক কবি মুসা আল হাফিজ।

২০১২ ঈসায়ি সনের ২০ নভেম্বর লালবাগ জামিয়ায় হযরতের অফিসে সাক্ষাৎকারটি নেন তিনি। উল্লেখ্য, মুফতি আমিনী রহ. এর দেয়া শেষ সাক্ষাৎকার এটাই।

একুশে জার্নাল ডটকম এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-

মুসা আল হাফিজ: রাজনীতিতে জীবনের বড় এক অধ্যায় অতিবাহিত করলেন। এই ময়দানে সময় ও শ্রম দিচ্ছেন কোন লক্ষ্যে?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: এ প্রশ্নের জবাব দেই ইতিহাস থেকে! কাদিসিয়ার যুদ্ধে ইরানের সেনা নায়ক রুস্তমের কাছে দূত হিসেবে গেলেন হযরত রিবয়ী ইবনে আমের রা.। রুস্তম তাকে প্রশ্ন করল- তোমরা কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছ? তিনি জবাবে বললেন- যারা মানুষের গোলামীর শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর গোলামী করতে চায় আমরা তাদেরকে মানুষের গোলামী থেকে মুক্ত করতে চাই। যারা দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পেতে চায় তাদেরকে প্রশস্ত পরিসরে নিয়ে আসতে চাই। আর সকল মতাদর্শের নির্যাতন থেকে যারা পরিত্রাণ চায় তাদেরকে ইসলামের ন্যায় নীতির পথে নিয়ে আসার জন্য আমরা এসেছি। হযরত রিবয়ী রা. ‘র জবাব থেকে আমাদের জবাব পৃথক হওয়া উচিত নয়। এই লক্ষ্য থেকে আমাদের লক্ষ্য ভিন্ন হওয়া উচিত নয়।

মুসা আল হাফিজ: তাহলে রাজনীতি করছেন মানব কল্যাণের জন্য?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। ইসলামী রাজনীতি মানেই মানবকল্যাণের রাজনীতি। ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনা বাস্তবে প্রতিফলিত হলেই মানবতার কল্যাণ সাধিত হয়। মুসলমান জাতি যাদের আবির্ভাবই হয়েছে মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য।

মুসা আল হাফিজ: এই কল্যাণের আদর্শিক দিকটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বস্তুগত কল্যাণ না হলে তো মানবতার সেবা ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু আদর্শ দিয়ে তো ক্ষুধা, বেকারত্ব, অবিচার দূর হয় না।

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: ইসলামের আদর্শিক কল্যাণের সাথে বস্তুগত কল্যাণ একাকার। একটি আরেকটি ছাড়া অগ্রসর হয় না। যখনই আদর্শিক কল্যাণ হবে তখন অন্যান্য কল্যাণ না হয়ে পথ থাকে না। যেমন ধরুন, আমরা ইসলামী বিচার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। এটা তো আদর্শের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এর মাধ্যমে মানবতার কত বড় উন্নয়ন ঘটাতে চাই তা স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। এখন যে বিচার ব্যবস্থা আছে, তাতে মানুষের মৌলিক অধিকার কবরস্থ হচ্ছে। এই বিচারব্যবস্থা মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। এখানে কেউ যদি বিচার পেতে চায় তাহলে সে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবে। ন্যায়বিচার সে পাবে না। এক ওয়ায়েজ কৌতুক করে বলেছিলেন- এদেশে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পেতে হলে একজন লোকের ধন থাকতে হবে কারূন এর মত। হায়াত থাকতে হবে নূহ আলাইহিস সালাম এর মত । ধৈর্য থাকতে হবে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম এর মত। কথাটি কৌতুককর হলেও এর মধ্যে বাস্তবতা আছে। এদেশে টাকা ছাড়া বিচার হয় না। টাকার বিনিময়ে ন্যায় অন্যায়ে পরিণত করা হয়। টাকা ঢালতে পারলে বড় অপরাধ – অপরাধ থাকে না। বিচার ব্যবস্থাটা এমনই যে আপনার সুনিশ্চিত ন্যায়কেও বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে চাইলে ঘাটে ঘাটে পানির মত টাকা ঢালতে হবে। এরকম টাকা কয়জন ঢালতে পারবে? যে দেশে অধিকাংশ মানুষ নুন-রুটি আর চালের চিন্তায় দিশেহারা, তারা হাজার হাজার টাকা ব্যয় না করতে পারলে বিচার পাচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থায় আছে দীর্ঘসূত্রিতা। হাজার হাজার মামলা আটকে আছে প্রতিটি আদালতে। বছরের-পর-বছর কূলকিনারা হচ্ছে না। নিম্ন আদালত থেকে নিষ্পত্তি হলে বিচার চলে যাচ্ছে উচ্চ আদালতে। আপিল হচ্ছে। সেখানে যাচ্ছে বছরের-পর-বছর। একজন মানুষের জীবনের বিশাল অংশ কেটে যাচ্ছে একটি মামলা নিয়ে। মানুষ ন্যায় বিচার চায়। কিন্তু আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আরো বেশি পেরেশান হতে হচ্ছে। অর্থ যাচ্ছে। সময় যাচ্ছে। মামলা করে অনেকেই দেউলিয়া হচ্ছে। হাজার হাজার পরিবার দশকের পর দশক ধরে মামলার ঘেরাটোপে বন্দি থাকছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের জন্য আইয়ুব আলাইহিস সালাম এর মত ধৈর্য ধারণ ছাড়া কি করার থাকে? কিন্তু এ পরিস্থিতি তো মেনে নেয়া যায় না। ন্যায়বিচার মানুষের অধিকার। এটা যে সমাজ দিতে পারে না সে সমাজ একটি অমানবিক সমাজ। যে রাষ্ট্রে তার গ্যারান্টি নেই সেটা এক বর্বর রাষ্ট্র। অত‌এব এ থেকে উত্তরনের জন্য ইসলামী বিচার ব্যবস্থা কায়িম করতে চাই। ইসলামী বিচার ব্যবস্থা কায়িম হ‌ওয়া মানেই মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণ করা। ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কাজটি করছি ইসলাম প্রতিষ্ঠার, কিন্তু তাতে তো অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে গণমানুষের। আসলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মানেই মানবতাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করা।

মুসা আল হাফিজ: কিন্তু ইসলামী রাজনীতির এই দিকটা আলোচিত হচ্ছে না। সবাই বলছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি রাজনীতিতে ধর্মব্যবসার দোকানদারি করছে।

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: কারা বলছে, এটা আগে দেখতে হবে। যারা বলছে তারা কোনদিনই ইসলামকে সহ্য করতে পারেনি। এরা ইসলামী রাজনীতি তাহযীব-তামাদ্দুন ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যার ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে দোষণীয় হিসেবে ওরা প্রচার করছে। কিন্তু তারাই আবার সাম্প্রদায়িক সংগঠন ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’র ধর্মভিত্তিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুসলমানদের রক্তে তাদের মা কালীকে ধুয়ে ফেলার হুমকি দেয়। এদের ভন্ডামি, দুর্বৃত্তপনা দেখতে দেখতে মানুষ অতিষ্ঠ। এই লোকগুলো ইসলামী রাজনীতিকে খারাপ বলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু মুশকিল হলো, তাদের হাতে মিডিয়া থাকায় তাদের দৌরাত্ব কেবলই বেড়ে চলছে।

মুসা আল হাফিজ: মিডিয়ার দ্বারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে কারা? বিপরীতে আমরা কী করছি?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: বিপরীতে আমরা পিছিয়ে আছি, কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমাদের চেষ্টা আছে বিকল্প মিডিয়া তৈরীর। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক উভয় মাধ্যমে শক্ত অবস্থান না থাকলে রাজনীতিতে সাফল্য সম্ভব নয়। হাফেজ্জী হুজুর রহ. যখন আন্দোলনে আসেন, তখনই তিনি দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ইত্যাদি পত্রিকা চালু করেছিলেন। কিন্তু মাসিক রহমত ছাড়া কোনটাই এখন চালু নেই। আসলে শক্তিশালী মিডিয়া থাকলে রাম-বাম ও নাস্তিক্যবাদীরা এতটা সাহসী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আসতে পারতো না। আমার মনে হয় যে কোন মূল্যে কমপক্ষে একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশ করা আমাদের অপরিহার্য দায়িত্ব।

মুসা আল হাফিজ: সেই সামর্থ্য কি আছে আমাদের?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: কেন থাকবে না? সামর্থ্যহীনতার অনুভূতি হীনমন্যতা থেকে জন্ম নেয়। এটা একটা মস্ত বড় অভিশাপ। আলেমরা কী পারে না! পাকিস্তানে তো একটি মাদ্রাসা করাচির জামিয়াতুর রশিদ এমন এক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করছে, যা গোটা পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। জন্মের পর মাত্র এক বছরের মাথায় করাচি, মুলতান, লাহোর, মুজাফফরাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে পত্রিকাটি একযোগে প্রকাশিত হতে থাকে। নবযাত্রার প্রথম ধাপেই পত্রিকাটি হয়ে ওঠে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিক। সেই মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে সাপ্তাহিক যরবে মুমিন। উর্দু ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ছাপা হচ্ছে পত্রিকাটি। এটি পাকিস্তানের সেরা সাপ্তাহিক পত্রিকা। শিশুদের জন্য সেই মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বাচ্চুঁ কা ইসলাম। পত্রিকাটির প্রকাশ সংখ্যা সোয়া লাখের উর্দ্ধে। সে মাদ্রাসা থেকে মহিলাদের জন্য ছাপা হয় সাপ্তাহিক খাওয়াতিনে ইসলাম। এর‌ও প্রচারসংখ্যা লক্ষের অধিক। একটি মাত্র মাদ্রাসা যদি এত কিছু পারে তাহলে এদেশে আমরা সবাই মিলেও কি একটি মাত্র জাতীয় দৈনিক চালাতে পারবো না? আসল ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সুযোগকে কাজে লাগাতে পারি না। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থ হই এবং সাহসের সাথে উদ্যোগ নিতে পারি না।

মুসা আল হাফিজ: বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যে আর কী দুর্বলতা আপনার চোখে ধরা পড়েছে?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া এদেশের আলেমদের মধ্যে উদারতার খুবই অভাব। কিন্তু সাহসের অভাব উদারতার চেয়েও বেশি। আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন। কিন্তু বীরপুরুষের খুবই কাহাত। আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোন বীর আলিম দেখছি না।

মুসা আল হাফিজ: এমতাবস্থায় এদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের সম্ভাবনা কতটুকু?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: সম্ভাবনা তো বিপুল। এদেশের জনগণ ইসলাম চায়। তারা অন্য সবকিছুর উপর বিরক্ত। সব পদ্ধতিই ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের দুর্দশা ঘুচাতে পারেনি কেউ। এমতাবস্থায় দক্ষ ও কার্যকর নেতৃত্ব এবং শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি থাকলে জনগণের চাহিদাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার সম্ভাবনা একশো ভাগ।

মুসা আল হাফিজ: এজন্য ঐক্যের বিকল্প আছে কি? বিচ্ছিন্নভাবে পথ চলার অবসান কবে হবে?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: ঐক্যের বিকল্প নেই, এটা সবাই মানেন। কিন্তু ঐক্যের জন্য যা করা দরকার তা তো কেউ করে না। ঐক্যের জন্য “ছাড় দেয়া ও মেনে নেয়ার” মানসিকতা থাকতে হবে। এ জিনিস এর অভাবে অতীতে যতবার ঐক্যের বন্ধন তৈরি হয়েছে সবই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আসল ব্যাপার হলো আমাদের লোকেরা রাজনীতি বুঝে না, বুঝে ক্ষুদ্রস্বার্থ। যদি রাজনীতি বুঝতো তাহলে সবাই প্রতিযোগিতা করে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে জমা হতো। এতে এদেশের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার চেহারা বদলে যেতো। ফলে আলিমদের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা বহুগুণে বাড়তো। প্রতিটি ছোট-বড় ইসলামী দল বিপুলভাবে উপকৃত হতো এবং সবচেয়ে বড় যে ফায়দা হতো, তা হলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠা সহজ হয়ে যেতো।

