৫ দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে হেফাজত নেতৃবৃন্দের বৈঠক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ২৯ ২০২২, ০০:৩৫

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গবার (২৮ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ঘন্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

হেফাজতের নায়েবে আমীর ও হাটহাজারী জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ও হেফাজত মহাসচিব মাওলানা শায়খ সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, নায়েবে আমীর মাওলানা ফুরকানউল্লাহ্‌ খলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী ও সেক্রেটারি মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আযহারী। এ সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সহ মন্ত্রণালয়ের অনেক দায়িত্বশীল উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজতের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে—

১. আগামী ঈদুল আযহার আগে হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আটককৃত আলেম-উলামা ও হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। এসময় বন্দি আলেমদের অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হুইলচেয়ারে আদালতে আসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আলেম-উলামাদের অনেকে গ্রেপ্তার থাকার কারণে তাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের দুরাবস্থার বিষয়টিও মন্ত্রীকে জানানো হয়।

২. গত কিছুদিন পূর্বে কথিত গণকমিশন নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠন দেশের ১১৬ আলেম ও ১০০০ হাজার মাদরাসার নামের লিস্ট তৈরি করেছে। তারা এটির নাম দিয়েছে ‘শ্বেতপত্র’। ইতোমধ্যে তারা এই শ্বেতপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনেও জমা দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই এটি দেশের আলেম-ওলামা ও মসজিদ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা কথিত শ্বেতপত্রে দেশের প্রায় সকল মাদরাসাকে জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত করেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে কথিত এই শ্বেতপত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এবং গণকমিশন নামের কথতি এই সংগঠনের লোকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার চক্রান্ত্র করছে।

৩. শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সময় থেকে বারবার বলা হয়েছে, হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত ২০১৩ ও ২০১৬ সালের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে তার একটিও প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং গত বছর যে সকল আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের প্রায় সকলকেই ২০১৩ ও ২০১৬ সালের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। উপরন্ত ২০২১ সালের নতুন আরো অনেক মামলা দেওয়া হয়েছে। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করুন।

৫. সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতা মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়ীশা রাঃ সম্পর্কে চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। এই ঘটনায় পুরো মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের নবি প্রেমীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমরা আপনার মাধ্যমে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, যেন এই ঘটনায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়।

৬. আমরা জানতে পেরেছি শিক্ষা আইন-২০২২ -এর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এই শিক্ষা আইনে যেহেতু কওমী মাদরাসা সহ সকল ধরনের শিক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তাই আমাদের দাবি হচ্ছে, খসড়া কমিটিতে কওমী মাদরাসার ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধিত্ব যেন থাকে।

সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনাদের কয়েকজন নেতা কারাগারে অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে আমি বিষয়টিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। গণকমিশনের শ্বেতপত্রের কোন কার্যকারিতা নেই এবং এটা আর অগ্রসর না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই নেতা কর্তৃক মানবতার মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে কটূক্তির বিষয়ে আপনারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি। ঐ সময়টায় আমি অসুস্থ ছিলাম। আপনাদের দাবি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছাবো।

শিক্ষা আইন-২০২২ এর খসড়া কমিটিতে আলেমদের অন্তর্ভুক্তির জন্য আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন।