ভাষা আন্দোলন ও আজকের প্রেক্ষিত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২০, ১৪:৩৮

• এহসান বিন মুজাহির •

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এ সবুজের গালিচা রক্তে রঙিন হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষাকে বাংলা করার জন্য দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াই করতে হয়েছে বাংলার দামাল ছেলেদের। রক্তঝরা একুশ বাঙালি জাতির গৌরবদীপ্ত একটি দিন। দীর্ঘদিন লড়াইয়ের ফল আজকের ভাষা বাংলা। আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা আমাদের অহংকার। বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ ও বুকের রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিল অকাতরে। বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি মায়ের সন্তানরা বুকের রক্তের বিনিময়ে লাল হরফে সর্বপ্রথম লিখেছিলেন বাংলা বর্ণমালা। ভাষা শহীদদের প্রাণের মূল্য আমরা কতটুকু শোধ করতে পেরেছি?

একুশে ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশের জন্য গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন এ দেশের দামাল তরুণ ছেলেরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সেøাগানে রাজপথে লড়েছিলেন। মাতৃভাষাকে বাংলাকরণের দাবিতে আবদুস সালাম, রফিক, বরকত, আবদুল জব্বার, শফিউর রহমান, রফিক উদ্দিনসহ আরও নাম না জানা অনেকেই তাজা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য। বহু রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বদৌলতে আমরা বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি অর্জন করি। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন তথা ২১ ফেব্রæয়ারি বাংলা ভাষার জন্য রক্তঝরা জ্বলন্ত এক সাক্ষী। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রæয়ারিকে মনোনীত করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৮৮ দেশে প্রতি বছর গৌরব ও মর্যাদার সঙ্গে ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

শিক্ষা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বাংলাদেশেই বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকে দ্বিগুণ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কার্যালয়-বিচারালয়, ব্যাংক-বিমা সর্বত্রই ইংরেজির ছড়াছড়ি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলা ভাষা আজ দেশের উচ্চশিক্ষিতদের ভাষা? বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বক্তব্যের দ্বারা মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝানোর প্রবণতাও খুব লক্ষণীয়! কিন্তু কাজকর্মে বাংলা ভাষাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ছোট শিশুদেরও বাংলা ভাষা না শিখিয়ে শুরুতেই ইংরেজি ভাষা (মাম্মি, ডেড, আঙ্কেল, আন্টি) ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি নিজেদের সার্থক হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। অথচ কত বাঙালি বাংলার জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। অনেকেই মাতৃভাষা বাংলার জন্য শহীদ হয়েছেন।

শুধু ভাষা দিবস এলেই আমরা ভাষার গান, ভাষার পক্ষে আলোচনা, শহীদ মিনারে নীরবতা, পুষ্পস্তবকসহ রকমারি আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি দিবসটিকে। আফসোস! ভাষার মাসেও কেঁদে ওঠে ভাষা শহীদের আত্মা! শুধু একুশের আনুষ্ঠানিকতা সেরেই কি আমাদের দায়িত্ব শেষ? তা না হলে বছরজুড়ে বাংলা ভাষার প্রতি এত অবহেলা কেন? অফিস-আদালত থেকে শুরু করে মহান জাতীয় সংসদে পর্যন্ত ইংরেজির ছড়াছড়ি! এসব কি বাংলা ভাষার প্রতি চরম অবজ্ঞা নয়? আসুন আমরা নবচেতনায় আত্মনিয়োগ করি। সর্বক্ষেত্রে বাংলাকে মূল্যায়ন করি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসি।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার