করোনা প্রতিরোধে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং থানা পুলিশের তৎপরতা
একুশে জার্নাল ডটকম
মার্চ ২১ ২০২০, ১৫:০৪

এহসান বিন মুজাহির
সব ধরণের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শ্রীমঙ্গলে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ পর্যটন গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক বিজ্ঞপিতে এসব নির্দেশ জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়া ‘করোনাভাইরাস’ এর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে। এই লক্ষ্যে আমাদের দেশে ‘করোনা ভাইরাস’ এর বিস্তার রোধে সতর্কতা হিসেবে এ উপজেলায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ওরস, ওয়াজ-মাহফিল, কীর্তন, মেলাসহ সকল প্রকার অনুষ্ঠানাদি এবং যে কোনো গণজমায়েত সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সে সাথে সকল কমিউনিটি সেন্টারও বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো। এরই সাথে বিদেশফেরত ব্যক্তিদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবেও আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। অন্যদিকে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ রাখার পাশাপাশি সকল ধরনের কোচিং সেন্টার ও বাসা বাড়িতে ব্যাচ করে পড়ানোও বন্ধ করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল একটি পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকগনের সমাগম ঘটে। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত উপজেলার সকল হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউজে পর্যটকদের বুকিং না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হল।
ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা :
সরকারি আদেশ অমান্য করে সিনেমা হল চালু রাখায় শ্রীমঙ্গলে ২টি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষকে এবং কোচিং সেন্টার চালু রাখায় শ্রীমঙ্গলের ২টি কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষকে গত বুধবার মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম এবং ‘কোয়ারেন্টাইন’ না মানায় বৃহস্পতিবার দুই প্রবাসীকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। প্রবাসী দুই’জনই বাইরাইন থেকে দেশে এসেছেন। উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ না মেনে তারা বাসার বাইরে বের হওয়ায় তাদেকে এ জরিমানা করা হয়েছে।
থানা পুলিশের মাইকিং :
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতংকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সংবাদ শুনে উচ্চ মূল্য দ্রব্য সামগ্রি বিক্রি না করার জন্য এবং প্রয়োজনের অধীক পণ্য না কিনার জন্য শহরে মইকিং বের করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, একদিকে মানুষ মারা যাবে, আর এই সুযোগে অন্যদিকে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে পণ্যর দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করবে এটা হতে পারে না।
বাজার তদারকিতে পুলিশের টিম :
এদিকে শ্রীমঙ্গলে হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেলে পুলিশের নজরদারিতে খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার ২০ মার্চ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম শহরের সেন্ট্রাল রোডের পাইকারি ও নতুন বাজারের খুচরা বাজারে মনিটরিংয়ে নামে।এ সময় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান হ্যান্ডমাইক হাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি না করতে ব্যবসায়ীদের আহবান জানান।
এরপর থেকেদেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০থেকে ৬৫ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, মিয়ানমারে পেঁয়াজ ৩৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। যা গতকাল বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল দেশি পেঁয়াজ ৭০থেকে ৮০ টাকা, পাকিস্তাানি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। তবে রসুনের দাম অপরিবর্ততিত রয়েছে। দেশি রসুন প্রতিকেজি ১২০ টাকা, চায়না রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা প্রতিকেজি ১১০ টাকা থেকে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। বাজারেমোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫থেকে ৩৮ টাকায়। বৃহস্পতিবার ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়াপেঁয়াজ একদিনে কমে ৪০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শ্রীমঙ্গলে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৮৫ জন :
শ্রীমঙ্গলে হোম কোয়ারেন্টাইনের শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ৮৫ জন ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা. সাদ আহমেদ দৈনিক খবরপত্রকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি রুমে ৮টি বেড ‘আইসোলেশন’ এর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আক্রান্ত রোগিকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার নার্সদের সমন্নয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যবহারের জন্য সকল সরঞ্জামাদি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে এদের শরীর পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।