একুশে জার্নাল বিশেষ আয়োজন: ছড়া কবিতার আসর
একুশে জার্নাল
ডিসেম্বর ১৬ ২০১৯, ১০:১১

মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উপলক্ষে একুশে জার্নাল ডটকম এর বিশেষ আয়োজন
ছ ড়া ক বি তা র আ স র
জগলুল হায়দার এর
বারোভাজা
আজান ধ্বনির আকুলতায়
দৃষ্টি তোমায় পান করে যায়,
ফজর-এশায় প্রেমের নেশায়
কণ্ঠ তোমার গান করে যায়।
ওগো প্রাণের নবি
জিসান মেহবুব
পুষে তোমার ভালোবাসা
দরুদ পাঠাই রোজ,
ওগো প্রাণের নবি আমার
দিলে পথের খোঁজ।
নামটা তোমার মুখে নিলে
প্রশান্তি পায় বুক,
তোমার রওজা জিয়ারতে
মন বড় উৎসুক।
তোমার মুখের বাণী আমার
জীবন চলার ডোজ।।
মানবতার রাখলে নজির
হয় না যে তার তুল,
তুমি এসেই উপড়ে দিলে
অসংগতির মূল।
সাম্যনীতির প্রচার করে
লাগিয়ে দিলে তাক,
বদলে গেল রাষ্ট্র-সমাজ
শুনে তোমার ডাক।
সত্য দীনে ভিড়ল মানুষ
ছেড়ে হারাম ভোজ।
স্বাধীনতা তুমি
মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া
স্বাধীনতা তুমি
সীমান্তে কাঁটাতারে ফেলানির ঝুলন্ত লাশ ৷
স্বাধীনতা তুমি
বাসন্তির ছেঁড়া জালে দেহাবরণের ব্যর্থ প্রয়াস ৷
স্বাধীনতা তুমি
আঁধার রাতে ক্রসফায়ারে বুলেটবিদ্ধ লাশ ৷
স্বাধীনতা তুমি
অবলা নারীর গণধর্ষণের মহা উল্লাস৷
স্বাধীনতা তুমি
স্বামীহারা বিধবা নারীর করুন আর্তনাদ ৷
স্বাধীনতা তুমি
বাবা-মা হারা এতিম শিশুর বুকফাটা বিলাপ ৷
স্বাধীনতা তুমি
সন্তানহারা পিতামাতার নীরব অশ্রু বিসর্জন ৷
স্বাধীনতা তুমি
ক্ষমতার তরে দাদার চরণতলে মস্তকদান ৷
স্বাধীনতা তুমি
বড়ই পীড়াদায়ক যন্ত্রণাদায়ক তুমি ভয়ংকর ৷
স্বাধীনতা তুমি
দিয়েছ লাল-সবুজের পতাকা হারিয়েছ মানবতা ৷
স্বাধীনতা তুমি
পায়ে বেড়ি, হাতে কড়া, মুখে জিপার ৷
স্বাধীনতা তুমি
দিয়েছ মানচিত্র, বদলিয়েছ প্রভু, হয়েছ কৃতদাস ৷
স্বাধীনতা তুমি
স্বাধীন হয়েও সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাস ৷
ছেলেবেলা
মীম হুমায়ুন কবীর
হাতছানি দেয় ছেলেবেলা
ঝিনাই নদীর বাঁকে
আমি যখন একলা দাঁড়াই
ব্যস্ত সময় ফাঁকে।
কিংবা যখন হেঁটে বেড়াই
সবুজ ভরা মাঠে
যে পথ দিয়ে হেঁটে যেতাম
বিদ্যালয়ের পাঠে।
হিজল জারুল শিমুল কদম
ফুলের নেশায় কত
ছুটতো আমার এই মনটা
ফুলপাখিদের মত।
এমন আরও কততো স্মৃতি
ডাক দিয়ে যায় রোজ
ফেলে আসা সে সব স্মৃতি
কেউ কি রাখি খোঁজ।
শরতের রূপ
মঈন মুসতাকিম
শরতের আকাশটা নীল
ডানা মেলে ওড়ে গাঙচিল
ছুটে চলে সাদা সাদা মেঘ
কভু ধীরে কভু দ্রুত বেগ।
বিলে-ঝিলে পানি থইথই
মৎসরা করে হইচই
শাপলায় ভরা বিল-খাল
জেলে মাছ ধরে ফেলে জাল।
শিশিরের ছোঁয়া পেয়ে ঠিক
ঘাসগুলো করে চিকচিক
ফুলে ফুলে সাদা কাশবন
রূপ দেখে ভরে ওঠে মন।
স্বাধীনতা তুমি
আব্দুল খালেক পাঠান
স্বাধীনতা তুমি
২৫ শে মার্চের কালো রাত
স্বাধীনতা তুমি
বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
নজরুলের রণসঙ্গীত
স্বাধীনতা তুমি
রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সংগীত।
স্বাধীনতা তুমি
পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অবাধ জল
স্বাধীনতা তুমি
রাখালের উদাস বাঁশি।
স্বাধীনতা তুমি
পাখির মুক্ত কলরব
স্বাধীনতা তুমি
দু’লাখ মা-বোনের হারানো সম্ভ্রম।
স্বাধীনতা তুমি
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত
স্বাধীনতা তুমি
মায়ের হারানো নোলক।
স্বাধীনতা তুমি
বাঙালির লাল সবুজের পতাকা
স্বাধীনতা তুমি
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।
(কবি, গবেষক, অধ্যাপক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা)
কেমন আছে তারা
আহমাদ মুস্তাকীম
বিজয় ধ্বনি নিয়ে এলো বিজয়েরই মাস
হৃদয় মনে সবার এখন আনন্দ উল্লাস।
আড্ডা গানের অনুষ্ঠান আর কত্ত আয়োজন
লাল সবুজের কেতন নিয়ে ব্যস্ত সারাক্ষণ।
কিন্তু আদৌ নিই না খবর ঐ দুঃখিনী মার
যুদ্ধ শেষে যার খোকাটি ফিরেনি তো আর।
জীবন দিয়ে দেশটাকে আজ করলো স্বাধীন যারা
নিই না খবর তাদের স্বজন কেমন আছে তারা?
কেউ হারালো পা দুটো তার কেউ হারালো হাত
কেউ সয়েছে জুলুম শোষণ ভয়াল কালো রাত
যাদের ত্যাগে বুক ভরে আজ নিচ্ছি কোমল শ্বাস
ঘরের কোণে ধুঁকে ধুঁকে হচ্ছে তারা লাশ।
স্বাধীন দেশে বসত করেও পাই না স্বাধীনতা
হারিয়ে গেছে এদেশ থেকে শান্তি মানবতা।
খোসা
শামসুল ইসলাম দুলাল
ও ভাই তোমার স্বর্ণদামে
আমার একটি পেঁয়াজ আছে
লাগলে বোলো কাঁধে করে
বেচবো এনে তোমার কাছে।
একটা পুরো কিনতে যদি
বেগ পেতে হয় বলতে পারো
ফালি ফালি করে না হয়
বেচবো যাতে চলতে পারো।
সেটাও যদি না পারো তো
কানে কানে বলে যাও
লাগবে নাতো টাকা কড়ি
খোসা নিয়ে চলে যাও।
বিজয় দিনে
শরিফ আহমাদ
বাংলাদেশের হাজার ছেলে
এবং হাজার মেয়ে
সবাই সুযোগ পেয়ে
বাংলা তোমায় ভালোবাসি
উঠলো দারুণ গেয়ে ৷
দেশ পতাকা আগলে নিয়ে
যায় ছুটে আজ মাঠে
কেউ বসে না পাঠে
খুব আনন্দের মিছিল করে
সকলের দিন কাটে ৷
আকাশ খুশি বাতাস নাচে
দেখে পরিবেশটা
হোক কল্যাণের চেষ্টা
আজ বিজয়ের মহান দিনে
ভালো থাকুক দেশটা ৷
শুদ্ধ হলো দেশ
নাহিদ নজরুল
দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধ শেষে
শুদ্ধ হলো দেশ
লাল সবুজের পতাকা তাই
উড়ছে অনিঃশেষ।
যায়নি বৃথা রণাঙ্গনে
মুক্তিসেনার বল
পরিশেষে রক্তে ভেসে
আসলো বিজয় ফল।
আস্তে করে স্বৈরাচারির
ভেস্তে গেল জোর
আঁধার চিরে উঠলো হেসে
আলোকিত ভোর।
দুঃখকষ্ট সবই হলো
সূক্ষ্মভাবে নাশ
মা মাটি ফের করলো শুরু
সুখের বসবাস।
মানুষ চমৎকার
আবদুল্লাহ আল খায়ের
দেশটা এখন বদলে গেছে
বিষাক্ত আজ হাওয়া
ভালো মানুষ যায় না খুঁজে
কোথাও এখন পাওয়া!
