রাজ্যসভায়ও পাশ হল বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ১১ ২০১৯, ২২:০২

তুমুল বিতর্কের মধ্যে ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভার পরে  রাজ্যসভায়ও পাশ হয়েছে বহুল আলোচিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’। এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল গত সোমবার লোকসভায় পাশ হয়েছিল।

সোমবার লোকসভায় পাশ হওয়ার পর আজ বুধবারই রাজ্যসভায় পেশ হয় এই বিল। তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় শাসক ও বিরোধী পক্ষের সাংসদের মধ্যে। পরে ১২৫-১০৫ ভোটের ব্যবধানে বিতর্কিত বিলটি রাজ্যসভায়ও পাশ হয়।

এ দিন রাজ্যসভায় আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ দাবি করেন, ‘‘লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয় প্রতারণা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে সেই সব শরণার্থীদের অধিকার দেওয়া হবে।’’

এ দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বক্তৃতায়  অমিত শাহ বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে এই বিল আনা হয়নি। আগের সরকার বিষয়টির যথাযথ মোকাবিলা করতে পারেনি।

বিরোধী কংগ্রেসের পক্ষে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘এই বিল ‘ভারতের আত্মার উপরে আঘাত।’’

বিল নিয়ে বিজেপি কেন তাড়াহুড়ো করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশ ভাগের জন্য কংগ্রেস দায়ী বলে  অমিত শাহ লোকসভায় যে অভিযোগ করেছিলেন তারও জবাব দিয়েছেন আনন্দ শর্মা। দেশ ভাগ নিয়ে সরাসরি হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগকে দায়ী করেছেন তিনি। অমিত শাহের কথার সূত্র ধরেই বিজেপিকে তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেসও।

নোটবন্দির কথা তুলে দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আপনারা আশ্বাস দিলেও, সিএবি নিয়ে আশঙ্কার কারণ আছে। কারণ, নোটবন্দির সময়েও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ফল কী হয়েছে তা সবাই জানেন।’’

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে বিলে। নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নতুন বিলে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি।

বিরোধীদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে বেছে অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে তারা।

বিতর্কিত এই বিলটি নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের ভেতরে যেমন হইচই তহয়েছে, তেমনই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বাইরেও। এ দিন বিল পেশের আগে দিল্লিতে বিক্ষোভ করেছে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর এমপি বদরুদ্দিন আজমল। সিএবি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অংশের মানুষ। দিন বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হয় ত্রিপুরাতেও।

উল্লেখ্য, ৪ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত বিলটি ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। ১১ ডিসেম্বর সরকার এই বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করতে পারে। বিলটি পাস হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।