বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের রায় মুসলিম উম্মাহ মেনে নিতে পারে না : মাওলানা নিজামপুরী
একুশে জার্নাল ডটকম
নভেম্বর ১১ ২০১৯, ১৬:৩৫
ভারতের বিতর্কিত বাবরি মসজিদ বা অযোধ্যা মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একতরফা রায় পক্ষপাতিত্ব ও উস্কানীমূলক। এই রায়ের মাধ্যমে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বর্তমান যুগের ফেরাউন জালেম মোদী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই রায় মুসলিম উম্মাহ কখনো মেনে নিবে না বলে মন্তব্য করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ও হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাও. আশরাফ আলী নিজামপুরী।
আজ ১১ ই নভেম্বর সোমবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত বার্তায় মাও. নিজামপুরী বলেন, গায়ের জোরে মুসলমানদের ৫০০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার সাথে সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়ার মাধ্যমে মোদি সরকার মুসলমানদের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিল।
মাও. নিজামপুরী আরো বলেন, ১৫২৮ সালে বর্তমান ফৈজাবাদ জেলার অন্তর্গত অযোধ্যায়প্রথম মুঘল সম্রাট জহির উদ্দিন শাহ্ বাবরের শাসনামলে বাবরের সেনাপতি মীর বাকি কর্তৃক নির্মিত বাবরী মসজিদ ৫০০’শ বছরেরও পুরনো একটি মসজিদ যা মুসলমানদের ঐতিহ্য।
কিন্তু ৪৬৪ বছর পরে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অযোধ্যাকে রামের জন্মভূমি দাবী করে ১৯৯২ সালে মুসলিম স্থাপনের অনন্য নিদর্শন ও ঐতিহ্য বাবরী মসজিদকে শহীদ করা হয়েছে।
মাও. নিজামপুরী বলেন, শুধু কিছু মানুষের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আদালত এমন অযৌক্তিক রায় দিতে পারে না। কারণ, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি তা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি।
ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই) জানিয়েছিল, ওই মসজিদের তলায় একটি প্রাচীনতর কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেই প্রাচীনতর কাঠামো যে মন্দিরই ছিল, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট নিজেও মেনে নিয়েছে যে, পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের রিপোর্টে কোনও ভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না যে, একটা মন্দিরকে ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এমনো তো হতে পারে সেই পুরনো কাঠামোটিও মসজিদ ছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদগণের বহুবার অনুসন্ধানের পরও সেখানে কোন মন্দিরের অস্তি্ত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরও শুধু ধারণার উপর বিশ্বাস করে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপনের অযৌক্তিক রায় দেয়া হয়েছে। আমাদের আশংকা এই রায়ের কারণে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চরম অবনতি হতে পারে।
মাও. আশরাফ আলী নিজামপুরী আরো বলেন,
মসজিদ আল্লাহ তা’আলার ঘর,পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা।মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের পবিত্র স্থান। যেখানে একবার মসজিদ নির্মাণ করা হয় তা সর্বাবস্থায় সর্বসময়ের জন্য মসজিদের হুকুমেই থেকে যায়। আল্লাহর রাসূল সা.মসজিদ ও তার জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৫৫)
এতএব বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণ করা হলে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে। এ রায় মসজিদের সাথে অবমাননার শামিল। যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার নামান্তর ।
বিতর্কিত ও পক্ষপাতিত্ব এই রায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করে মাও.আশরাফ আলী নিজামপুরী অবিলম্বে এই রায় বাতিলের জোর দাবি জানান।