মুসা আল হাফিজ: আপনার ব্যাপারে তো অভিযোগ যে আপনি অন্যকে পাত্তা দেন না।

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: অভিযোগ তো অভিযোগই। অভিযোগকারীরা তো কাউকেই রেহাই দেয়নি। ইসলামী আন্দোলনে যতদিন ধরে আছি, ততদিনের প্রতিটি ঐক্য প্রচেষ্টায় আমি জড়িত ছিলাম। ১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুর আমাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর ঐক্যের ব্যাপারে যতভাবে চেষ্টা করেছি তা উল্লেখ করলে বই হয়ে যাবে। ইসলামী ঐক্যজোট গঠন, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদসহ প্রতিটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে ভূমিকা রেখেছি। এগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে আমার চিন্তা ও প্রচেষ্টা ছিল অনস্বীকার্য। সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ ছিলো ইস্যুভিত্তিক সংগঠন। তার কার্যক্রম এক সময় থেমে যায়। বাকি দুটি এখনো আছে। আমি উভয়টির চেয়ারম্যান। অন্য অনেকেই সরে গেছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। কিন্তু আমি তো আছি ঐক্য ও সমন্বয়ের সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে। আমি তো কাউকে অবজ্ঞা করছি না। সবাইকে বলছি যে ঐক্যের নামে এগুলো প্রতিষ্ঠিত হলো, আসুন সবাই মিলে তাকে আরও মজবুত করে তুলি।

মুসা আল হাফিজ: আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: এটা নিছক নির্বাচন নয়। বরং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এটা হল নীরব যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের না জিতে উপায় নেই। এ যুদ্ধে আমরা পরাজিত হলে দেশের স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই থাকবে না। এমনিতেই তো দেশটি ভারতের মুঠোয় চলে গেছে। তখন চলে যাবে একেবারে পেটের ভেতর।

মুসা আল হাফিজ: আপনি তো এখন গৃহবন্দী। অবসর সময়টা কিভাবে কাটাচ্ছেন?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: আমাদের তো অবসর নেই। অনেকগুলো মাদ্রাসা চালাতে হয়। বড় কাটারায় বোখারী পড়ানো, লালবাগে বোখারী পড়ানো, সময় বের করে কুরআন তেলাওয়াত আর কিছু ইসলাহী কার্যক্রম। এসব নিয়ে থাকলেও রাজনীতিতে সময় দিচ্ছি যতটুকু সম্ভব। সরকার আমার হাত-পা বাঁধতে পারবে, কিন্তু জবান তো বন্ধ করতে পারবে না।

মুসা আল হাফিজ: ছাত্রজীবনের কোন স্মৃতি কি আপনার মনে পড়ে?

মুফতি ফজলুল হক আমিনী: স্মৃতি তো অনেক। আমি উস্তাদদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্য পেয়েছি। হাফেজী হুজুর রহ. তো আমাকে পুত্রসম স্নেহ করতেন। ছাত্রদেরকে তিনি বলতেন, তোমরা ফজলুল হকের মতো হও। তাকে দেখে শেখো।
তার মত মেহনত করো। আমি ছাত্র থাকাবস্থায় মেহনত করতে পারতাম। কিতাবের পোকা ছিলাম। রাস্তায় হেঁটে হেঁটেও কিতাব পড়তাম। একদিন রেল স্টেশনে রেলের অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষার সময়টাকে কাজে লাগাবার জন্য কিতাব মুতালা’য়া শুরু করে দিলাম আর এই ফাঁকে রেল কখন যে এসে স্টেশন থেকে চলে গেছে তা বুঝতেও পারিনি। এমন ঘটনা আমার ছাত্র জীবনে নানা ভাবে ঘটেছে।