মানুষ নামের পশু ভরা
অত্যাধুনিক ধরায়
উপর দিয়ে দেখায় দয়া
ভেতরে খুন ঝরায়।
ধোঁকাকে আজ বুদ্ধি মানে
শিক্ষিত শয়তান
আস্থা ভেঙে করছে চুরি
পায় না অপমান।
লাখ মানুষের মাঝেও একটি
মানুষ মেলা ভার
চলো সবাই হয়ে ওঠি
মানুষ চমৎকার।
বিজয় পেয়ে
ফয়েজ হাবীব
সবুজ বুকে লাল ছিলো না
বিজয় আসার আগে
রক্ত ঘামের বিনিময়ে
বীর বাঙালি জাগে।
কোলটা মায়ের শুন্য ছিলো
সুখ ছিলো না মনে
মায়ের মুখে সুখের হাসি
বিজয় নামের ধনে।
ছেলের কাছে বাবার আদর
কঠিন বিষয় ছিলো
বিজয় পেয়ে বুকভরা প্রেম
বাবা তাকে দিলো ।
বিচার যখন ন্যায় ছিলো না
জোর জুলুমের দেশে
বাঙালিরা বিজয় পেয়ে
ওঠলো তখন হেসে ।
মুক্তির শ্লোগান
খোরশেদ আলম বিপ্লব
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার গান
সেই বাংলা রক্ষা করতে
মা দিয়েছে প্রাণ।
স্বাধীন পেতে বঙ্গভূমি
গাই মুক্তির স্লোগান
তর্জনী আর দ্বীপ্ত ভাষণে
তুমি শেখ মুজিবুর রহমান।
ভগ্নি ভ্রাতা জন্মদাতা
কালো আঁধারে গেছে
সব হারিয়ে আমি খোকা
কাঁদছি একা শেষে।
ঝান্ডা হাতে রাতবিরাতে
লড়ছো প্রাণ পণে
তুমি বিনা পূর্বাকাশে
জয় হতো না কোনক্রমে।
লাল-সবুজের মাতৃক্রোড়ে
তুমি বাংলার শ্রেষ্ঠনেতা
যুগে যুগে রবে সেথা
তুমিই মহান জাতির পিতা।।
লেখক ও মানবাধিকার কর্মী, ঢাকা।
তাকে খুঁজি
ইলিয়াস সারোয়ার
পাকা বাড়িগুলো দেখো ছুঁয়েছে নীলিমা
বায়ু পানি ভাঙে কুঁড়ে, দেখো দুখনামা?
চারিদিকে ঘুরে গাড়ি অসীম সীমানা
নিরুপায়ে কে দেখাবে দুনিয়া অজানা?
বিলাসী বিমানে করে হানিমুনে গিয়ে
নাচে গানে মেতে থাকে ময়না ও টিয়ে।
বলবান বিবাদেতে খাটিয়ে প্রভাব
কমজোরে মারছে সে, এ কোন স্বভাব!
ভালোবেসে কে বা কারা মোদেরে তোষিবে
ত্যাগী কে আছে ভুখারে খাদ্য যে দিবে?
জুলুমে প্রজাদেরে যে মারবে না দুখে
সচেতনে সকলেরে রাখবে যে সুখে?
যে কুনীতি দূরে ঠেলে আনবে সুনীতি
ধীরে ধীরে বাড়াবে যে দেশের সুখ্যাতি?
লেখকের প্রথম সনেট
রচনা তাং: ০৭-১২-২০০৮
স্বাধীনতা মানে
আলেমা বাশীরা জান্নাত
স্বাধীনতা মানে মুক্ত হওয়া
সতত পাওয়া মুক্ত হাওয়া।
স্বাধীনতা মানে নিরাপত্তা
কেউ না হওয়া লাপাত্তা।
স্বাধীনতা মানে নিজ অধিকার
নিশ্চিত করা ন্যায়-সুবিচার।
স্বাধীনতা পাওয়া সম্মান আপন
নয় লাঞ্ছনা খুন-ধর্ষণ।
স্বাধীনতা নয় চুরি-ডাকাতি
লুটপাট আর ঘুষ দুর্নীতি।
স্বাধীনতা নয় ক্ষমতা দখল
নয় নিপীড়ন, পড়ানো শিকল।
স্বাধীনতা নয় অরাজকতা
অপসংস্কৃতি দ্বীন-বিরোধিতা।
শিক্ষিকা, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ
কেঁদো না মা
উম্মে হাবিবা সাদিয়া
যুগে যুগে এই বাঙালি
হার মানেনি হার
২৬ শে মার্চ গর্ব আমার
আমার অহংকার।
কেঁদো না মা আমরা আছি
ছড়িয়ে দিগন্তর
আমরা তোমার রক্তে রাঙা
১৬ ই ডিসেম্বর।
বুলেট বোমার সামনে না হয়
আবার দিব বুক
সব হারিয়ে আনতে পারি
তোমার হাসি মুখ।
মেশকাত, মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা, গলগন্ডা, ময়মনসিংহ।
সোনার বাংলা
ফাতেমা শারমিন
আমার প্রিয় জন্মভূমি
বীর তিতুর এই দেশ
ফুল ফসলে ভরা দেশের
রূপের যে নেই শেষ।
নীলিমাতে মিলেমিশে
সবুজিমা বেশ
১৬ কোটি জনগণের
সোনার বাংলাদেশ।
তাকমিল, আল হুমায়রা রা. আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।
হতাম যদি
তাহমিনা খাতুন
হতাম যদি শাপলা আমি
থাকতাম নদীতে
নদীর ঢেউয়ে দুলতাম আমি
পরম আনন্দে।
হতাম যদি পায়রা আমি
উড়তাম আকাশে
বাকুম বাকুম ডাকতাম আমি
সকাল বিকালে।
হতাম যদি নদী আমি
বইতাম সাগরে
একূল-ওকূল দেখতাম আমি
মনেরও সুখে।
হতাম যদি তারা আমি
থাকতাম আকাশে
মিটিমিটি জ্বলতাম আমি
আঁধার ঘুচাতে।
হতাম যদি কবি আমি
লিখতাম খাতাতে
আমার লেখা ছড়িয়ে যেত
সবার হাতেতে।
শিক্ষার্থী, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ
কেউ যাবে না সাথে
মাসউদুর রহমান
আমার সময় ফুরিয়ে যাবে
হয়ে যাবে শেষ
আমার মনের আশাগুলো
রয়েই যাবে বেশ।
আমার আমার সব কিছুতে
নেই তো কারো ছায়া
কেমন করে ছাড়বো আমি
এই দুনিয়ার মায়া।
সবকিছুতে করলাম আমি
শুধু অহংকারই
চোখ বুজিলেই ছাড়তে হবে
আমার ঘর ও বাড়ি।
কত কিছু করলাম আমি
এই দুনিয়ার লাগি
মন তবুও বুঝলো না রে
আমি নই আমারই।
মরার পরে কেউ যাবে না
আমারই সাথে
আমলনামা থাকলে ভালো
যাবো জান্নাতে।
শিক্ষার্থী, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ
এলেম
শাকিব আহমদ মুবীন
এলেম শব্দ ছোট্ট অতি
কাজে ছোট্ট নয়
দুনিয়া ও আখেরাতে
সবখানেতে রয়।
এলেম শিখো কদর করো
আঁকড়ে ধরো দ্বীন
এটিই তোমার সাথী, বাকি
সব হবে বিলীন।
কোরআন হাদিস শিখে তুমি
যেই খানেতেই যাও
তোমার কোন ভয় রবে না
বাইবে সুখের নাও।
শিক্ষার্থী, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ
জন্মভূমি
হাফেজ জহিরুল ইসলাম
জন্মভূমি মাগো তোমায়
কত ভালবাসি
জানে বিশ্ববাসী।
তোমার প্রেমে একাত্তরে
জীবন মায়া ফেলে
রক্ত তাজা ঢেলে
বিজয় ছিনিয়েছি।
স্বাধীনতা আনতে মায়ের
লক্ষ মায়ের
কোল হয়েছে খালি
সেই মা আজও পথ চেয়ে রয়
দেখে সে চাঁদ ফালি।
শিক্ষার্থী, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ
ঘুমিয়ে কেন থাকো
মনযুরুল হক
রোজ ভোরে আজান শুনে
ঘুমিয়ে কেন থাকো
বাঁচার চেয়ে মরণটাকে
বেশি মনে রাখো।
পরকালের জন্য যদি
কিছু পেতে চাও
এখনো তো সময় আছে
নামাজ পড়তে যাও!
শিক্ষার্থী, মারকাযুল খিদমাহ আল ইসলামিয়্যাহ